সবাই মিলে কাজ করলে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব: সেনাপ্রধান

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঈনপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বৃহস্পতিবার ত্রাণ বিতরণ করেন। ছবি: আইএসপিআর

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধান সুনামগঞ্জের সুরমা ইউনিয়নের মঈনপুর এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

এসময় তিনি বলেন, বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বন্যা চলে যাওয়ার পরও যতদিন জনগণের প্রয়োজন হবে ততদিন তাদের পাশে থেকে সেনাসদস্যেরা সব সহযোগিতা করবে। বন্যা পরবর্তী বিপর্যস্ত জনজীবনের দুর্ভোগ দূরীকরণের জন্য সরকারের সব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে এবং সেনাবাহিনীও তাদের প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে অধিকতর তৎপর হওয়ার জন্য তিনি সেনা সদস্যদের নির্দেশনা দেন।

আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিচালিত হবে বলে সেনাপ্রধান উপস্থিত সবাইকে নিশ্চয়তা দেন।

এসময় সেনাবাহিনী প্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাইরেক্টর জেনারেল অব মেডিক্যাল সার্ভিস মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।

সর্বস্তরের মানুষকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সেনাপ্রধান।

পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মো. আবু সাঈদ সিদ্দিক, মাষ্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স; মেজর জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ; জিওসি ১৭ পদাতিক ডিভিশন মেজর জেনারেল হামিদুল হক, এনএসডব্লিউসি, পিএসসিসহ সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যেরা সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোণা জেলার মোট ২০টি উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় মোতায়েন রয়েছে। মোতায়েনরত সেনাসদস্যগণ নিরলসভাবে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার ও দুর্গতদের মাঝে খাবার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোণার বন্যাকবলিত এলাকায় ১২১৪৮ জন বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রেরণ করেছে, ১৪৭৫০ জনকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, ২১৯৬৮ জনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, ৫৫১৩৬টি পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণের পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে ৫৪৮২৮ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ বিতরণ করেছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে।

এছাড়াও সেনাসদস্যরা গতকাল থেকে সিলেট জেলার সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মজুদকৃত অর্থ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরে সহযোগিতা করছে। সেনাসদস্যরা সিলেট জেলার বড়ইকান্দি ও কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোকে প্লাবন থেকে রক্ষা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার নিমিত্তে সিলেটের তেলিখালের উপর কাটাগঙ্গা ব্রিজ মেরামত করা হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়ে পানি নিষ্কাশন ও ভূমিধস রোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জেল সদস্যদের এবং কয়েদিদের জন্য শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ইউনিসেফের অনুরোধে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের জন্য রক্ষিত মূল্যবান ভ্যাকসিন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোন কোম্পানির সরঞ্জাম সুরক্ষার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী এবং নিজেদের পাশাপাশি অসামরিক প্রশাসনের জন্য ও ভি-স্যাট স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রেখেছে সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্য সকল ফরমেশন নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এবং যতদিন প্রয়োজন ততদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সেনাপ্রধান বলেন, 'সবাই মিলে কাজ করলে যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব'।

Comments

The Daily Star  | English

Public admin, judiciary reform commissions submit reports to CA

The heads of the commissions submitted the reports to the chief adviser at the State Guest House Jamuna

22m ago