নিত্যপণ্য মূল্যে নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও বেশিরভাগ মানুষের আয় সে অনুযায়ী বাড়েনি। শুধু ভোজ্যতেল ও চালই নয়, প্রতিদিন রান্নাঘরে যেসব উপকরণ প্রয়োজন হয়, তার প্রায় সবকিছুরই দাম বেড়েছে।

গতকাল বুধবার ঢাকার বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, ডাল, আলু, আটা, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে আরও বেড়েছে।

বর্তমানে রান্নার জন্য ব্যবহৃত গ্যাসও আগের চেয়ে ব্যয়বহুল। বাধ্য হয়ে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষকে আরও মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যেও দেখা যাচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়তি।

খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম কেজিতে ৭৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় কমপক্ষে ৫ টাকা বেশি। মোটা চালের দাম কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সজীব মিয়া বলেন, ১ কেজি আলুর দাম এখন ৩০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ২৫ টাকার মতো ছিল।

মাঝারি আকারের লাল মসুর ডালের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে এবং ছোট আকারের ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আটার দাম ৪৮ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগের চেয়ে কমপক্ষে ৬ টাকা বেশি। ব্র্যান্ডেড আটার দাম ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৫৭ টাকা হয়েছে।

রাজধানীর তেজতুরি বাজারের একটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী তালেব শেখের পরিবারে ৪ সদস্য। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

'আগে দিনে ১০০ টাকা খরচ করলেই হয়ে যেত। এখন ২০০ টাকাতেও হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন শুধু ভাত, ডিম, সবজি ও ডাল খাই,' যোগ করেন তিনি।

তালেব জানান, 'আমার ছেলে ও মেয়ে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলে, তারা মাংস খেতে চায় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাছ বা মাংস কেনার মতো টাকা আমার নেই।'

হতাশ তালেব আরও বলেন, 'হয়তো সন্তানদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে।'

তবে, তিনি যা জানতেন না তা হলো, পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিলেই যে লাভ হবে সেই বিষয়টি নিশ্চিত না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে গ্রামাঞ্চলে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

এতে আরও বলা হয়, মার্চে খাদ্যপণ্যের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যৌথ উদ্যোগে তৈরি মাল্টিসেক্টরাল গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, মহামারির সময় ৩ কোটিরও বেশি মানুষ আবারও দরিদ্র হয়ে পড়েছেন।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ মহামারির প্রকোপ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় এই সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে সম্প্রতি নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশে ২১ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।

তালেবের মতো মানুষের জন্য আগামীতে আরও কঠিন সময় আসতে পারে। তাদের জন্য অন্ধকার সুরঙ্গের শেষে এখনও কোনো কোনো আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা আশঙ্কা করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।

রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কাওরান বাজারের পাইকারি দোকানদার মুক্তা রাইস এজেন্সির মালিক শাহজাহান তালুকদার বলেন, 'আমি অনেক বছর ধরে চালের ব্যবসা করছি। ভরা মৌসুমে কখনো চালের দাম বাড়তে দেখিনি। এর আগে ভরা মৌসুমে সব সময় দাম কমেছে, কিন্তু এবার তার উল্টো। দাম বেড়েই চলছে।'

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে এবং এর প্রভাব সব খাতেই পড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের অনেক চাপের মুখে ফেলেছে। প্রায় সব কিছুরই দাম বেড়েছে। নতুন করে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলছে, এটা যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

'বাজারে তদারকিটা আরও জোরদার করতে হবে। তা না হলে সুযোগ পেলেই কিছু ব্যবসায়ী কোনো কারণ ছাড়াই পণ্যের দাম বাড়াবেন। তখন সেটা আর নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না,' যোগ করেন হোসাইন।

Comments

The Daily Star  | English

CA accords reception to SAFF winning women's team, asks for written demands

During a reception ceremony at the State Guest House Jamuna in the morning today, Chief Adviser Professor Muhammad Yunus asked the players of the Bangladesh team that won the 2024 SAFF Women’s Championship in Nepal last week to submit a list of their demands in writing, assuring them of working on those in the coming days.

1h ago