বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা বাড়ছে, দেখভালে কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ

স্টার গ্রাফিক্স

দেশের মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগ এখনো তরুণ। কিন্তু ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ যথাযথ যত্ন নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে সংকট তৈরি হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

'জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২'–এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯ জন। তারা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

সর্বশেষ ২ জনশুমারির মধ্যে গত ১১ বছরে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা দেশের ধারাবাহিক জনশুমারির ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রাক্কলন বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের সংখ্যা হবে ৩ দশমিক ৬ কোটি এবং মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ।

এটি বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স হবে ৬০ বছর বা তার বেশি।

জনতাত্ত্বিক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংখ্যায় বাড়তে থাকা এই প্রবীণ নাগরিকদের যত্ন ও সহায়তার জন্য দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং বিদ্যমান সুবিধাগুলো একেবারেই যথেষ্ট না।

যোগাযোগ করা হলে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, 'প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। তাদের বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। দেশের সব এতিমখানার ১০ শতাংশ সিট তাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু মানুষ যদি সেখানে না যায়, তাহলে আমরা কিছুই করতে পারব না।'

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের সমাজ প্রবীণ জনগোষ্ঠীর দেখভালের জন্য তৈরি না। বিষয়টি যেমন সরকারের উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে ভালোভাবে সংহত নয়, তেমন এটি আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশও নয়।'

তার বক্তব্য, বিষয়টিকে আরও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, 'উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দেশে জন্মহার কমছে। এ অবস্থায় নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? আমরা কি আমাদের শহরগুলোতে প্রবীণদের জন্য ‍সুযোগ-সুবিধার বিকাশ ঘটিয়েছি?'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হানের মতে, 'এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। প্রবীণদের জন্য হোম-কেয়ার ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা দুটোই অপর্যাপ্ত। আমাদের ভালো বৃদ্ধাশ্রমের ব্যবস্থাও নেই।'

তার ভাষ্য, স্বাস্থ্যসেবার জন্য নির্ধারিত ব্যয় বেড়েই চলেছে। এতে করে যাদের অল্প সঞ্চয় আছে কিংবা একেবারেই নেই— এমন প্রবীণ ব্যক্তিদের ওপর চাপ তৈরি হবে। তিনি বলেন, 'আমাদের কেয়ার ইকোনমিতে বিনিয়োগ করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষার জায়গাটিতেও প্রসার ঘটাতে হবে। অন্যথায় প্রবীণরা রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে উঠবে।'

হেলথ ইকোনমিক্স ইউনিটের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশিদের মোট চিকিৎসা খরচের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ নিজেদের পকেট থেকে পরিশোধ করতে হয়। এতে বলা হচ্ছে, রোগীরা তাদের স্বাস্থ্যব্যয়ের ৬৪ শতাংশ খরচ করে ওষুধের পেছনে। ২৩ শতাংশ ব্যয় হয় হাসপাতালের খরচ বাবদ। আর রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যয় হয় ৮ শতাংশ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা ১ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকার বয়স্ক ভাতার পাশাপাশি একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর মতো কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ এস এম আতিকুর রহমান বলছেন, 'সমস্যা সমাধানে সরকারকে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।'

জন এফ কেনেডির একটি উক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমরা জীবনে বছর যোগ করতে পারি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে জীবন যোগ করতে পারি না। এটি প্রবীণদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

এই অধ্যাপকের কাছ থেকে জানা যায়, দেশে ৮০ কিংবা তার বেশি বয়সীদের সংখ্যাও বাড়ছে। এই গ্রুপের সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছেন বয়স্ক নারীরা।

তিনি বলেন, 'এমন গুরুতর সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই। প্রবীণদের দীর্ঘমেয়াদি যত্নের জন্য কোনো পদক্ষেপও নেই।'

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka sends diplomatic note to Delhi to send back Hasina: foreign adviser

The Ministry of Foreign Affairs has sent a diplomatic note to the Indian government to send back ousted former prime minister Sheikh Hasina to Dhaka.

5h ago