‘তার গল্প শোনা হয় না অনেক বছর’

নুহাশপল্লীতে হুমায়ুন আহমদের কবরের পাশে নায়ক ফেরদৌস। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় 'আমার আছে জল' ও 'চন্দ্রকথা' সিনেমায় অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। একটি নাটকেও অভিনয় করেছিলেন তার পরিচালনায়। আজ ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ দিবসে নন্দিত লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালককে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেরদৌস।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি তখন কলেজে পড়ি। বাংলা একাডেমির বই মেলায় গিয়েছি। হুমায়ূন আহমেদ স্টলে বসে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। ওই সময়ে তার শঙ্খনীল কারাগার, নন্দিত নরকে পড়ে ফেলেছি। প্রিয় লেখককে বই মেলার স্টলে পেয়ে অটোগ্রাফ নিতে ইচ্ছে করে। সেখানে ছিল পাঠকের দীর্ঘ লাইন। আমিও দাঁড়িয়ে যাই।'

'তার একটি বই কেনার পর লিখে দেন, "শুভেচ্ছান্তে"। আমার মন খারাপ হলো। এত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ নিলাম, অথচ একটি শব্দে তিনি আমাকে অটোগ্রাফ দিলেন? আবারো লাইনে দাঁড়ালাম। ভিড় শেষ করে আরেকটি বই নিয়ে তার কাছে যাওয়ার পর তিনি বললেন, "তুমি তো একটু আগে অটোগ্রাফ নিয়ে গেলে?" আমি বললাম, আপনি ছোট্ট কথায় লিখে দিয়েছেন, সেজন্য আবার এসেছি, কষ্ট পেয়েছি।'

নুহাশপল্লীতে ফেরদৌস। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

'এরপর তিনি লিখে দিলেন, "ভালোবেসে যারে ছুঁই, সেই যায় দীর্ঘ পরবাসে।" কি সুন্দর কথা! আমার মন ভরে গেল। মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে এলাম। ওটাই ছিল প্রিয় লেখককে প্রথমবার কাছ থেকে দেখা ও প্রথম কথা বলা।'

'কলেজ পাশ করে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। মডেলিং শুরু করেছি। একদিন এফডিসিতে যাই। সেদিন হুমায়ূন আহমেদও ছিলেন এফডিসিতে। আমির হোসেন বাবু আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রিয় লেখক আমাকে চিনতে পারেন। তিনি বলেন, "তুমি এখানে কেন?" আমি আমার ইচ্ছের কথা স্যারকে বলি। তিনি বলেন, "তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছ, সিনেমায় মনোযোগ দিতে পারবে?" আমি বললাম, স্যার আমি পারব। আমার আত্মবিশ্বাস আছে।'

'তিনি বললেন, "আত্মবিশ্বাস থাকাটা খুব জরুরি। এটা ছাড়া হবে না।" ব্যস! ওইটুকুই।'

'আরও দীর্ঘ সময় কেটে যায়। ততদিনে আমি হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমায় অভিনয় করেছি। হঠাৎ বৃষ্টি মুক্তির পর তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। আমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। আমার অভিনয়ের প্রশংসাও করেছিলেন। আমার সিনেমার ক্যারিয়ারে ২টি মাত্র নাটকে অভিনয় করেছি। তার মধ্যে একটি নাটকের পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ। হঠাৎ বৃষ্টির পর স্যারের অনুরোধে "এসো" নামের একটি নাটকে অভিনয় করি। ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর হতে শুরু করে।'

'আমার আছে জল, চন্দ্রকথাসহ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করি। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার অন্যরকম বন্ধুত্ব ছিল। কখনো বাবার মতো, কখনো বড় ভাইয়ের মতো, কখনো অভিভাবকের মতো, কখনো বন্ধুর মতো ছিলেন তিনি।'

'একবার তার একটি সিনেমার মহরত হবে নুহাশ পল্লীতে। সেবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ছিলেন। নুহাশপল্লীতে ছোট্ট একটি সুইমিংপুল আছে। একসময় হুমায়ূন আহমেদ বললেন, "পানিতে নেমে মহরত হবে।" এইরকম ছোট ছোট মধুর পাগলামি খেলা করতো তার ভেতরে। আমরা নেমে গেলাম সবাই পানিতে। সে এক দারুণ স্মৃতি।'

'জোছনা ও নক্ষত্রের প্রতি ছিল তার প্রবল টান ও ভালোবাসা। একবার শুটিং করছিলাম, তিনি রাতে সবাইকে নিয়ে ডিনার শেষে জোছনা দেখার ব্যবস্থা করলেন। রাতভর আমরা তার সান্নিধ্যে জোছনা দেখেছিলাম।'

'তিনি গল্প লিখতেন না শুধু, গল্প করতেও পছন্দ করতেন। তার গল্প আমরা মন দিয়ে শুনতাম। গল্প বলার মধ্যেও একধরণের আনন্দ খুঁজে পেতেন। এখন সবই আছে, শুধু তিনি নেই। তার গল্প শোনা হয় না অনেক বছর!'

Comments

The Daily Star  | English
shutdown at Jagannath University

Students, teachers call for JnU 'shutdown'

JnU students have continued their blockade at the capital's Kakrail intersection for the second consecutive day

3h ago