রংপুরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩২ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া

ছবি: সংগৃহীত

রংপুর সিটি করপোরেশনে ২৩ কোটি টাকাসহ রংপুরে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫৫ কোটি টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)।

এর মধ্যে সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া আছে ৩২ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩১১ টাকা।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দ না আসায় বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

বিল পরিশোধের জন্য বেশ কয়েক দিন মাইকে প্রচার চালিয়েছে নেসকো। চিঠিও দিয়েছে। তবে বিল পরিশোধে গ্রাহকের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।

গত ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল অপরিশোধিত থাকলে সংযোগ কেটে দেওয়ার নির্দেশনা দেন। সে নির্দেশনার পর বকেয়া বিল আদায়ে তৎপর রংপুর নেসকো।

রংপুর সিটি করপোরেশনের কাছে সব থেকে বেশি পাওনা এই প্রতিষ্ঠানটির। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রংপুরের নেসকো ডিভিশন-১, ২ ও ৩-এর কাছে রংপুর সিটি  কর্পোরেশনের বকেয়া পড়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা।

রংপুর পুলিশ ক্লাবের কাছে বকেয়া ১২ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

এ ছাড়া, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ৬০ লাখ ৯ হাজার ৭০০ টাকা, রংপুর শিল্পকলা একাডেমির ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা ও দিনাজপুর পুলিশ বিভাগের বকেয়া আছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

৮ কোটি ৮৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে নেসকো ডিভিশন-২-এর।

এর মধ্যে, রংপুর জেলা পুলিশের ৭২ লাখ, রংপুর গণপূর্ত বিভাগের ৪৫ লাখ ও স্টেডিয়ামের বকেয়া ১২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

ডিভিশন-৩-এর পাওনা ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিহারি ক্যাম্পের ৫ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার, মাহিগঞ্জ রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশের ২ লাখ টাকা বকেয়া।

রংপুর নেসকো ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর সিটি করপোরেশনের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য প্রতি মাসে চিঠি দেওয়া হয়। এর কোনো উত্তর পাই না। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের বিদ্যুৎ বিলের আংশিক পরিশোধ করেছে, অনেকে অর্ধেক করেছে। সবাইকে নিয়মিত চিঠি দেওয়া হচ্ছে।'

ডিভিশন-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর সিটি করপোরেশনের কাছে সব থেকে বেশি পাওনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছি। জুন শেষ হয়েছে, এখনো বিল পাইনি।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর নেসকোর এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুরে ২ বিহারি ক্যাম্পে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এক সময় ত্রাণ মন্ত্রণালয় তাদের বিল দিত। এখন দেয় না। ২০১৬ সালে উচ্চ আদালত বিহারিদের নাগরিকত্ব নিয়ে আদেশ দেন। সেই আদেশে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিল বিহারিরাই দেবেন। কিন্তু, তারা দিচ্ছেন না।'

'যতটুকু জানা গেছে, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। নেসকোর তরফ থেকে বকেয়া বিলের জন্য প্রতি মাসে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বিল পাওয়া যাচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১৫ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকার বিলের গ্রাহককে পাওয়া যাচ্ছে না।

এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, রংপুরে বিভিন্ন বর্ধিত সড়কের কাজের ফলে সড়কের ২ পাশের বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙা পড়েছে। সেসব দোকানের বিদ্যুৎ বিল বাকি। দোকানিরা এখন কে কোথায় আছেন কেউ জানেন না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি পর্যায়ে বকেয়া আদায়ে প্রতিদিনই কমপক্ষে অর্ধশত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। যারা বিল পরিশোধ করছেন, তাদের পুনরায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রতিনিয়তই মামলা হচ্ছে।

রংপুর নেসকো লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অফিস পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল-১) আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বকেয়া আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সম্প্রতি, রংপুর সিটি করপোরেশন ডিভিশন-২-এর বকেয়া বিল হিসেবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে।'

সরকারি অনেক অফিস তাদের বকেয়া পরিশোধ করেছে। যাদের বকেয়া আছে তারা বরাদ্দ পেলেই পরিশোধ করবে বলে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়র মহোদয় হজে গেছেন। প্রশাসনিক বিষয়টি তিনিই দেখেন। আমার বিষয়টি জানা নেই।'

Comments

The Daily Star  | English
Gunfight

Local BNP leader shot dead in Dhaka’s Badda

When Kamrul was sitting on a chair on the roadside and talking with 2-3 people, two assailants on foot came from behind and shot him before fleeing the scene

2h ago