চাঁদা না পেয়ে সড়কে পিলার তুলেছেন আ. লীগ নেতা

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা হালিম পালোয়ানের দাবি এটা কোনো সরকারি রাস্তা না। তার নিজের জায়গা তিনি পিলার তুলে বন্ধ করেছেন। ছবি: স্টার

সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে সড়কের মাঝে ছোট আকারের একাধিক পিলার তুলে প্রায় বছর খানেক যাবৎ রাস্তা বন্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত হালিম পালোয়ান আশুলিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, প্রায় এক বছর আগে কাঠগড়া এলাকার পশ্চিমপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হালিম পালোয়ান  এলাকার বিভিন্ন প্লট মালিকদের তার কাছ থেকে ইট-বালু কেনার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্য দাবি করায় স্থানীয়রা নিজেদের সুবিধামতো অন্য জায়গা থেকে নির্মাণসামগ্রী কিনে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তি বাইরে থেকে আনা নির্মাণসামগ্রীর গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি করেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তারা চাঁদা নিতে অস্বীকৃতি জানালে হালিম পালোয়ান প্রতি প্লট মালিকের কাছে রাস্তা ব্যবহারের জন্য শতাংশ প্রতি এককালীন ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করেন। তাতেও কাজ না হলে তিনি নির্মাণসামগ্রীর ট্রাক চলাচল বন্ধে মহল্লার প্রধান রাস্তার একাধিক পয়েন্টে ছোট ছোট পিলার তুলে দেন।

সম্প্রতি ওই সড়কের বিভিন্ন জায়গায় এমন একাধিক পিলার চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের।

এ ব্যাপারে সেন্টু মিয়া নামের এক প্লট মালিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমি কেনার পর থেকেই চাঁদার জন্য আমাদের ওপর নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন হালিম পালোয়ান। শুরুর দিকে তিনি আমাদের তার কাছ থেকে ইট-বালু কিনতে চাপ দেন। কিন্তু অতিরিক্ত দাম চাওয়ায় আমরা বাইরে থেকে ইট-বালু কিনে বাড়ির কাজ শুরু করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকায় ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে রাস্তা ব্যবহার করার জন্য প্রতি প্লট মালিকের কাছ থেকে শতাংশপ্রতি ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন।'

সেন্টু মিয়া আরও বলেন, '৪০ বছরের পুরোনো রাস্তা এটি। এর আগে সরকারি টাকায় এখানে মাটিও ফেলা হয়েছে। তাহলে তাকে কেন আমরা টাকা দিতে যাব। আমরা এখানে ২৫ থেকে ৩০ জন প্লট মালিক আছি। আমাদের সবার ওপর এক রকম জুলুম করা হচ্ছে।'

সেন্টু মিয়া জানান, এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মামুন মোল্লা নামের স্থানীয় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলাও করেন অভিযুক্ত হালিম পালোয়ান।

সাংবাদিক মামুন মোল্লা এ ব্যাপারে বলেন, 'এই এলাকায় যিনিই বাড়ির কাজ করতে যান, তার কাছেই চাঁদা দাবি করেন হালিম পালোয়ান। তার কাছ থেকেই নির্মাণসামগ্রী কিনতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। এর প্রতিবাদে লেখালেখি শুরু করলে আমার বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা শুরু করেন।'

এমন অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য হালিম পালোয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে আশুলিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন। বলেন, 'যেসব জায়গায় ইটের দেয়াল (পিলার) তোলা হয়েছে সেটা কোনো সরকারি রাস্তা না। আমার জায়গা আমি বন্ধ করেছি।'

আর চাঁদা দাবির প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, 'আমি একজন কৃষক। গরু লালন-পালন করি। ইট-বালুর ব্যবসা আমার নেই। আমি চাঁদা চাইতে যাব কেন?'

এখানকার আরেক ভুক্তভোগী প্লট মালিক হান্নান সরকার জানান, আটকে রাখা রাস্তা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে গত মার্চ মাসে প্লট মালিকদের পক্ষ থেকে আশুলিয়া সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে জমা দেওয়া ওই অভিযোগপত্রের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি ঠিক মনে করতে পারছি না। এমন কোন অভিযোগ আসলে অবশ্যই তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

3h ago