সিলেটে লোডশেডিং ৭-৮ ঘণ্টা

ছবি: স্টার

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সংকট মোকাবেলায় গত ১৯ জুলাই থেকে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক ১ থেকে ২ ঘণ্টার শিডিউল করে লোডশেডিংয়ের নির্দেশনা দেয় সরকার।

তবে শুরু থেকেই সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতাধীন এলাকায় দৈনিক অন্তত ৩ ঘণ্টা এবং পরবর্তীতে দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। অথচ শিডিউলে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা প্রকাশ করছে পিডিবি।

এরই মধ্যে গতকাল বুধবার পিডিবি-২ এর আওতাধীন এলাকায় আজ সোমবারের জন্য ১৩ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের একটি সূচি প্রকাশ করে। অবশ্য পরবর্তীতে এ সূচি পরিবর্তিত করে আগের মতো সূচি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির।

তিনি দাবি করেন, দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরের তুলনায় অন্তত ১০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় সিলেটে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এদিকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে সিলেটের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

নগরীর বালুচর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও ৪-৫ ঘণ্টা বা কখনো আরও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। শিডিউলে যে সময় দেওয়া হচ্ছে তার বাইরেও অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। এই অব্যবস্থাপনার মানে কী? এভাবে কতদিন চলবে?'

পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিভাগীয় শহর হিসেবে আমরা লোড কম পাচ্ছি। আজ সোমবার বরাদ্দ পেয়েছি ৯৩ মেগাওয়াট, যেখানে চাহিদা ১৭৫ মেগাওয়াট। গতকাল রোববার একই চাহিদার বিপরীতে পেয়েছিলাম ৭৮ মেগাওয়াট। এই লোড দিয়ে সরবরাহ সামলাতে পারছি না, এতে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'সিলেট ছাড়া সব বিভাগীয় শহর অন্তত ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। যেহেতু কোন বিভাগীয় শহরই এর বেশি পাচ্ছে না, তাই সিলেটও অন্তত ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া উচিত। সবার সমান হলে জনঅসন্তোষ থাকবে না। কিন্তু এখন যে বরাদ্দ পাচ্ছি, তা দিয়ে শিডিউল করলেও তা মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।'

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিলেট বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও অব্যবস্থাপনার কারণে বিগত কয়েকবছর ধরে অসময়ে দীর্ঘ লোডশেডিং হচ্ছে । এখন সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক লোডশেডিংয়েও এই অব্যবস্থাপনা প্রকট হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'অতিরিক্ত ও শিডিউল ভেঙে লোডশেডিংয়ের কারণে সাধারণ মানুষ যেমন ভোগান্তিতে আছেন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও কষ্টে আছেন। একদিকে রাত ৮টায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা, তার উপর অনিয়মিত লোডশেডিংয়ে অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।'

চেম্বার সভাপতি আরও বলেন, 'সরকার জ্বালানি সাশ্রয় করতে চাচ্ছে, অথচ বাস্তবে জ্বালানি খরচ আরও বাড়ছে। লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আইপিএসের ব্যবহার বাড়ায় বিদ্যুতের উপরও চাপ বাড়ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।'

সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি বাড়ছে। সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখন লোডশেডিংয়ের কারণে হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'শুধু দেখানোর জন্য শিডিউল প্রস্তুত ও প্রচার করলে হবে না, তা মেনেও চলতে হবে। এছাড়াও দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর যতটুকু বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে, সিলেটের জন্যও তা দিতে হবে। এক্ষেত্রে সমতা বণ্টন নিশ্চিত করার অনুরোধ সরকারের কাছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Banks see sluggish deposit growth as high inflation weighs on savers

Banks have registered sluggish growth in deposits throughout the current fiscal year as elevated inflation and an economic slowdown have squeezed the scope for many to save, even though the interest rate has risen.

15h ago