সেই লেজের ব্যাটাররা ভোগান্তি বাড়ালেন টাইগারদের
মূলধারার ব্যাটারদের ফিরিয়ে লেজের ব্যাটারদের কাছে ভোগান্তির শিকার হওয়া টাইগারদের জন্য নতুন কোনো চিত্র নয়। বহু ম্যাচেই লেজের ব্যাটারদের লড়াইয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। এদিনও সেই একই গল্প। তিনশ রানের আগেই প্রোটিয়াদের লেজ বের করে এনেছিল টাইগাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
টাইগারদের লক্ষ্যটা ছিল ৩২০ রানের মধ্যেই প্রোটিয়াদের আটকে রাখা। আগের দিন টাইগার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এমন প্রত্যাশাই করেছিলেন। সে সুযোগটাও ছিল। কিন্তু শেষ দিকে লেজের ব্যাটারদের সেভাবে চেপে ধরতে পারলেন না টাইগাররা। সাইমন হার্মার প্রতিরোধ গড়ে টাইগারদের অস্বস্তিতে ফেলেন। তাকে সঙ্গ দেন লিজাড উইলিয়ামস ও ডুয়াইন অলিভার।
নবম উইকেট জুটিতে উইলিয়ামসের সঙ্গে ৩৪ এবং দশম উইকেটে অলিভারের সঙ্গে ৩৫ রানের জুটি গড়েন হার্মার। শেষ দুই উইকেটে ১৩৭ বল মোকাবেলা করেন তারা। তাতেই বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই সর্বনিম্ন রান দক্ষিণ আফ্রিকার। এর আগে দেশের মাঠে তারা দুইবার অলআউট হয়েছিল। তখনও করেছিল ৪২৯ ও ৪৪১ রান। এবার তাদের অপেক্ষাকৃত কম রানে আটকে দেওয়ার কৃতিত্ব সৈয়দ খালেদ আহমেদের। একাই পেয়েছেন ৪ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি পেস বোলারদের সেরা রেকর্ডও এটি। অথচ এর আগের তিন টেস্টে পেয়েছেন কেবল ১টি উইকেট। এদিন শরিফুল ইসলাম ফিট থাকলে একাদশে জায়গাই হতো না তার। মিরাজও পেয়েছেন ৩ উইকেট।
মূলত বাংলাদেশের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান হার্মার। তাকে অবশ্য থামানো যায়নি। অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন। খেলেছেন ৩৮ রানের ইনিংস। ৭৩ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি।
দুটি রিভিউতে এদিন বাংলাদেশ সফল হয়নি আম্পায়ার্স কলের কারণে। অন্যথায় স্বাগতিকদের আটকানো যেত আরও আগেই। তবে শেষ বেলা এসে ভাগ্য সঙ্গে থেকেছে টাইগারদের। শেষ ব্যাটার অলিভার আউট হয়েছেন ওই আম্পায়ার্স কলের কারণেই। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন। স্বাগতিকদের রিভিউতে দেখা যায় কোনো মতে লেগ স্টাম্প ছুঁয়েছে বল। ১২ রানে বিদায় নেন অলিভার। অলআউট হয় স্বাগতিকরা।
অথচ প্রথম সেশনে চার উইকেট তুলে প্রোটিয়াদের গুটিয়ে দেওয়ার পথ টা পরিষ্কার করে রেখেছিল বাংলাদেশ। বিরতির পর কিছুটা হাত খুলেই খেলতে থাকে স্বাগতিকরা। ৩৪ রানের জুটির পর উইলিয়ামসকে ফেরান খালেদ। তার কিছুটা বাড়তি বাউন্সের বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় গ্যালিতে। এবার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আরও একটি দারুণ ক্যাচ লুফে নেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৩২ বলে ২টি চারের সাহায্যে ১২ রান করেন উইলিয়ামস।
খালেদের তোপেই অবশ্য দিনের শুরুটা দারুণ করে বাংলাদেশ। যদিও প্রথমে তাকে অবশ্য সাবলীলভাবেই খেলছিলেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার বাভুমা ও কাইল ভেরেইনা। নতুন বল নেওয়ার পরও খেলেছেন ভালো। খালেদের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান। পঞ্চম বলে আরও একটি। তাতে লম্বা হচ্ছিল পঞ্চম উইকেট জুটিও।
