ইভিএম মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে: সুজন

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: স্টার

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে সুজন। সংবাদ সম্মেলনে ইভিএম নিয়ে সুজনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

সুজন সম্পাদক বলেন, ২০১২ সালে কুমিল্লা নির্বাচনে ব্যবহৃত বায়োমেট্রিক ইভিএমে ভোট পড়েছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে পেপার ব্যালটে ভোট পড়েছিল ৬৪ শতাংশ। এবারে সেখানে ভোট পড়েছে ৫৯ শতাংশ। ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে, বায়োমেট্রিক ছাপ না মেলায় অনেকে বিরক্ত হয়ে চলে গেছে। এখানে ইভিএম মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ইভিএম যদি মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সেই ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা কী?

গত কয়েকটি নির্বাচনে ইভিএম দিয়ে ভোট পড়ার হার তুলনা করেছে সুজন। তাতে দেখা যাচ্ছে ইভিএমে তুলনামূলকভাবে কম ভোট পড়ছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন,গত জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছিল ৬টি আসনে আর ২৯৪টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল পেপার ব্যালটে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২৯৪ আসনে যেখানে পেপারব্যালটে ভোট হয়েছে, সেখানে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে যে ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানে ভোট পড়েছিল ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ৩০ শতাংশ পার্থক্য। এর মানে যেখানে পেপার ব্যালটে ভোট হয়েছে সেখানে কারসাজি করা হয়েছে, না হয় যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেখানে মানুষকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রোবায়েত ফেরদৌস এবং সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

কুমিল্লা নির্বাচন সম্পর্কে সুজন-এর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, এই নির্বাচনে মূল আলোচিত ঘটনা ছিল কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি। তিনি এলাকা ছাড়ার ব্যাপারে ইসির নির্দেশ অমান্য করা সত্ত্বেও বিধিমালার ৩১ ও ৩২ ধারা অনুযায়ী শাস্তির বিধান প্রয়োগ না করায় কমিশন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে কমিশন থেকে বলা হয় বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি কমিশনের মর্যাদাও ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা না ফিরলে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কখনই সম্ভব নয়। তাই, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ফেরানোর প্রয়োজনেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, যথাযথ তদন্ত পূর্বক এ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে তাদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হবে।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, কুমিল্লা নির্বাচন ছিল এই কমিশনের প্রথম পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষাতেই তারা অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ইভিএমে প্রিন্টআউট না থাকার কারণে পুনঃগণনার সুযোগ নেই। যারা ইভিএমে ভোট দিতে না পেরে ফেরত যান, তাদের জন্য বিকল্প ভোটের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। সরকারি লোকজন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে পদত্যাগ করার সাহস ও দৃঢ়তা দেখাতে হবে। কমিশন এই দৃঢ়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

1h ago