কীটপতঙ্গও নিদ্রাহীনতা রোগে ভোগে

ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

মশা, মাছির মতো কিছু কীটপতঙ্গের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি দেখে অনেকেরই প্রশ্ন জাগতে পারে, কীটপতঙ্গ কি তাহলে ঘুমায় না?

উত্তরে উইস্কন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী বারেট ক্লেইন বলছেন, 'হ্যাঁ তারাও ঘুমায়। কীটপতঙ্গের অনেকের ঘুম আবার একদম স্তন্যপায়ীদের মতো।'

যদিও কীটপতঙ্গের ঘুমের পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে পরিমাপ করা কিছুটা জটিল কাজ, কারণ তাদের সত্যিকারের তন্দ্রা এবং বিশ্রাম গ্রহণের ধরন অনেকটা কাছাকাছি ধরনের। তাই কোনো পতঙ্গকে দেখে মনে হতে পারে, সে গভীর ঘুমে ডুবে আছে, কিন্তু সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে, পরিশ্রমের সময় কাটিয়ে আদতে সে তখন বিশ্রাম নিচ্ছে। কীটপতঙ্গের যেমন ঘুমের ব্যাপার আছে, তেমনি আছে তাদের মানুষের মতো নিদ্রাহীনতার খেসারত দেওয়ার ঘটনাও।

প্রজাপতির ক্ষেত্রে তাদের ঘুম এবং বিশ্রামের মধ্যকার পার্থক্য খুঁজে পাওয়া খুবই দুরুহ কাজ। বিশ্রাম বা ঘুম যেটাই হোক, সেই অবস্থায় প্রজাপতিদের সাধারণত সন্ধ্যায় চলে যেতে দেখা যায়। এমনটায় অর্থাৎ তাদের ঘুম বা বিশ্রামে যদি কোনো কারণে ব্যাঘাত ঘটে, তবে প্রজাপতিদের দেখা যায় এলোমেলো আচরণ করতে- কোন নারী প্রজাপতিকে দেখা গেল ভুল গাছে ডিম পাড়তে, যেই গাছে হয়তো ডিম শিকারি শুঁয়ো পোকা ওঁৎ পেতে আছে।

অন্যদিকে, সম্ভাব্য খাবারের উৎস বা বাসা নির্মাণের স্থান সম্পর্কে একে অন্যকে জানাতে মৌমাছিরা যে ওয়াগল নাচ নাচে, সে নাচ এলোমেলো করে ফেলে নিদ্রাহীনতায় থাকা মৌমাছি। আবার, এক ধরনের ফলের মাছি ঘুমের অভাবে স্মৃতিশক্তি হারাতে বসে। 

জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজির ২০২২ সালের জুন সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অনিদ্রায় থাকা মশা রক্ত খাওয়া বাদ দিয়ে মানুষের শরীরেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে। 

বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই মশার সারকাডিয়ান রিদম অর্থাৎ দেহ ঘড়ি, যা তাদের নিদ্রা ও জেগে থাকার সময় নির্ধারণ করে, তা জানার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। মশার মাধ্যমে রোগের সৃষ্টি এবং বিস্তার ঠেকানোর জন্য তারা কখন জেগে থাকে এবং কামড়ায়, তা জানা অত্যন্ত জরুরি। যেমন, ম্যালেরিয়া সাধারণত নিশাচর শ্রেণির মশার মাধ্যমে ছড়ায় বলে রোগ প্রতিরোধে রাতে মশারির ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নতুন কিছু গবেষণা বলছে, যেসব মশা দিনের বেলায় 'পানাহারে' মশুগুল হয়, সেসব প্রজাতির মশাও ম্যালেরিয়া ছড়াতে পারে।  

কীটপতঙ্গের ঘুম ও বিশ্রামের পার্থক্য নির্ণয় সংক্রান্ত জটিলতার জন্য, আদতেই কোনো মশা ঘুমাচ্ছে নাকি বিশ্রাম নিচ্ছে, তা বোঝা গবেষক দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গবেষণার সগুরুতে তারা ক্যামেরা এবং ইনফ্রারেড সেনসর ব্যবহার করে ঘুমন্ত ও বিশ্রামরত অবস্থায় মশার দৃশ্যমান শারীরিক চিহ্ন, প্রকাশ পর্যবেক্ষণ করেন। যেমন, ঘুমিয়ে পড়লে মশার পেট নেমে পড়া, পা ঝুলে যাওয়া ইত্যাদি।    

ছবি: সংগৃহীত

গবেষণার আওতায় থাকা ম্যালেরিয়ার মতো রোগ ছড়াতে সক্ষম এমন ৩ প্রজাতির মশাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর ভেতর কিছু মশাকে পরিষ্কার বোতলে রেখে সেই বোতলে কিছুক্ষণ পরপর কম্পন প্রয়োগ করা হচ্ছিল। ফলে বোতলে থাকা মশাদের গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ ছিল না। এভাবে ৪ থেকে ১৩ ঘণ্টা তাদের ঘুমাতে না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, গবেষক দল উষ্ণ কৃত্রিম ঘামের প্যাড দিয়ে একজন পোষকের উপস্থিতি নকল করে। 

আরেকটা পরীক্ষায়, একজন স্বেচ্ছাসেবী ৫ মিনিটের জন্য তার পা বাড়িয়ে দেন নিদ্রা বঞ্চিত এবং পূর্বে যথেষ্ট বিশ্রাম গ্রহণ করা এজেপ্টি প্রজাতির মশার সামনে। উদ্দেশ্যে- মশাগুলোকে রক্ত খাওয়ানো।    

উভয় পরীক্ষাতেই, নিদ্রা বঞ্চিত মশাদের তুলনায় সারারাত বিশ্রাম নেওয়া মশারা পোষক ও স্বেচ্ছাসেবকের ওপর আক্রমণ করতে অনেক বেশি এবং অতি দ্রুত আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। ৮টা পরীক্ষায়, মোটামুটি ৭৭ শতাংশ বিশ্রাম গ্রহণকারী মশা রক্ত খেতে আক্রমণ চালায়, যেখানে মাত্র ২৩ শতাংশ নিদ্রা বঞ্চিত মশা রক্ত পানে আগ্রহী ছিল।

ওই গবেষণাটি মশার সারকাডিয়ান রিদম বুঝতে এবং মশার মাধ্যমে ছড়ানো রক্তের বিস্তার কমাতে বড় ধরনের সাহায্য করবে বলে গবেষক দলের দাবি। 

 

তথ্যসূত্র: 
ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, সায়েন্স নিউজ

 

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

7h ago