জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় আহত ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত

জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় আহত ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত
বেলায়েত শেখ। ছবি: সংগৃহীত

ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ৷

এবারের সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় দেশের সবচেয়ে প্রবীণ পরীক্ষার্থী হিসেবে আলোচনায় আসেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিতব্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আজ সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে বাসে করে রওয়ানা দেন বেলায়েত শেখ। সেসময় শ্রীপুর থেকে ভবানীপুরগামী একটি বাসের ধাক্কায় মেরুদণ্ডের নিম্নের হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছেন তিনি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাসটি গতিনিরোধকের ওপর না থামিয়ে আমাকে ধাক্কা দেয়। আহত অবস্থায় অনেক কষ্টে সাভারে পৌঁছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এখন সাভারে বন্ধুর বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছি৷'

দুর্ঘটনায় আহত হলেও মনোবল হারাননি বলে জানান তিনি।  

তিনি বলেন, 'জীবনে অনেক বাধা পেরিয়ে ৫৫ বছর বয়সে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছি৷ জীবন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অ্যাকাডেমিক পরীক্ষায় বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। আমি যখন ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতি নিই, তখনও বাধার মুখে পড়ি৷ ১৯৮৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষার সময়েও বাধা আসে৷ ১৯৯১ সালেও বন্যা হওয়ায় একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়৷ এটা আমার দুর্ভাগ্য৷'

'ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার সময়ে আমার শ্বশুর মারা যান৷ এরপর ১৭ দিন অসুস্থ থাকার পর রাজশাহীতে পরীক্ষা দিয়েছি৷ কালকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবো, আজকে গাড়িতে ধাক্কা লেগে মেরুদণ্ডের নিচে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছি৷ আমার পরীক্ষার সময়ে একটা না, একটা ঘটনা ঘটে থাকে। এটা আমার দুর্ভাগ্য৷ কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি পরীক্ষা দেবো,' বলেন তিনি।

বেলায়েত ১৯৮৩ সালে প্রথমবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলেও টাকার অভাবে সেবার নিবন্ধন করতে পারেননি।

১৯৮৮ সালে তিনি আবারও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সে বছর সারাদেশে বন্যার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি।

এর কয়েক মাস পর তিনি ফটোগ্রাফার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি 'দৈনিক করতোয়া' পত্রিকার গাজীপুরের শ্রীপুর প্রতিনিধি।

কর্মজীবন শুরু করার পর বেলায়েত আর পড়ালেখা না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার ছোট ভাইদের মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বর্তমানে তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

তার মেয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও কলেজে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। এমনকি, তার বড় ছেলেও পড়ালেখা করতে আগ্রহী নন।

ছেলে-মেয়েরা তার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন বেলায়েত।

অদম্য বেলায়েত অবশেষে ২০১৯ সালে এসএসসি এবং ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন।  যে বছর তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দেন, একই বছর তার ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

5h ago