মুশফিকের গড় আগামী টেস্টগুলোতে ৪৫ থাকবে, চাওয়া ফাহিমের
চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছিলেন, ভিন্ন চেহারার মুশফিকুর রহিমকে দেখতে পাওয়া যাবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ঘটেছেও তা-ই। ধৈর্যের অনুপম নিদর্শন স্থাপন করে দারুণ ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন ফাহিমের প্রিয় শিষ্যদের অন্যতম মুশফিক।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে ছন্দহীনতায় থাকা মুশফিক বুধবার ম্যাচের চতুর্থ দিনে করেছেন সেঞ্চুরি। এর আগেই বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্ট পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শের কীর্তি গড়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তার ইনিংস থেমেছে ১০৫ রানে। ৪ চারের সাহায্যে ২৮২ বল মোকাবিলা করে তিনি আউট হয়েছেন লঙ্কান স্পিনার লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার বলে বোল্ড হয়ে।
এই সিরিজ শুরুর আগে গুরু নাজমুলের কাছে নিজের ব্যাটিংয়ের ঘাটতি সারাতে গিয়েছিলেন মুশফিক। তাতে যে সুফল মিলেছে, সেটার প্রমাণ পেতে দেরি হয়নি। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঝুঁকি না নিয়ে যেভাবে মুশফিক খেলে গেছেন, তা মুগ্ধ করেছে ফাহিমকে।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষে মুশফিকের গড় ৩৬.৭৬। ৮১তম টেস্ট খেলতে নামা অভিজ্ঞ ডানহাতি ব্যাটারের রান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৩৭। তবে ১৭ বছর ধরে এই সংস্করণে খেলা তার মানের কারও জন্য এমন গড় কিছুটা হলেও হতাশা জাগাতে বাধ্য।
দ্য ডেইলি স্টারের কাছে ফাহিম জানিয়েছেন মুশফিকের কাছে তার ভবিষ্যতের চাওয়া, 'এখন থেকে টেস্ট ক্রিকেটে ও যা-ই টেস্ট খেলুক -- ১০টা খেলুক, ৫০টা খেলুক, ৩০টা খেলুক -- আমার আশা থাকবে, ওর ব্যাটিং গড় সামনের ম্যাচগুলোতে অন্তত ৪৫ থাকে। ও এখন বুঝে গেছে যে কোন জায়গায় ওর ঘাটতি ছিল। ওগুলো ও দূর করে ফেলবে। তখন ও ব্যাটিং উপভোগ করতে পারবে। ও মূলত একজন টেস্ট ক্রিকেটার। এখন যেহেতু ও সবকিছু আয়ত্ব করেছে, ও ভালো খেলবে।'
মুশফিকের স্কিলের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ধরা পড়ছে তার চোখে, 'ওর এখন স্কিল উন্নত হয়েছে। স্কিলে কিছু জায়গায় ওর সমস্যা ছিল। কতগুলো জিনিস খেয়াল করলে বোঝা যাবে। কভার অঞ্চলে অনেক রান করেছে ও। যেটা সাধারণত ও করে না। ওর প্রায় কোনো বলই প্যাডে লাগেনি। সব মাঝ ব্যাটে খেলেছে। ও খুব আরামে খেলেছে এবং টেকনিক্যালি ও ভালো করছে।'
শিষ্যের টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরির ইনিংসে কোনো নড়বড়ে ভাব দেখেননি ফাহিম, 'সাম্প্রতিক অতীতে ও যখন ব্যাটিং করত, আমার মনে হতো, এই বুঝি আউট হয়ে গেল। কিন্তু এই ইনিংস দেখে কখনোই আমার মনে হয়নি যে ও আউট হবে। আউট তো একটা সময় হতেই পারে ব্যাটসম্যান। কিন্তু ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দেখে বোঝা তো যায় যে তাকে আউট করা যাবে না। তো এই জায়গায় বড় পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। ও খুব তাড়াতাড়ি নিজের সমস্যা ধরে ফেলেছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
বাংলাদেশ দলের মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকের কাছে ভালো ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রত্যাশা তার, 'মিডল অর্ডারে এরকম একজন ব্যাটসম্যান থাকা আমাদের জন্য বিশাল ব্যাপার। ধারাবাহিকভাবে যদি এরকম খেলতে পারে, সেটা একটা বিশাল ভরসার জায়গা হবে। ওর যা ফিটনেস, তিন-চার বছর তো খেলতেই পারবে। ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সর্বোচ্চ উন্নতি করেছে। অবশ্যই ওর টেকনিক্যাল পরিবর্তন এসেছে, অনেক কিছুতেই।'
ব্যাট হাতে নিয়ন্ত্রণে থাকায় মুশফিক রক্ষণাত্মক ঢঙেও সাবলীল ছিলেন বলে মত ফাহিমের, 'ও খুব রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করেছে। এ ধরনের ব্যাটিং করা খুব কঠিন। ও এত আত্মবিশ্বাসী এখন ডিফেন্স নিয়ে, কোনো উল্টাপাল্টা শট খেলেনি। কারণ, ও জানে যে খেলাটা ওর নিয়ন্ত্রণে আছে। নিয়ন্ত্রণে যখন থাকে না, তখনই ব্যাটসম্যান উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। উল্টাপাল্টা করে তখন। ও জানে, ওকে কেউ আউট করতে পারবে না। তাই সে যতক্ষণ ইচ্ছা, ততক্ষণ খেলতে পারবে। তারপরও কিছু ব্যাপার তো থাকে। কিন্তু ও এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।'
সাদা পোশাকে পাঁচ হাজার রানকে অনেক বড় অর্জন উল্লেখ করার পাশাপাশি আফসোসও লুকাননি তিনি, 'বিরাট মাইলফলক, সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। টেস্ট ক্রিকেটে রান করা মানে আসল ক্রিকেটে রান করা। মুশফিক আরও অনেক রান করতে পারত। মাঝে মাঝে আমরা দেখেছি যে ও লম্বা সময়ের জন্য বাজে ফর্মের মধ্য দিয়ে গেছে।'
Comments