১০ লাখ টাকা জরিমানার আইন: যা বললেন প্রেস কাউন্সিলের সাংবাদিক প্রতিনিধিরা

সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রেস কাউন্সিল৷ মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিলে তা সংসদে উঠবে৷ 

এ বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম ডয়চে ভেলের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন তিনি এই আইন চান এবং সাংবাদিক প্রতিনিধি হিসেবে যারা প্রেস কাউন্সিলের সদস্য তারাও এই সংশোধনী সমর্থন করেন। এই সংশোধনী প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করবে বলেও মনে করেন তিনি৷

প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ৪ নম্বর ধারায় এর গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে বলা আছে প্রেস কাউন্সিল একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এই ধারার ৩ (এ) নম্বর উপধারায় সাংবাদিক সমিতি কর্তৃক মনোনীত ৩ জন কর্মরত সাংবাদিক এবং ৩ (বি) নম্বর উপধারায় সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতি কর্তৃক মনোনীত ৩ জন সম্পাদক রাখার কথা বলা হয়েছে।

সাংবাদিক প্রতিনিধিরা কেন এমন আইন সমর্থন করেন, তা জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে বর্তমান কমিটিতে মনোনীত ৩ জন সম্পাদক এবং ২ জন কর্মরত সাংবাদিকের সঙ্গে। তারা হলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, প্রকাশিতব্য প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি,  এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. উৎপল কুমার সরকার

তারা প্রত্যেকে বলছেন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে সে সম্পর্কে বর্তমান কমিটির সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। যদিও বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, তারা সবাই এই আইনের পক্ষে এবং তারাও চান এমন একটি আইন হোক।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন কোনো আইন হচ্ছে কি না আমি জানি না। আমি জানি না কী সুপারিশ গেছে। সেটি না দেখে বলা যাবে না। কিন্তু প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধির একটা আলোচনা চলছে। আমাদের কমিটিতে এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ৫ বছর আগে হয়েছে। ৫ বছর ধরে এটি সরকারের কাছে পড়ে আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার যতটুকু ধারণা এটি কোনো সাংবাদিককে আহত করার জন্য না। এটি হচ্ছে মূলত প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার জন্য। প্রেস কাউন্সিলের ১৯৭৪ সালের আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করা যায়। সেই ভর্ৎসনা ও তিরস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি ছিল। সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেস কাউন্সিলকে আরও একটু ক্ষমতা দেওয়া যে, যেসব পত্রিকা সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি কাজ করবে তারা যদি দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিবাদ ছাপে তবে তারা মাফ পেয়ে যাবে। আর তারা যদি সেই অপরাধ করতেই থাকে তবে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হবে।'

তার ভাষ্য হলো, 'সাংবাদিক হিসেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রেস কাউন্সিলের মামলা হয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নয়। জরিমানার বিধান থাকলেও সেটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যাবে ব্যক্তি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নয়।'

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, 'এটি আগের কমিটিগুলোতে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হয়েছে। প্রেস কাউন্সিল মূলত দন্তহীন বাঘের মতো। কেউ অপরাধী প্রমাণিত হলে তাদের তিরস্কার করা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা নেই। কাজেই প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার জন্য এই আইন সংশোধন করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।'

সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিষয়টি সমর্থন করে তিনি বলেন, 'এই আইন অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে সহায়তা করবে। যারা বস্তুনিষ্টভাবে সাংবাদিকতা করবে তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। এই জরিমানা প্রেস কাউন্সিল করবে। তার আগে সবগুলো বিষয় ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। কেউ অপরাধ করলে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে বিষয়টি এমন নয়। অপরাধের মাত্রাভেদে জরিমানা নির্ধারিত হবে। সর্বোচ্চ জরিমানা হবে ১০ লাখ টাকা। এটি কোনো ক্ষেত্রে কমও হতে পারে। আর কেউ অন্যায় করলে অবশ্যই তার জরিমানা করা উচিত বলে আমি মনে করি।'

সাইফুল আলম বলেন, 'প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান কমিটিতে এই আইন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের বর্তমান কমিটির ৫টি মিটিং হয়েছে। কোনো মিটিংয়েই এই আইনের সংশোধনীর বিষয়ে আলোচনা হয়নি। ৫ বছর আগের কমিটিতে যারা ছিলেন তাদের একটা প্রস্তাবনা ছিল, প্রেস কাউন্সিলের বিচারিক ক্ষমতা বাড়ানো যায় কি না। সেখানে আইনের সংশোধনীর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।'

সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করবেন এটি সব সময়ের দাবি মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এই দাবি থেকে আমরা কখনো সরে যাইনি। স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতার পরিপন্থি যতগুলো প্রতিবন্ধকতা আছে আমরা তার বিরুদ্ধে। এত আইন দিয়ে সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা করাটাও ঠিক না। সাংবাদিকরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই সাংবাদিকতা করেন। বাংলাদেশে এত বেশি গণমাধ্যমের প্রয়োজন আছে কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যারা এই লাইসেন্সগুলো দিচ্ছে তারা কি যাচাই করে দেখে, তাদের গণমাধ্যম পরিচালনা করার মতো সক্ষমতা আছে কি না? ওই জায়গায় না গিয়ে যদি বন্যার পানির মতো ছেড়ে দেয় তাহলে তো কিছু আগাছা আসবেই। সেটার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার? সাংবাদিকদের না অন্য কারও?'

'ইতোমধ্যে অনেক আইন আছে। আবার নতুন করে আইন করে সাংবাদিকতাকে বেড়াজালের মধ্যে ফেলে দেওয়ার পক্ষে আমি না। আমরা দায়িত্ববোধ নিয়েই বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করি।'

প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে বর্তমান কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মিটিংয়ের আমন্ত্রণ পাইনি।'

ড. উৎপল কুমার সরকার বলেন, 'আমাদের কমিটিতে এই আইনের সংশোধনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এই আইন হতে পারে না। আমরা এর পক্ষে না এবং কোনোভাবেই এটিকে সমর্থন করি না। সাংবাদিকদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করবে এটা হতে পারে না। তবে কোনো সাংবাদিক অপরাধ করলে লঘু শাস্তির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

5h ago