‘চা-বাগানকে ভালোবাসি বলেই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করি’

বুধবারও চা-শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা-শ্রমিকরা। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, আমাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করবেন না। আমরা ইচ্ছে করলে চা বাগান ধ্বংস করতে পারবো, কিন্তু সৃষ্টি করতে পারবো না। বাগানকে ভালবাসি বলেই রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করি।

আজ বুধবার দেশের ৯টি চা-বাগানে কাজ বন্ধ করে মহাসড়ক অবরোধ রেখে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। সাতগাঁও, দিনারপুর, মির্জাপুর, বৈলাছড়া, বৌলাশী, ক্লোনেল, সাইফ, ইছামতি, মাকড়িছড়াসহ বিভিন্ন চা–বাগানের হাজারের বেশি শ্রমিক সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে।

অন্যদিকে, আজ শ্রীমঙ্গলের ৩৯টি চা–বাগানে কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। সকালে জেরিন চা–বাগানে কাজ শুরু হলেও পরে তারা কাজ বন্ধ করে ফিরে যান বলে জানান সাতগাঁও চা–বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি কাজল কালিন্দী।

দুপুর ১টার দিকে সাতগাঁও চা–বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, চা-শ্রমিকেরা বাগানের নাটমন্দিরে বসে বিক্ষোভ করছেন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।

৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা-শ্রমিকরা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

চা-শ্রমিক নেতা কেশব বাড়ই বলেন, 'যতক্ষণ পর্যন্ত ৩০০ টাকা মজুরি দাবি আদায় হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কোনো হুমকি, ধমকি বা যতই ষড়যন্ত্র করা হোক আমরা আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যাবো না।'

বাংলাদেশ চা-কন্যা নারী সংঘটনের সভাপতি খাইরুন আক্তার বলেন, 'লস্করপুর ভ্যালি ২৩টি বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি ও ছাত্র-যুবকদের নিয়ে আমাদের সভা হয়েছে। ওই সভায় যতদিন ৩০০ টাকা মজুরি আদায় না হয়, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।'

কালীঘাট চা বানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অবান তাতি বলেন, 'শুধু কালীঘাট চা বাগান নয়, বালিশিরা ভ্যালির সবগুলো চা বাগানে কাজ বন্ধ আছে।'

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং পরে ১৩ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছেন চা–শ্রমিকেরা।

আজ ছিল কর্মবিরতির ১৬ তম দিন। ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসক ৩ বার তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা অনড়। সাধারণত শ্রমিক ও পঞ্চায়েত নেতারা বলছেন, প্রশাসন যা-ই বলুক না কেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করি না। তিনি যা বলবেন আমরা তাই শুনবো। চা শ্রমিকরা তাদের দাবি পূরণে শক্ত অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে বলেন, কারোর প্রতি আমাদের বিশ্বাস নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে 'মা' বলে ডাকি। তিনি একটা কথা বলুক আমরা কাজে ফিরে যাব।

চা-শ্রমিক নেতাদের দাবি, গত ১৯ মাস ধরে চা-মালিক পক্ষ আমাদের বেতন বৃদ্ধিতে টালবাহানা করেছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্য বাজারে আমরা না খেয়ে দিন পার করছি। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান ও পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী শ্রমিকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'আশা করছি দুর্গাপূজার আগেই বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। বাগান মালিকরা শ্রমিকদের যে বেতন-ভাতাদি দিচ্ছেন তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বেশ অসামঞ্জস্য রয়েছে। আমরা তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। যা প্রধানমন্ত্রী আগে জানতেন না। তাদের আন্দোলন যুক্তি সঙ্গত। আমরা তাদের পাশে আছি। প্রশাসন কোনো পক্ষপাত করছে না।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago