পুলিশ কি মানুষ মেরে ফেলতে পারে

সংঘর্ষে নিহত আবদুর রহিমের মরদেহ ঘিরে স্বজনদের বিলাপ। ছবি: সংগৃহীত

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপিকে বাধা দেবে না, সেদিনই ভোলায় পুলিশের গুলিতে এক বিএনপি কর্মী নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে সেদিন বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় এবং পরে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা জানান, সমাবেশ ও মিছিল করার মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। তবে পুলিশ বলেছে, মিছিলের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি এবং তারা এতে বাধা দিলে বিএনপি সমর্থকরা তাদের দিকে ইট ও কাঁচের বোতল নিক্ষেপ করে।

ধরে নিলাম, পুলিশের বক্তব্যই সঠিক। এই বক্তব্যকে এক পাশে রেখে চিন্তা করি যে একটি আদর্শ সমাজে কী হয়। প্রতিবাদ করা একটি অধিকার এবং প্রতিবাদের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হওয়ার কথা না। এটাও মেনে নিলাম যে বিএনপির বিক্ষোভকারীরাই প্রথমে সহিংস হয়ে উঠেছিল।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণে' পুলিশের গুলিবর্ষণ করা কি ন্যায়সঙ্গত? পুলিশ কি নিজেই বিচারক, জুরি বা জল্লাদ হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের অপরাধে মানুষকে মেরে ফেলতে পারে? শক্তি প্রয়োগ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষার আর কোনো উপায় কি নেই?

এটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে এই ঘটনা বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে কী বার্তা দিচ্ছে, বিশেষ করে যখন ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপের ভয়ে বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

বিএনপি কর্মী আব্দুর রহিমই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গত ২৭ জুলাই ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় মায়ের কোলে গুলিবিদ্ধ হন ৭ মাস বয়সী শিশু সুমাইয়া।

সেই সন্ধ্যায়ও এক পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। আর পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। তবে এতে শিশু নিহতের ঘটনা প্রমাণ করে যে পুলিশ তখন কতটা বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়েছে।

পুলিশ কোড অনুযায়ী, দাঙ্গাবাজদের ভয় দেখানোর জন্য মাটিতে বা প্রয়োজন হলে হাঁটুর নিচে পুলিশ গুলি চালাতে পারে। এমন বিধান থাকা সত্ত্বেও পুলিশকে আমরা প্রাণঘাতী হতে দেখছি এবং পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটছে।

জনগণের করের টাকায় পরিচালিত প্রতিটি সরকারি সংস্থাকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য তা আরও গুরুত্বপূর্ণ, যারা আইনগতভাবেই একজন নাগরিককে আটক, প্রশ্ন, হুমকি ও কখনো কখনো জীবন কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা পর্যন্ত রাখে।

এমন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বাহিনীকে অবশ্যই সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ড এবং সব আইন মেনে চলতে হয়। তবুও, আমরা বাংলাদেশে যা দেখছি তা হলো, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ন্যায়বিচারের বরখেলাপ। জবাবদিহির আওতায় আনা এবং অবিলম্বে সংস্কার না হলে আমাদের আশঙ্কা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আরও বেশি মানুষ মারা যাবে বা হয়রানির শিকার হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

8h ago