দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ‘দুর্নীতি কমানোর’ প্রকল্প!

আমরা জেনে খুবই অবাক হয়েছি যে দীর্ঘ ৮ বছরের প্রস্তুতি ও ৭২৭ কোটি টাকা ব্যয়ের পর 'ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডেটাবেস (এনএইচডি)' তৈরির প্রক্রিয়া ব্যর্থ হতে চলেছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

এ ডেটাবেস তৈরির প্রকল্পে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তার সঙ্গে ব্যর্থতার জন্য আরও অতিরিক্ত অর্থ অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যেমন, এই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে এ বছরের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বরাদ্দ করা ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বিতরণের কথা ছিল। অথচ আইএমইডি বলছে, তারা একটি 'অব্যবহারযোগ্য' তথ্যভাণ্ডার পেতে যাচ্ছে।

এটা কোনো কথা হতে পারে না। এ প্রকল্পের জন্য বড় কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিংবা জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন ছিল না। তবুও এটি তৈরি করতে ৫ বছর দেরি হলো। শুধু তাই নয়, ৪ বার সংশোধনের পর প্রকল্পের খরচ বেড়েছে ১১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এরপরও আমরা যা পেতে যাচ্ছি, তা দিয়ে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যাবে না। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা যাবে না দরিদ্রদের। এক কথায়, পুরো প্রক্রিয়াটিই অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ৫৪৫ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা হয়নি। বেশ কয়েকজন পরামর্শকও নিযুক্ত করা হয়েছিল। তারাও সঠিক কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে ডেটাবেসে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ প্রকল্পে কোনো অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়নি। প্রকল্পের আইটি পরামর্শক ও সিনিয়র প্রোগ্রামাররাও উল্লেখযোগ্য কিছু করেননি। সব মিলিয়ে এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সমস্যাগুলোর দিকে আরও আগেই নজর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) অন্তত ৩৫টি সভা হওয়ার কথা ছিল। সভা হয়েছে মাত্র ৯টি। এ কারণে প্রকল্পের তদারকি সঠিকভাবে হয়নি এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক বিলম্ব হয়েছে।

প্রকল্পের এ পর্যায়ে এসে উদ্বেগ ও পেশাদারিত্বের অভাবের বিষয়টি সামনে আসায় প্রশ্ন ওঠছে, কেন এমন হলো? সরকারি সহায়তা কর্মসূচিতে দুর্নীতি কমিয়ে বিপুল অর্থ বাঁচানোর জন্য ডেটাবেস তৈরির যে প্রকল্প নেওয়া হলো, সেখানে কেন এ ধরনের লাগামহীন অব্যবস্থাপনার সুযোগ দেওয়া হলো?

এতদিন ধরে শুধু এটাই আলোচনা হচ্ছিল যে এ প্রকল্পটি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে এক 'বিপ্লব' ঘটাবে। অবস্থা দেখে এখন মনে হচ্ছে, এ প্রকল্পের মতো আলোচনাগুলোও অর্থহীন ছিল।

যদিও এটা অস্বীকার করা যাবে না যে সঠিকভাবে ডেটাবেস তৈরি হলে তা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে যথেষ্ট কাজে লাগত। সরকারকে অনুরোধ করছি জনগণের অর্থের আর অপচয় না করে কীভাবে এটিকে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টা করা হোক। এ ব্যর্থতার জন্য যারা দায়ী, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Yunus calls for peace

Yunus condemns attack at Amar Ekushey Boi Mela, orders swift action

In a statement, the chief adviser denounced the violence, emphasising that it goes against the open-minded spirit of the book fair, which honours the language martyrs of February 21, 1952, according to the CA's press wing

3h ago