৯০ শতাংশ রুশ তেল আমদানি নিষিদ্ধ করবে ইইউ

ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল
ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল । ফাইল ছবি: রয়টার্স

অনেক আলোচনার পর অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা জোটভুক্ত দেশগুলোয় রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেলের ৯০ শতাংশের ওপর নিষেধাজ্ঞায় সম্মত হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, গতকাল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউক্রেনের জন্য নতুন অর্থ সহায়তার প্যাকেজ সংক্রান্ত সম্মেলনে ইইউ নেতারা এ সিদ্ধান্ত নেন।

আপাতত শুধু সমুদ্রপথে আসা তেলকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা তেলের ওপর কোনো বিধিনিষেধ এখনই আসছে না।

এতে আরও বলা হয়, হাঙ্গেরির দাবি মানতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারণ, দেশটির সম্মতি ছাড়া ইইউ এ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না।

ইইউ নির্বাহী শাখার প্রধান উরসুলা ফন ডার লেয়েন গণমাধ্যমকে জানান, এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ফলে 'চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইইউ সদস্য দেশগুলোয় রাশিয়া থেকে আসা তেলের ৯০ শতাংশ কমে যাবে।'

ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল গণমাধ্যমকে জানান, এই মুহূর্তে রাশিয়া থেকে আমদানি হওয়া তেলের দুই-তৃতীয়াংশ এই চুক্তির আওতায় পড়েছে।

তিনি আরও জানান, ইইউ নেতারা ইউক্রেনের অর্থনীতির পুনর্গঠনে ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে একমত হয়েছেন। তবে অনুদান না কি ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে তা এখনো জানানো হয়নি।

ইইউর সিদ্ধান্তের পর ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোয় রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ টুইটারে বলেন, 'তিনি (উরসুলা) ঠিকই বলেছেন, রাশিয়া অন্য আমদানিকারক খুঁজে নেবে।'

বিধিনিষেধের নতুন প্যাকেজের আওতায় নতুন করে কয়েকজন রুশ নাগরিকের সম্পত্তি জব্দ ও তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও, রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক এসবার ব্যাংককে সুইফট ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এর আগে ইইউ বেশ কয়েকটি ছোট থেকে মাঝারি আকারের রুশ ব্যাংককে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের এই বৈশ্বিক ব্যবস্থা থেকে নিষিদ্ধ করেছিল।

রাশিয়ার ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমকে ইইউতে তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার থেকেও বিরত রাখা হবে।

'আমরা চাই রাশিয়ার যুদ্ধবাজদের থামাতে,' যোগ করেন মিশেল। তিনি নতুন নিষেধাজ্ঞা চুক্তিটিকে 'অসামান্য অর্জন' বলে অভিহিত করেন।

মিশেল জানান, নতুন বিধিনিষেধগুলোর জন্য ২৭ সদস্য দেশের সবার সম্মতির প্রয়োজন ছিল। এটি আগামী বুধবারের মধ্যে আইনি অনুমোদন পাবে বলেও তিনি জানান।

রাশিয়ার তেল ও গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
রাশিয়ার তেল ও গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ইতোমধ্যে দেশটির বিরুদ্ধে ৫ দফায় বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইইউ।

প্রায় ১ হাজার রুশকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও অন্যান্য ক্রেমলিনপন্থি ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যাংক ও কয়লা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টজনরা।

তবে ষষ্ঠ প্যাকেজ গত ৪ মে ঘোষণা দেওয়া হলেও এতদিন পর্যন্ত তেল সরবরাহ নিয়ে মতবিরোধের কারণে তা চূড়ান্ত হয়নি।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেছেন যে তিনি তখনই নতুন বিধিনিষেধে সমর্থন জানাবেন, যখন তার দেশের তেল সরবরাহ নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

হাঙ্গেরির ৬০ শতাংশ তেলের চাহিদা মেটায় রাশিয়া। এটি মূলত সোভিয়েত আমলের দ্রাঝবা পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত অবস্থায় সেখানে আসে।

এ মুহূর্তে ইইউ তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের সামগ্রিক চাহিদার যথাক্রমে ৪০ ও ২৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে মেটায়। এ কারণে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি স্পর্শকাতর ও জটিল হয়ে পড়ে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেশ কয়েকবার রুশ জ্বালানির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার ইইউ নেতারা সম্মেলনে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

Comments