জোয়ারে ভাঙনের কবলে কক্সবাজার সৈকত

সৈকত
জোয়ারের পানির চাপে কক্সবাজার সৈকতে ভাঙন। ছবি: সংগৃহীত

জোয়ারের পানির চাপে কক্সবাজার জেলা শহর সংলগ্ন প্রায় ৪ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কলাতলী, সুগন্ধা, সীগাল, লাবণী ও শৈবাল পয়েন্টে বালুতীর নেই সাগরের। সৈকত সাগরে বিলীন হওয়ার পর জোয়ারের পানি এখন ঝাউবাগানে ঢুকে পড়েছে। লাবণী পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্পডেস্ক ও সড়কের কিছু অংশ সাগরে তলিয়ে যায়। জোয়ারের স্রোত ঝিনুক মার্কেটের কাছে আঘাত হানছে।

বর্তমানে লাবণী পয়েন্টে অবস্থিত ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা, ছাতা মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, বিজিবির ঊর্মি ক্যাফে, সুগন্ধা পয়েন্টের অস্থায়ী ঝুপড়ি দোকানঘর, পর্যটনের চেঞ্জিং ও ওয়াশরুম, শৈবাল পয়েন্টের বিচ ক্যাফে ও ওয়াচ টাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

এসব স্থাপনা জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে।

সৈকত
ভাটায় পানি নেমে গেলে দেখা যায় সৈকতে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সোমবার সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সীগাল, লাবণী ও শৈবাল পয়েন্ট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্টে সৈকতের অস্তিত্ব নেই। পর্যটকরা সাগরলতা মাড়িয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে যে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলেছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ব্যাগ জোয়ারের প্রবল ধাক্কায় ছিঁড়ে সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে। 

লাবণী ঝিনুক মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন দুলাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৪ দিনে সাগরের জোয়ারের প্রবল স্রোতে সুগন্ধা, লাবণী, কলাতলী ও সীগাল পয়েন্টে ৩০০-৩৫০ ফুট সৈকত পানিতে নিমজ্জিত হয়।'

কক্সবাজার সাগর সৈকত তীরবর্তী জনপদ বাহারছড়া এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের মতে, গত ১০০ বছরে সৈকতে এমন ভাঙনের কথা শোনা যায়নি।

আগে পূর্ণ জোয়ারের সময়ও সৈকতের ৩০০-৪০০ ফুট বালিয়াড়িতে বিচরণ করতেন পর্যটকরা। কিন্তু এবার আর সে অবস্থা নেই। পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সৈকত পুরোটা সাগরে ডুবে যায়। ফলে পর্যটকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। ভাটায় পানি নেমে গেলে দেখা যায়, ভাঙাচোরা বিবর্ণ সৈকত।

সৈকত
কক্সবাজার সৈকতের ভাঙন। ছবি; সংগৃহীত

সোমবার দুপুরে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে দেখা গেছে, জোয়ারের ঢেউয়ের প্রবল ধাক্কায় জিও টেক্সটাইল ব্যাগের বাঁধে ফাটল ধরছে। জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে পড়ছে। এর মধ্যে বিলীন হচ্ছে সৈকতের সমিতিপাড়া, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও শৈবাল পয়েন্টের ঝাউগাছ।

গত শুক্রবার জোয়ারের তাণ্ডবে লাবণী পয়েন্টে স্থাপিত ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি তথ্যকেন্দ্র ভেঙে যায়। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে স্থাপিত ট্যুরিস্ট পুলিশের আরেকটি তথ্যকেন্দ্র রোববার সকালে জোয়ারের ধাক্কায় হেলে পড়ে। এটিও যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোববার ও সোমবার সকালের জোয়ারের পানিতে গোটা সৈকত সাগরে ডুবে যায়। তখন কোনো পর্যটকের সৈকতে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা ছিল না। ভাটা শুরু হলে কয়েক হাজার পর্যটক একসঙ্গে সৈকতে নামেন।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কক্সবাজার সৈকতকে সাগরের গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে জিও টেক্সটাইল দিয়ে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। এটি অস্থায়ী ও সাময়িক উদ্যোগ।'

'লাবণী পয়েন্টে ১০০ মিটার বাঁধ দেওয়া হবে। উত্তরে নাজিরারটেকের কাছে সমিতিপাড়া অংশে ভাঙন তীব্র হলে সেখানেও জিও টিউবের বাঁধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, কক্সবাজার সৈকতে পরিকল্পিতভাবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।  
পাউবো সূত্র জানায়, গত মার্চে কক্সবাজার সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে ৪৫০ মিটার ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের কলাতলীর সাম্পান পয়েন্টে ৪৫০ মিটার জিও টিউবের বাঁধ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে পাউবোর খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। 

গত শুক্রবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সে সময় তিনি বলেন, 'সরকার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রক্ষায় স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাঁধটি উত্তরে নাজিরারটেক থেকে দক্ষিণে কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত হবে। এই বাঁধ নির্মাণের জন্য একনেকে ৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে।' 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

6h ago