নাটেশ্বরে পঞ্চম অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ আবিষ্কার
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে অষ্টকোণাকৃতির আরেকটি স্তূপ আবিষ্কার হয়েছে। এখানে এর আগে ৪টি স্তূপ আবিষ্কার হয়েছে।
খননকারীরা বলছেন, নাটেশ্বরে আরও ৩টি অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ আবিষ্কার হওয়ার কথা। প্রতিটি স্তূপ বৌদ্ধ ধর্মের মূল অষ্টাঙ্গিক মার্গ দর্শনকে নির্দেশ করে।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রায় ৫ মাসের খনন শেষে এ স্তূপটি আবিষ্কৃত হয়েছে।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেলিনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পঞ্চম অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের দেয়ালের গাঁথুনি খুবই মসৃণ। অনেকটা আধুনিক সিরামিক ইটের গাঁথুনির মতো। আবিষ্কৃত এ অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের ধর্মচক্রটিতে ৮টি স্পোক রয়েছে যা বৌদ্ধধর্মের প্রতীকী অর্থে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে থাকে। নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত অষ্টকোণাকৃতির ৫ম স্তূপে ৮টি স্পোকযুক্ত ধর্মচক্র বৌদ্ধধর্মের মূল অষ্টাঙ্গিক মার্গ দর্শনকে দ্বিগুণ করে প্রতিফলিত করছে। বৌদ্ধধর্মে কোনো একক পূজনীয় হিসেবে ধর্মচক্র প্রাচীনকাল থেকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। ৮ স্পোক বিশিষ্ট ধর্মচক্রের ওপর হাজার বছরের প্রাচীন হলঘর-মণ্ডপসহ অষ্টকোণাকৃতির স্তূপের উপস্থিতি এর আগে উপমহাদেশের কোথাও পাওয়া যায়নি। নাটেশ্বর দেউলে আবিষ্কৃত কেন্দ্রীয় অষ্টকোণাকৃতি মন্দির, বর্গাকৃতির স্তূপ, একাধিক অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, স্তূপের স্মারক কক্ষে বর্গাকার, অষ্টকোণ ও গোলাকার প্রতীকী স্থাপত্য, ৮ স্পোকযুক্ত ধর্মচক্র সবই বৌদ্ধ ধর্মের মূল মন্ত্রের প্রতীকী রূপ।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননকারী সংগঠন ঐতিহ্য অন্বেষণ-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের সঙ্গে ধর্মচক্র পাওয়া গেছে। বৌদ্ধ ধর্মের পূজনীয় বস্তুগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এবারের আবিষ্কৃত স্তূপটি বৌদ্ধধর্মের মূল অষ্টাঙ্গিক মার্গ দর্শনকে প্রতিফলিত করছে। অষ্টাঙ্গিক মার্গ হলো- সৎদৃষ্টি, সৎবাক্য, সৎকর্ম, সৎজীবিকা, সৎচিন্তা, সঠিক চৈতন্য, সৎধ্যান অনুশীলন।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্রী রতন চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, এ অঞ্চলটি মুন্সিগঞ্জের প্রত্নতাত্ত্বিক বিকাশে ভূমিকা পালন করছে। দেশি ও বিদেশি পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলটি প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে অনেক বেশি বিকশিত হবে।
উল্লেখ্য, টংগিবাড়ীর নাটেশ্বর গ্রামে ২০১৩ সাল থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চলছে।
Comments