যেভাবে পদ্মা সেতু লোডশেডিংমুক্ত

আলোকিত পদ্মা সেতু। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

সারা দেশে শিডিউল করে লোডশেডিং শুরু হলেও, পদ্মা সেতুতে এর প্রভাব নেই। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের মূল সেতু, টোল প্লাজা, সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়াসহ অফিসগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।

পল্লী বিদ্যুৎ ও পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, সেতুতে লোডশেডিং হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর আছে। দিনের বেলা সেতুর ল্যাম্পপোস্টে আলোকবাতি জ্বলে না। তবে অন্ধকার হলে সেতুতে আলোকবাতি জ্বালানো হয়। আর টোল প্লাজায় সারাক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে, যেন সেতুতে যানবাহন চলাচল করতে সমস্যা না হয়। 

এছাড়া পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অনেক কাজ বাকি আছে। এজন্য সাইট অফিসগুলোতেও জরুরিভাবে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর দুই জেলা সমন্বয় করে সেতুর জন্য সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করায়, পদ্মা সেতু লোডশেডিংমুক্ত আছে।

শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জুলফিকার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পদ্মা সেতুতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক তার ও গ্রিডে ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু পদ্মা সেতুতে লোডশেডিং নেই।'

তিনি জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিজ উদ্যোগেই সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের ব্যবস্থা করেছে। জাজিরা প্রান্তের পদ্মা সেতু অংশ, শেখ রাসেল সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়া-২, টোল প্লাজাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। 

জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুতে মোট ১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় বলে জানান তিনি।

মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার এ এইচ এম মোবারক উল্ল্যা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলার অন্য জায়গাগুলোতে কষ্ট হলেও পদ্মা সেতু সার্বক্ষণিক আলোকিত রাখা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে কোনো লোডশেডিং হচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'মূল সেতু, মাওয়া সেনানিবাস, চীনা কর্মীদের ওয়ার্কশপসহ জেলার আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো, যেখানে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেগুলোর জন্য ১০-১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছি। যেন এসব স্থাপনায় লোডশেডিং না হয়।'

'আশাকরি ৮-১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাবো। অন্য সাইটগুলোতে কষ্ট হলেও আমরা পদ্মা সেতুর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছি। সব মিলিয়ে প্রতিদিন মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু অংশে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে,' যোগ করেন তিনি।
 
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই কর্মকর্তা আরও জানান, বাতির জন্য ৮০ কিলোওয়াট সংযোগ দেওয়া হয়েছে সেতুতে। কিন্তু সেখানে ৩৬-৩৭ কিলোওয়াট ব্যয় হয়। মাওয়া প্রান্তে মুর‍্যালের স্থাপনায় ৬৫ কিলোওয়াটের সংযোগ নিলেও, সেখানে ব্যয় ২৫-৩০ কিলোওয়াট। টোল প্লাজায় ৩০০ কিলোওয়াট সংযোগ নেওয়া হলেও, ব্যয় হয় ৪০-৫০ কিলোওয়াট। সার্ভিস এরিয়া-১ প্রান্তে ১২০০ কিলোওয়াট সংযোগ নেওয়া হলেও, ব্যয় হয় ২০০-৩০০ কিলোওয়াট।

যোগাযোগ করা হলে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের ডেইলি স্টারকে বলে, 'সেতুতে লোডশেডিংয়ের সমস্যা নেই। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সেতুতে ৬টি জেনারেটর আছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আলোচনা সভাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।'

পদ্মা দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুতে কোনো লোডশেডিং নেই। স্বাভাবিকভাবেই সব কার্যক্রম চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় কর্মরত এক প্রকৌশলী ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল বুধবার মাওয়া প্রান্তে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছিল। তখন জেনারেটর ব্যবহার করা হয়েছিল। এর আগেও ২০-৩০ মিনিটের জন্য লোডশেডিং হয়েছিল। 

লোডশেডিং হলেও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা ও সেতুর ল্যাম্পপোস্টে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সেতু ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো সৌর বিদ্যুতের আওতায় আনা যায় কি না, সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গতকালের লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে লৌহজং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক নিশীথ কুমার কর্মকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পদ্মা সেতু ও টোল প্লাজায় লোডশেডিং নেই। বৈদ্যুতিক কাজের জন্য গতকাল বন্ধ ছিল ১ ঘণ্টা। তবে লোডশেডিং হচ্ছে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus urges patience, promises polls roadmap soon after electoral reforms

He said the election train has started its journey and will not stop

34m ago