রংপুর বিভাগ: ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নাভিশ্বাস

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

দেশের অন্য অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলা। লোডশেডিংয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন এক প্রকার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে রংপুর বিভাগের শত শত কারখানা, বিশেষ করে চালকলগুলোর উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।

পাশাপাশি ঈদের আগে জেলা শহরগুলোর বড় বড় বিপণিবিতানগুলো দিনভর খোলা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা মিলছে না লোডশেডিংয়ের কারণে। এ ছাড়া একই কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান চালকরা। দিনের একটি বড় সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকঠাক যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ করতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তাদের।

বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, কয়েক দিন ধরে দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে জেলাগুলোতে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।  

রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বলেন, রংপুর বিভাগে পিক আওয়ারে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট।

অন্যদিকে অফপিক আওয়ারে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট।

নেসকোর ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, 'রংপুর জেলাসহ পুরো বিভাগে গত কয়েক দিন ধরে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।'

এদিকে রংপুর নগরেও লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ। শহরের প্রেস ক্লাব মার্কেটের ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম বলেন, 'একদিকে প্রচণ্ড গরম। অন্যদিকে দফায় দফায় লোডশেডিং। সামনে ঈদ। অথচ সারাদিনে মার্কেটে তেমন কাস্টমার পাওয়া যাচ্ছে না।'

একই কথা বলেন জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী মমতাজ উদ্দিন। তার ভাষ্য, 'লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের কারণে মার্কেটে বেচাকেনা নেই।'

শহরের অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম জানান, লোডশেডিংয়ের জন্য ঠিবমতো ব্যাটারি চার্জ করতে না পারায় তার মতোই আরও অনেক অটোচালক বিপাকে পড়েছেন।

পাশাপাশি তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতিও হচ্ছে।

এদিকে দিনাজপুরের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন,  দিনাজপুর জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ২০৯ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৯৮ থেকে ১০০ মেগাওয়াটের।

অথচ গত কয়েকদিন ধরেই এই অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, মৃদু তাপপ্রবাহের কারণে এই অঞ্চলে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। এই তাপপ্রবাহ মধ্য জুলাই পর্যন্ত বিরাজ করতে পারে।

দিনাজপুর শহরের পাহাড়পুর এলাকার বাসিন্দা হাসান আলী বলেন, 'গত কয়েক দিন ধরে দিনে কয়েকবার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাতে অসহনীয় গরমে অতিষ্ট হয়ে অনেককে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে।'

সার্বিক বিষয়ে জানতে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'িদিনের বেলায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াটের। সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট।'

এ অবস্থা সাময়িক দাবি করে নেসকোর ওই প্রকৌশলী আরও বলেন, 'আশা করি ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Macroeconomic challenges to persist in Jul-Dec: BB

BB highlights inflation, NPLs, and tariff shocks as key concerns

2h ago