যুক্তরাজ্যকে ১ লাখ রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের অনুরোধ জানালো বাংলাদেশ

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাস
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাস। ছবি: সংগৃহীত

গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১ লাখ রোহিঙ্গাকে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের অনুরোধ জানিয়েছেন।

গতকাল রুয়ান্ডার কিগালিতে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাসকে এ অনুরোধ জানান। কমনওয়েলথের একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় আলাদা করে দুই দেশের নেতা বৈঠক করেন।

মোমেন যুক্তরাজ্যকে সারা বিশ্বে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার দিক দিয়ে নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্রের আখ্যা দিয়ে জানান, যদি দেশটি ১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসন করে, তাহলে তারা আরও উন্নত জীবন পাবে এবং বাংলাদেশেরও অন্যায্য ভার লাঘব হবে।

উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাস রোহিঙ্গাদের মহানুভবতার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং জানান, 'যুক্তরাজ্য এ বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে, তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সবচেয়ে ভালো সমাধান হবে তাদের নিজেদের দেশ মিয়ানমারে নিরাপদে ও টেকসই প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা ট্রাসের কাছে বিস্তারিত জানান এবং তাদেরকে নিজেদের দেশে নিরাপদে ও টেকসই উপায়ে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সরকারের উদাসীনতার কথাও উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষে ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ভার বহন করা আর সম্ভব হচ্ছেন না।

এলিজাবেথ ট্রাস আশ্বস্ত করেন, যুক্তরাজ্য আসিয়ান ও জি৭ জোটের মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে মিলে মিয়ানমারের ওপর এ বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ বছরে যুক্তরাজ্য মিয়ানমারে ২৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং এ সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ডলার। স্বভাবতই, মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য।

বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যের ঐতিহাসিক ও উপযোগী সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানান। এছাড়াও, ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি উচ্চাভিলাষী কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সহায়তা অন্তর্ভুক্ত। 

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন স্টুডেন্ট ও বিজনেস ভিসা দেওয়ার কার্যক্রম আবারও ঢাকা থেকে পরিচালনা অনুরোধ জানান। এতে প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যেতে পারবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ২ দেশের রাজধানীতে বৈশ্বিক নারী শিক্ষা সম্মেলন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নেতাদের সংলাপ ও রোহিঙ্গা সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে একমত হন।

গতকাল রুয়ান্ডার কিগালিতে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ২ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেন
গতকাল রুয়ান্ডার কিগালিতে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ২ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেন। ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যুক্তরাজ্যের করবিহীন জিএসপি সুবিধার মেয়াদকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেন। তিনি, মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তুলে ধরেন, যার মধ্যে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আসা অর্ডার বাতিল হওয়া ও তাদের অনেকের পণ্য বুঝে পেয়েও মূল্য পরিশোধে ব্যর্থতা।

দুই মন্ত্রী একমত হন, আগামীতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা উচিৎ এবং প্রয়োজনে একটি 'মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল' তৈরি করা উচিৎ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন খুব শিগগির বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য এলিজাবেথ ট্রাসকে অনুরোধ জানান। 

এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সায়দা মুনা তাসনিম।

 

Comments

The Daily Star  | English

Grim discovery: Five bodies found on vessel in Meghna, 2 more die later

The incident had occurred on the Meghna river under Chandpur Sadar upazila in an area adjacent to Shariatpur

2h ago