সৌদি খেজুর চাষে সফল না হলেও ড্রাগনে হাসি

অনেকটা শখের বশেই ঢাকা থেকে কিছু দেশি জাতের বীজ সংগ্রহ করে শুরু করেন ড্রাগন ফলের চাষ। ফলন ভালো হচ্ছিল দেখে ২০১৭ সালে বাড়ির পাশে এক একর জমিতে ৪০০ গাছ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন ড্রাগন ফলের চাষ। এখন তিনি পটুয়াখালীর বালিয়াতলী ইউনিয়নের একজন আদর্শ কৃষক। সফল এ কৃষকের নাম মোস্তফা জামান (৪৫) ।
নিজ বাগানে কাজ করছেন মোস্তফা জামান। ছবি: স্টার

অনেকটা শখের বশেই ঢাকা থেকে কিছু দেশি জাতের বীজ সংগ্রহ করে শুরু করেন ড্রাগন ফলের চাষ। ফলন ভালো হচ্ছিল দেখে ২০১৭ সালে বাড়ির পাশে এক একর জমিতে ৪০০ গাছ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন ড্রাগন ফলের চাষ। এখন তিনি পটুয়াখালীর বালিয়াতলী ইউনিয়নের একজন আদর্শ কৃষক। সফল এ কৃষকের নাম মোস্তফা জামান (৪৫) ।

মোস্তফার জামানের বাগানে এখন ১০ ধরনের ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের পেলোরা, বারি সাদা, বারি লাল, বারি গোলাপি, বারি গোল্ড, ইসরায়েলি হলুদ, রেড ভিউ বেটসহ অন্তত ৮০০ ড্রাগন গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে নানান জাতের ফল।

ছবি: স্টার

লাল, সাদা, হলুদ ও গোলাপি রঙের সুস্বাদু এ ড্রাগন ফল তিনি বাগানে বসেই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এ ছাড়া ড্রাগন গাছের চারা ও কাটিং বিক্রি করেও ভালো আয় হয় তার। সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে তার আয় থাকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

মোস্তফা জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি কৃষি কাজেরে সঙ্গে জড়িত। ধানসহ নানা ধরনের ফসল আবাদের পাশাপাশি ব্যতিক্রমী কিছু করতে ভালো লাগে। আর এ শখ থেকেই তিনি ২০০৮ সালে সৌদি আরবের খেজুর গাছ লাগিয়েছিলেন। তবে, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সৌদি খেজুর চাষের উপযোগী না হওয়ায় কয়েক বছর পর সে গাছগুলো শুকিয়ে যায়। এতে হতাশ হয়ে পড়েন মোস্তফা।

ছবি: স্টার

তবে, দমে যাননি তিনি। ঢাকায় বসবাসরত ভগ্নিপতি সিদ্দিকুর রহমানের মাধ্যমে পরিচয় ঘটে খামার বাড়ির কর্মকর্তা ড. আব্দুর রহিমের সঙ্গে। তার পরামর্শে ২০১৭ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন মোস্তফা। পেয়েও যান সাফল্য।

মোস্তফা বলেন, 'বর্তমানে আমার বাগানে ৮ প্রজাতির ড্রাগন গাছে ফল ধরেছে। তবে, ভিয়েতনামের রেড ড্রাগন ও তাইওয়ানের রেড ড্রাগন গাছে এখনো ফল আসেনি। আগামী মাসের মধ্যে এই ২ প্রজাতির গাছেও ফল আসবে বলে আশা করছি। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বছরের ৮ মাস বাগানে ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। শীতকালে ফল ধরে না।'

ড্রাগন ফলের পাশাপাশি চারা ও কাটিংয়েরও বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি চারা তিনি ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা এবং প্রতিটি কাটিং ৮০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। বেশিরভাগ অর্ডার আসে অনলাইনে এবং তিনি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সেগুলো সরবরাহ করেন বলে জানান, মোস্তফা।

তার বাগানটি এক নজর দেখতে ভিড় করছেন বহু উৎসুক মানুষ। মোস্তফার সাফল্য দেখে আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের বেকার-যুবকরাও ঝুঁকছেন ড্রাগন ফল চাষে। ইতোমধ্যে কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টি ছোট বড় ড্রাগন ফলের বাগান।

ধানখালী ইউনিয়নের কৃষক সোহেল ঘরামী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোস্তফা জামানের ড্রাগন বাগানে ফলন বেশ ভালো হয়েছে। সম্প্রতি তার বাগানটি ঘুরে দেখে তার কাছ থেকে কিছু কাটিং সংগ্রহ করে ছোট পরিসরে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছি।'

নীলগঞ্জ গ্রামের আরেক কৃষক সিদ্দিক গাজী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মোস্তফার বাগানটি দেখে তিনি নিজেও একটি ড্রাগন বাগান করার পরিকল্পনা করেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোস্তফা জামান একজন সফল ড্রাগন চাষি। তার সাফল্য দেখে ইতোমধ্যে অনেক যুবক ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়েছে। আমরা অনেক যুবককে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আশা করছি বেকার যুবকরা ড্রাগন চাষে এগিয়ে আসবেন এবং এর মাধ্যমে উপজেলায় ড্রাগন ফল চাষের সম্প্রসারণ ঘটবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

6h ago