সিলেটে পাহাড় ধস আতঙ্ক

সিলেট এয়ারপোর্ট সড়কের মালনিছড়া চা বাগান এলাকার পাহাড় ধস। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও, শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, কিছু জায়গায় পানি কমেছে। তবে, এর মধ্যেই সিলেট এয়ারপোর্ট সড়কের মালনিছড়া চা বাগান এলাকা ও জৈন্তাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।

সিলেট এয়ারপোর্ট সড়কের মালনিছড়া চা বাগান এলাকায় গতকাল শনিবার পাহাড় ধস হয়েছে।

ওই এলাকার টিলায় ফাটল দেখা দিয়েছে বলে সিলেটের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম জাকির রোববার দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

তিনি বলেন, 'গতকাল শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের আওতাধীন বিমানবন্দর সড়ক লাগোয়া আবাদানি টিলার কয়েকটি স্থানে ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।'

তিনি বলেন, 'বিমানবন্দর সড়কে আবাদানি টিলার কয়েকটি স্থানের মাটি ধসে পড়ে। পরে মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।'

এদিকে সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজের ঐতিহাসিক থ্যাকারের টিলায়ও ধস শুরু হয়েছে। গত শনিবার থেকে টিলার মাটি ধসে পড়া শুরু হয়।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সালেহ আহমদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই টিলাটি শুধু কলেজের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তাই টিলাটি রক্ষা খুবই জরুরি। আপাতত বাঁশ পুতে টিলার ধস ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। টিলা ধস ঠেকানো না গেলে অধ্যক্ষের বাংলোও ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে।'

এছাড়া, গত সোমবার জৈন্তাপুরে টিলাধসে শিশুসহ এক পরিবারের ৪ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় আহত হন আরও ৫ জন।

জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগির আহমদ এ তথ্য জানান।

উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্ব সাতজনি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জালালাবাদ সেনানিবাস ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম লিডার জগদীশ দাস ডেইলি স্টারকে জানান, ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা সেখানে যান। তার আগেই গ্রামবাসীরা ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ওই গ্রামের অনেক বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে না নিলে আরও প্রাণহানি ঘটতে পারে।

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায়ই ছোটখাটো ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটছে। কয়েক বছর ধরে নির্বিচারে পাহাড় কাটায় টিলা ধসের ঘটনা বেড়েছে।'

'পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারলে এমন ধসের ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়,' বলেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, 'সিলেটে একদিকে বন্যা অন্যদিকে টিলা ধসের আতঙ্ক। সিলেট এয়ারপোর্ট সড়কের মালনিছড়া চা বাগান এলাকায় জৈন্তাপুরসহ টিলা শ্রেণীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। এই বৃষ্টি-বন্যার ফাঁকতালে টিলা কাটা চলছে। ছড়া ও নদীর তলদেশে টিলা কাটা মাটি জমছে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছে এই অপকর্মের প্রতিকার নেই।'

সেভ দ্যা ন্যাচার অফ বাংলাদেশ সিলেট মহানগরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ গোয়ালা দেব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাইটেক পার্কের জন্য টিলা কেটে গ্যাসের পাইপ নেওয়ার  কারণে ফাটল ধরেছে। ভারি বর্ষণের কারণে মালনীছড়া চা বাগানের এয়ারপোর্ট রোডের পাশের টিলা ধসে পরে। রাস্তার পাশে বড় বড় গাছ গুলো কেটে ফেলা এর অন্যতম কারণ।'

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance jumps 32% in May

Migrants sent home $2.97 billion last month

20m ago