পরের ওভারে ফিরে এ জুটি ভাঙেন খালেদ। কাইল ভেরেইনাকে ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। তার গুড লেংথে রাখা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়েছিলেন ভেরেইনা। ভেতরে ঢোকা বল তার রক্ষণ ফাঁকি দিয়ে লাগে প্যাডে। সঙ্গেসঙ্গেই আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। যদিও ভেরেইনা রিভিউ নিয়েছিলেন। তবে লাভ হয়নি। উল্টো একটি রিভিউ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮১ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ২৮ রান করেন ভেরেইনা। ভাঙে ৬৫ রানের জুটি।
পরের বলে ফের আঘাত হানেন খালেদ। সদ্যই মাঠে নামা ভিয়ান মুল্ডারকে গ্যালিতে ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। তবে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। অফ স্টাম্পের বাইরে রাখা বলটি চাইলে ছেড়ে দিতে পারতেন মুল্ডার। তবে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন। বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় গ্যালিতে।
টানা দুই বলে উইকেট তুলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন খালেদ। কিন্তু হ্যাটট্রিক বলটি খুব ভালো করতে পারেননি তিনি। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে রাখায় সহজেই ছেড়ে দেন নতুন ব্যাটার কেশভ মহারাজ।
পরের ওভারে প্রোটিয়াদের আরও চাপে ফেলতে পারতো টাইগাররা। ভাগ্যটা সঙ্গে ছিল না তাসকিন আহমেদের। তার বলে প্রায় এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েছিলেন সেট ব্যাটার বাভুমা। ভেতরে ঢোকা বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে লাগে পেছনের পায়ে। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। বল লেগ স্টাম্পের বাইরের অংশে লাগায় আম্পায়ার্স কলে এ যাত্রা বেচে যান প্রোটিয়াদের সীমিত ওভারের অধিনায়ক।
এরপর আরও বেশি সতর্ক হয়ে যান বাভুমা। দেখে শুনেই এগিয়ে যেতে থাকেন। মহারাজও তাকে দারুণ সঙ্গ দেন। তবে বাভুমার প্রতিরোধ ভাঙতে পারতো দলীয় ২৬৭ রানে। ইবাদত হোসেনের অফ স্টাম্পের বাইরে রাখা বল বাভুমার ব্যাট ছুঁয়ে গিয়েছিল স্লিপে। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে ক্যাচ তালুবন্দি করার চেষ্টা করলেও সফল হননি ইয়াসির আলি রাব্বি। ৭৭ রানে জীবন পান বাভুমা।
জীবন পেয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন বাভুমা। খেলছিলেনও দারুণ। কিন্তু হঠাৎই মিরাজের ঘূর্ণিতে ধরা খান এ ব্যাটার। অবশ্য বলটি বেশ নিচুও হয়েছিল। পেছনে সরে শেষ মুহূর্তে ডিফেন্স করার চেষ্টা চালান। তবে আগেই বল আঘাত হানে স্টাম্পে। সরাসরি বোল্ড হয়ে মাত্র ৭ রানের জন্য মিস করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১৯০ বলে করেন ৯৩ রান। ১২টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। ভাঙে ৫৩ রানের জুটি।
মিরাজের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে আরেক সেট ব্যাটার মহারাজকে পরের ওভারের প্রথম বলেই ফেরান ইবাদত হোসেন। তার ফুল লেংথ বলে ব্যাট চালাতে একটু দেরি করে ফেলেন মহারাজ। বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ৪০ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ১৯ রান করেন মহারাজ।
নিজের তৃতীয় উইকেটটা প্রায় পেয়েছিলেন ইবাদত। তার লিজাড উইলিয়ামসের বিপক্ষে তার এলবিডাব্লিউর আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন উইলিয়ামস। সেখানে প্রথম দফায় সব ছিল ইবাদতের পক্ষে। তবে পরে ফের যাচাই করে দেখা যায় বল পড়েছিল আউটসাইড লেগে। ফলে বেঁচে যান উইলিয়ামস।
Comments