যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দৌড়: বাজির দরে এগিয়ে মরডান্ট, প্রাথমিক ভোটে ঋষি

টোরি দলের নেতা হওয়ার দৌড়ে ৫ প্রার্থী। বাম দিক থেকে: ঋষি সুনক, পেনি মরডান্ট, লিজ ট্রাস, কেমি বাডেনক ও টম টাগেনহাট। ছবি: বিবিসি
টোরি দলের নেতা হওয়ার দৌড়ে ৫ প্রার্থী। বাম দিক থেকে: ঋষি সুনক, পেনি মরডান্ট, লিজ ট্রাস, কেমি বাডেনক ও টম টাগেনহাট। ছবি: বিবিসি

জমে উঠেছে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) দলের নেতৃত্বের লড়াই। টোরি দল নামেও পরিচিত দলটির নেতা যিনি হবেন, তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।

বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর শুন্য পদ পূরণে প্রথমে ১১ জন প্রার্থী থাকলেও এ মুহূর্তে প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন ৫ শীর্ষ টোরি নেতা। প্রথম ২ রাউন্ডের ভোটে ঋষি সুনক বিজয়ী হলেও বাজিকরদের কাছে এগিয়ে আছেন পেনি মরডান্ট।

আজ যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই ৫ প্রার্থীর সর্বশেষ টেলিভিশন বিতর্কে তারা একে অপরের কাজ ও নীতির সমালোচনায় মেতে ওঠেন।

টিভি বিতর্কের আগে ৫ প্রার্থী। ছবি: পিএ ইমেজেস
টিভি বিতর্কের আগে সঞ্চালকের সঙ্গে ৫ প্রার্থী। ছবি: পিএ ইমেজেস

পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনকের কর বাড়ানোর নীতির সমালোচনা করে জানান, তার এই উদ্যোগের কারণে 'প্রবৃদ্ধির গলা টিপে ধরা হয়েছে'।

উত্তরে ঋষি সুনক লিজ ট্রাসের বিরুদ্ধে 'সামথিং ফর নাথিং' অর্থনীতির চর্চা করার অভিযোগ করেন। অন্যান্য আলোচিত বিষয়ের মধ্যে ছিল ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার, ব্রেক্সিট ও রাজনীতিতে আস্থার অভাব। 

৫ প্রার্থীই আগাম নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনাকে নাকচ করেন। উল্লেখ্য, টোরি দলের নতুন নেতা হিসেবে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি বরিস জনসনের বাকি থাকা আরও ২ বছর মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আসবে।

বিতর্কের এক পর্যায়ে সঞ্চালক জুলি এচিংহাম ৫ প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা নির্বাচিত হলে তাদের মন্ত্রীসভায় সদ্য-সাবেক বরিস জনসনকে স্থান দেবেন কী না। স্বভাবতই, কেউই হাত তুলে এ প্রস্তাবে সায় দেননি। যদিও নতুন কোনো প্রধানমন্ত্রীর ক্যাবিনেটে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তি মোটামুটি অসম্ভব একটি ঘটনা, কিন্তু তারপরেও, বরিসের সতীর্থদের এই মনোভাবে বিষয়টি স্পষ্ট, কতটা অজনপ্রিয় অবস্থায় তাকে দলের নেতার পদ ছাড়তে হয়েছে।

আজ সোমবার সংসদ সদস্যরা আবারো ভোট দিয়ে ৫ জন থেকে প্রার্থীর সংখ্যা ২জনে নামিয়ে আনবেন। চূড়ান্ত ২ প্রার্থীর মধ্য থেকে টোরি দলের সব সদস্য (প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার) ডাকযোগে ভোট দিয়ে দল ও দেশের নেতাকে নির্বাচন করবেন। নতুন নেতার নাম ঘোষণা করা হবে ৫ সেপ্টেম্বর।

১ ঘন্টাব্যাপী বিতর্কে সবচেয়ে প্রাণবন্ত বিতর্কে জড়ান ঋষি সুনক ও লিজ ট্রাস। জীবনযাত্রার খরচকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল তাদের বিতর্কের মূল বিষয়বস্তু।

ঋষি সুনক সংসদ সদস্যদের প্রথম ২ দফা ভোটে বড় ব্যবধানে জিতলেও প্রচারণার শুরু থেকেই সাবেক অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার ভূমিকা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

গতকালের বিতর্কে অর্থমন্ত্রী থাকার সময় তিনি যেসব উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেগুলোর পক্ষে সাফাই গাইতে বাধ্য হন ঋষি।

ঋষি সুনক পদত্যাগ করার পরেই বরিস জনসনের পতনের শুরু হয়। ছবি: রয়টার্স
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। ছবি: রয়টার্স

