চট্টগ্রাম

গত বছরের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গরু

গরু কিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী সদর গরুর হাট থেকে ফিরছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোহাম্মদ ইলিয়াছ। তিনি গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন, এবার একই আকারের গরু কিনেছেন ৭০ হাজার টাকায়।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী সদর গরুর হাট। ছবি: সিফায়াত উল্লাহ

গরু কিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী সদর গরুর হাট থেকে ফিরছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোহাম্মদ ইলিয়াছ। তিনি গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন, এবার একই আকারের গরু কিনেছেন ৭০ হাজার টাকায়।

'গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি। গতবার মণ ছিল ২৫ হাজার টাকা, এবার বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার, অর্থাৎ মণপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ হাজার টাকা,' বলেন ইলিয়াছ।

নগরের বিবিরহাট বাজারে গরু কিনতে আসেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফারুক। তিনি বলেন, বাজেটের সঙ্গে গরু মেলানো যাচ্ছে না। অনেক বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা স্বীকার করেছেন, এবার গরুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। তারা বলছেন, গোখাদ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুন। তাই বাধ্য হয়ে তারা গরুর দাম বাড়িয়েছেন।

গরু ব্যবসায়ী মো. এরশাদ বলেন, গত বছর গমের চিকন ভূষি প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, এবার বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায়। গরুর সব ধরনের খাবারের দাম বেড়েছে।

৩০টি গরু নিয়ে হাটহাজারী গরুর বাজারে এসেছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বাসিন্দা এহসানুল হক। তিনি বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। যারাই আসছেন গরুর দাম বলছেন কম।

তবে হাটহাজারী বাজারের ইজারাদার আবু তৈয়ব বলেন, হাটে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। আশা করছি দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

আজ রোববারসহ আর ৮ দিন বাকি ঈদুল আজহার। কিন্তু এখনো নগরের হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু চোখে পড়েনি। তবে উপজেলার হাটগুলোতে কোরবানির পশু এসেছে। স্থায়ী হাটগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে।

নগরের অস্থায়ী গরুর হাট চৌধুরীহাট গরুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্থানীয় খামারিরা গরু বাঁধার জন্য খুঁটি গেড়েছেন। তবে তুলনায়মুলক গরু কম।

বাজারটিতে গরু নিয়ে আসা কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, চৌধুরীহাট বাজারে হাসিল (কর) লাগে না। তাই এখানে গরু বিক্রি হয় অন্যান্য হাটের তুলনায় বেশি।

এদিকে, চট্টগ্রামের নিজস্ব জাত রেড চিটাগাং ক্যাটেল তথা লাল বিরিষ এবারও চাহিদার শীর্ষে। হাটগুলোতে এই জাতের গরুর সমাহার।

আকারে কিছুটা ছোট, চর্বিও কম, দেখতে সুন্দর এবং সতেজ হওয়ায় কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের মানুষের প্রথম পছন্দ লাল জাতের এই দেশি গরু।

আনোয়ারা সরকারহাট গরুর বাজারে দুইটি আরসিসি জাতের গরু বিক্রি করতে এনেছেন স্থানীয় খামারি নুরুল আমিন।

তিনি বলেন, গরু দুইটি আমার খামারের। দুই বছর লালন পালন করে বিক্রি করতে আনলাম। এই লাল গরুর চাহিদা হাটে অনেক বেশি। মানুষ সবসময় লাল গরু কিনতে চায়।

অন্যদিকে, গরুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছাগলের দামও। গতবারের তুলনায় ছাগলপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান ক্রেতারা।

নগরের পোস্তাপাড় ছাগলের হাটে ছাগল কিনতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী ছগির আহমদ। তিনি বলেন, গরুর সঙ্গে ছাগলের দামও বেড়েছে।

'১০ কেজি ওজনের একটি ছাগলের দাম হাঁকছে ১২ হাজার টাকা। অথচ গতবছর একই ওজনের ছাগল কিনেছিলাম ৮ হাজার টাকায়,' বলেন তিনি।

চট্টগ্রামের স্থায়ী তিনটি বাজার বসেছে। সাগরিকা গরু বাজার, বিবির হাট গরু বাজার এবং পোস্তার পাড় ছাগলের বাজারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এবার কর্ণফুলী পশু বাজার, সল্টখোলা রেলক্রসিং গরু বাজার এবং পতেঙ্গার বাটার ফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠে অস্থায়ী গরু-ছাগলের বাজার বসানো হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন জানান, আসন্ন কোরবানিতে পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার। এর বিপরীতে বিভিন্ন খামারে ও ব্যক্তি উদ্যোগে কোররানির পশু প্রস্তুত আছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি। ফলে প্রায় ২৯ হাজার ৪৯৯টি পশুর ঘাটতি রয়েছে।

তিনি জানান, স্থানীয় পশুর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক কোরবানির পশু বেপারীরা চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন। এতে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হবে। পশুর সংকট থাকবে না।

তবে গত দুই বছর করোনার কারণে কোরবানির কম হলেও এবার এর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে স্থানীয় খামারিরা মনে করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt to sit for dialogue with political parties from 2:30pm

According to government sources, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus, along with other advisers, will take part in the dialogue from the government's side

6m ago