‘পেটে ক্ষুধা নিয়েই রাস্তায় নেমেছি’
হামরাতো পেটের ভুখলে বাইচতে পেটে ভুখ লিয়েই রাস্তায় নাইমেছি। হামরাতো ভিক নাই খুঁজছি হামরাতো কামের দামটা খুঁজছি। হামদের আন্দুলনটা হইলো যেন না খেয়ে না মরি। সংসার চালাব কেমনে?
কথাগুলো বলছিলেন দৈনিক মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া কর্মধার কালিটি চা-বাগানের ৫০ বছর বয়সী নারী শ্রমিক আম্পা গোয়ালা। তিনি বলেন, শেখের বেটি হামদের আইসে দেইখে যা হামরা কত কষ্টে আছি। বেশির ভাগ দিন ভুখে থাকি।
আন্দোলনে যুক্ত আরেক নারী চা-শ্রমিক অনিমা নাইডু বলেন, 'যদি ন্যায্য মজুরি ৩০০ টাকা বাস্তবায়ন হতো তাহলে আজকে আমরা এই রোদে পুড়ে রাস্তায় নামতাম না। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি।'
চা-শ্রমিক নেতা ও কর্মধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক স্বপন নাইডু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি একবার হলেও চা-শ্রমিকদের জীবনযাপন দেখে যান। তাহলে অবহেলিত এই শ্রমিকদের দুর্দশা বুঝতে পারবেন। চা-শ্রমিকেরা এখনো ভূমির অধিকার পায়নি। ১২০ টাকা মজুরি আর সপ্তাহের কিছু রেশন পেয়ে কাজ করতে হয়। অনেক শ্রমিক সকালে চায়ে লবণ মিশিয়ে খেয়ে কাজে বের হন। ঘরে খাবার থাকে না।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে দৈনিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। শোকের মাস বিষয়টি বিবেচনা করে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চা শ্রমিকরা রাজপথ অবরোধে যাবেন না। বাগানের ভেতর মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচি অব্যাহত আছে।
শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে গত ৯ আগস্ট থেকে ২ ঘণ্টা করে ধর্মঘট শুরু করেন চা-শ্রমিকরা।
এরপর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস ধর্মঘট শুরু হয়। ১৪ আগস্ট রোববার চা বাগানের সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ধর্মঘট স্থগিত ছিল। ১৬ আগস্ট থেকে আবার ধর্মঘট চলছে।
চা বাগানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিটিএ) এর সিলেট শাখা চেয়ারম্যান জিএম শিবলী বলেন, এখন চায়ের ভরা মৌসুম চলছে। এই সময়ে কাজ বন্ধ রেখে চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাদের আন্দোলন অযৌক্তিক। শ্রমিকরা দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে হঠাৎ কর্মবিরতি শুরু করেছেন যা শ্রম আইন পরিপন্থী।
Comments