লিজ ট্রাস বলেন, ঋষি গত ৭০ বছরের মধ্যে করের হারকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি আরও জানান, 'এ ধরনের উদ্যোগে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে না।'

'বিষয়টা হচ্ছে, এই মুহূর্তে কর বাড়ালে তা আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গলা টিপে ধরবে। এটি আমাদের রাজস্ব আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, যার মাধ্যমে আমরা ঋণ পরিশোধ করতে পারতাম', যোগ করেন লিজ।

উত্তরে ঋষি বলেন, মহামারির কারণে অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে এবং এই ক্ষতি পূরণ করতে হবে। তিনি আরও জানান, এ ধরনের ঘটনার ফল হিসেবে দেশে উচ্চ পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি, মানুষের সঞ্চয় কমে যাওয়া ও সম্পত্তি বন্ধক রাখার খরচ বেড়ে যায়।

লিজ ট্রাস। ছবি: রয়টার্স
লিজ ট্রাস। ছবি: রয়টার্স

লিজ ট্রাসের সমালোচনায় ঋষি বলেন, 'এ ধরনের সামথিং ফর নাথিং (যে উদ্যোগে কোনো ফল পাওয়া যায় না) অর্থনীতি কনজারভেটিভদের কাজ নয়। এটি সমাজতন্ত্র কায়েমের সামিল।'

ঋষি সুনক ও লিজ ট্রাস কর নীতিমালা ও ব্রেক্সিট নিয়েও বিতর্কে জড়ান।

আপাতদৃষ্টিতে ঋষি সুনকের সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল মনে হলেও, বাজিকরদের বাজির দরে বাণিজ্য মন্ত্রী পেনি মরডান্ট সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনি অল্প পরিসরে কর কমানোর সুপারিশ করেন এবং জানান, এই উদ্যোগে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। তিনি আরও জানান, মানুষের এখন জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে সহায়তা প্রয়োজন।

বাজির দরে এগিয়ে আছেন পেনি মরডান্ট। ছবি: রয়টার্স
বাজির দরে এগিয়ে আছেন পেনি মরডান্ট। ছবি: রয়টার্স

'ঋষি কেনো এই বিষয়টি বোঝে না, সেটা আমি বুঝতে পারছি না', যোগ করেন পেনি মরডান্ট।

ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের অধিকার নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কে মেতে ওঠেন পেনি মরডান্ট ও সাবেক সমতা মন্ত্রী কেমি বাডেনক।

বাডেনক দাবি করেন, তিনি ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী এবং তার সততা দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

কেমি বাডেনক। ছবি: রয়টার্স
কেমি বাডেনক। ছবি: রয়টার্স

সব প্রার্থীদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা জি২০ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে বসতে রাজি আছেন কী না। সবাই মানা করলেও লিজ ট্রাস জানান, তিনি সবার সামনে ভ্লাদিমির পুতিনের মোকাবিলা করবেন।

অপর প্রার্থী টম টাগেনহাট জানান, যারা বরিস জনসনের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন, তারা তার 'ঝামেলাপূর্ণ সরকারে বিশ্বাসযোগ্যতা যোগ করেছেন।'

টম টাগেনহাট। ছবি: রয়টার্স
টম টাগেনহাট। ছবি: রয়টার্স

পেনি মরডান্ট আরও জানান, 'সমীক্ষা মতে, আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কের স্টার্মারকে (লেবার পার্টির নেতা) পরাজিত করতে পারবো।'

শুধুমাত্র টোরি দলের সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত 'কনজারভেটিভ হোম' ওয়েবসাইটের এক সমীক্ষায় সদস্যদের ভোটে দেখা গেছে কেমি বাডেনক অন্যদের থেকে এগিয়ে আছেন। শনিবারের এই সমীক্ষায় পরের দুটি স্থান যথাক্রমে লিজ ট্রাস ও পেনি মরডান্টের।

লেবার দলের ছায়ামন্ত্রী কনর ম্যাকগিন বিতর্কের প্রতিক্রিয়ায় জানান, এই বিতর্কে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে ঠিক কতটুকু বাস্তবতা বিবর্জিত অবস্থায় রয়েছেন টোরি দলের নেতারা। তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, দেশের মানুষ দৈনন্দিন খরচ মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে আর তারা 'রূপকথার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা' নিয়ে মেতে আছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Chinese firms bullish on Bangladesh’s manmade fibre

Chinese firms bullish on manmade fibre exports to Bangladesh

Non-cotton garments are particularly lucrative, fetching higher prices than traditional cottonwear for having better flexibility, durability

15h ago