আটলান্টিকে বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার পর ভালো আছেন ক্রিকেটাররা

ছবি: সংগৃহীত

সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনিক হয়ে ডমিনিকা যাওয়ার পথে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ক্রুজ শিপে আটলান্টিক মহাসাগরে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন। এতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সফর পরিকল্পনা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। আলোচনা-সমালোচনার মাঝে বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছেন, নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো ক্রিকেটাররা ভালো আছেন।

সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার সমুদ্রযাত্রা শেষে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে ডমিনিকায় পা রাখে বাংলাদেশ দল। এখানেই তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মোকাবিলা করবে তারা। আগামীকাল শনিবার খেলা মাঠে গড়ানোর আগে কেবল একদিনের বিরতি। এর মাঝে ক্রিকেটাররা সমুদ্রযাত্রার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা থাকছে।

যাত্রাপথে 'সি সিকনেস' পেয়ে বসেছিল কয়েকজন টাইগার ক্রিকেটারকে। তাদের মাঝে শরিফুল ইসলাম ও নুরুল হাসান সোহান বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডমিনিকায় পৌঁছানোর পর তারাসহ সবাই ভালো আছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন নিজামউদ্দিন, 'নিঃসন্দেহে খুব বাজে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিশেষ করে, কিছু খেলোয়াড়ের জন্য। আমার সঙ্গে গতকাল রাত থেকেই যোগাযোগ আছে ক্রিকেটারদের। তারা ঠিকভাবে পৌঁছেছে। এখন সবাই ভালো আছে। ফিজিওর (বায়জিদুল ইসলাম) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি ঘুম ভালো হয়, তাহলে খেলার আগে কোনো ইস্যু থাকবে না। অনুশীলন করারও সুযোগ পাবে।'

কয়েক দিন আগে সাইক্লোন হয়েছে আটলান্টিকের ওই অংশে। সেকারণে সাগরে ছিল বড় বড় ঢেউ। এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য খারাপ আবহাওয়াকে দায় দিয়েছেন তিনি, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। আবহাওয়া খারাপ না হলে এমনটা হতো না। আপনারা দেখেছেন যে অনেক খেলোয়াড় যাত্রাটা উপভোগ করেছে। আর তারা যখন যাত্রা শুরু করেছিল, তখনও সবাই খুব উৎসাহী ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মাঝ সমুদ্রের যখন মোশন সিকনেস পেয়ে বসে তাদের। যেহেতু এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের ক্রিকেটারদের নেই।'

সেন্ট লুসিয়া থেকে যাত্রা শুরু করা ক্রুজ শিপ দেড় ঘণ্টায় পৌঁছায় মার্টিনিকে। এরপর ছিল ৪০ মিনিটের বিরতি। অসুস্থতা ও ভয় মিলিয়ে ক্রিকেটাররা সেখান থেকে বিমানে করে বাকি পথটা যেতে চেয়েছিলেন। তবে মার্টিনিক দ্বীপ ফ্রান্সের অধীন হওয়ায় এত দ্রুত ভিসা পাওয়া সম্ভব ছিল না। প্রধান নির্বাহী বলেছেন, 'অর্ধেক পথে অর্থাৎ মার্টিনিকে পৌঁছানোর পর ওরা আমাকে ফোন দিয়েছিল। সেখান থেকে বিকল্প উপায়ে ডমিনিকা যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছিল। তখন আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা বলেছে যে মার্টিনিকে অন্য কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। কারণ, মার্টিনিক হলো ফ্রান্সের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে নানা রকমের কাগজপত্রের হিসাবনিকাশ রয়েছে। সেগুলো দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে না।'

বিসিবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সমুদ্রপথে যাত্রার ব্যাখ্যায় তিনি জানিয়েছেন, 'আরেকটা যে প্রশ্ন উঠেছে, বিসিবি কেন ফেরিতে যাত্রার প্রস্তাবটা মেনে নিল? ব্যাপারটা হলো, স্বাগতিক দেশই সফরের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে থাকে। আমরা শুরু থেকেই আমাদের শঙ্কার কথা তাদেরকে জানিয়েছি। তাদের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথাও হয়েছে। তবে সমস্যা যেটা ছিল, খেলোয়াড়-স্টাফ মিলিয়ে যেহেতু দুই দলের সব সদস্যের একসঙ্গে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, সেহেতু বড় একটা চার্টার্ড ফ্লাইটের দরকার ছিল। সেটার ব্যবস্থা তারা করতে পারেনি বা করা সম্ভব ছিল না। করোনাভাইরাসের পরে অনেক বড় চার্টার্ড ফ্লাইটই বন্ধ হয়ে গেছে। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিল যে কোনো সমস্যা হবে না। এভাবে নিয়মিতই লোকজন ফেরিতে যাতায়াত করে। তাছাড়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ও ম্যাচ অফিসিয়ালরাও একই উপায়ে গেছে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে।'

যাত্রাপথে অনেক ক্রিকেটারই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এমন আয়োজন নিয়ে। একে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন নিজামউদ্দিন, 'খেলোয়াড়দের অনেকে তাৎক্ষণিক কিছু প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক। যখন এরকম একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন এ ধরনের প্রতিক্রিয়া আসা স্বাভাবিক। আশা করি, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বিশ্রাম নিলে। আর ফিজিও আমাকে যেটা জানিয়েছে যে কিছু খেলোয়াড়ের সমস্যা হয়েছে আগের রাতে ঘুম ভালো না হওয়ার কারণে। আবার ভরা পেটে থাকলেও সমস্যা হয়। ঔষধও হয়তো ঠিকমতো অনুসরণ করা হয়নি। তবে এগুলো কোনো অজুহাত না। আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য বাজে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।'

Comments