লিজ নিয়ে সেতুর নিচে নদীর জমিতে তৈরি হচ্ছে আ. লীগের ভবন

নদীর ওপর তৈরি সেতুর ঠিক নিচেই নির্মাণ করা হচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভবন। ছবি: স্টার

সব ধনের নিয়ম উপেক্ষা করে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ছোট যমুনা নদীগর্ভে একটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর নিচে নির্মাণ করা হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বহুতল দলীয় কার্যালয়।

এই ভবন নির্মাণে একদিকে যেমন সেতুটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে, তেমনি নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত এক মাস আগে এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় বলেই দাবি স্থানীয় প্রশাসনের।

জানা যায়, জমির একটি জটিল অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা কৃষি জমি হিসেবে ইজারা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের জন্য ভবন নির্মাণ করছেন।

স্থানীয় অধিবাসী ও ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ছোট যমুনা নদীতে প্রায় ৩৮ শতক ভূমি রয়েছে, যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে না। ফুলবাড়ী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদীটি।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরএস ও বিএস ভূমি রেকর্ড অনুযায়ী, জমিটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয়। এটি 'ক' তফসিলি ভূমি বিভাগের অধীনে একটি জমি।

এর ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান।

তবে ভবনটি নির্মিত হলে ছোট যমুনা নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা।

ফুলবাড়ীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২০২০ সালে ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি হায়দার আলী শাহ এক খণ্ড জমি বরাদ্দের জন্য দলের পক্ষ থেকে স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন করেছিলেন। এই আবেদনের বিপরীতে গত বছর ভূমি অফিস বরাদ্দ দেয় ৬ শতাংশ জমি। ভূমি রেকর্ড বই অনুসারে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার গৌরীপুর মৌজার ১২০/৪৫৭ দাগে জমিটি অবস্থিত।

ইজারা দেওয়া জমিটি 'ক' তফসিলি ভূমি বিভাগের অধীনে থাকায় জমিটি লিজ দেওয়ার পরেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জমির ওপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই জমিতে স্থায়ী কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

কিন্তু এই নিয়ম না মেনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ওই জমিতে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর তীর থেকে প্রায় ৩০ ফুট ভেতরে ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। এর জন্য বেজমেন্ট পিলারের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। নদীর উপর সেতুর ঠিক নিচ থেকে বেজমেন্টের কাজ শুরু হয়েছে।

নিয়মানুযায়ী, সড়ক বিভাগের কোনো স্থায়ী কাঠামোর কাছাকাছি কোনো কাঠামো নির্মাণ করতে হলে দূরত্ব থাকতে হবে অন্তত ৩০ ফুট। কিন্তু এই নিয়মের প্রতিও দেখানো হয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুলি।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারাও মুখ বন্ধ করে রেখেছেন।

এই নির্মাণ কাজের তদারকি করছেন ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম। তার দাবি, তারা গত বছর ৬ শতাংশ জমি লিজ পেয়েছেন। এর মধ্যে সাড়ে ৩ শতাংশ জমিতে কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'ইজারা দেওয়া জমি নদীর জমি না। ছোট যমুনা নদীর পানি প্রবাহেও কোনো বাঁধা পড়বে না। কারণ আমরা নদীর পানি বের করার জন্য বেজমেন্টে জায়গা রেখেছি।'

এই ভবনের নিচতলাটি দলীয় কার্যালয় ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।

নিয়ম ভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, 'সব নিয়ম যথাযথভাবে মেনেই এই ভবন নির্মাণ কাজ চলছে।'

গত বছর জমিটি লিজ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফুলবাড়ীর ইউএনও রিয়াজ উদ্দিন বলেন, 'কৃষি জমি হিসেবে জমিটি লিজ নেওয়া হয়েছে। এই জমিতে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ চলছে সেই ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না। স্থায়ী কোনো ইমারত নির্মাণ করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago