শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটার ইকবালের ৩ বেলা খাবার জোটে না

বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইকবাল হোসেন দেশে-বিদেশে বহু ম্যাচ খেলেছেন। খেলার পাশাপাশি তিনি একটি রেস্টুরেন্টেও কাজ করতেন। কোভিড-১৯ মহামারিতে কাজ হারিয়ে এখন তার ৩ বেলা খাবারও জুটছে না।
পদক হাতে ইকবাল হোসেন। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী/স্টার

বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইকবাল হোসেন দেশে-বিদেশে বহু ম্যাচ খেলেছেন। খেলার পাশাপাশি তিনি একটি রেস্টুরেন্টেও কাজ করতেন। কোভিড-১৯ মহামারিতে কাজ হারিয়ে এখন তার ৩ বেলা খাবারও জুটছে না।

ইকবালের (২৯) বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার মধ্যকালিকাবাড়ী গ্রামে। বাড়ি বলতে ৫ শতক জমিতে কাঠ ও টিনের একটি জরাজীর্ণ ঘর ছাড়া কিছু নেই। তার ছোট ভাইও প্রতিবন্ধী। বাবা মারা গেছেন ২০০২ সালে। তাদেরকে এখন নিদারুণ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, দেড় বছর বয়সে ইকবাল যখন হাঁটতে শিখছিল তখন তার জ্বর হয়। জ্বর সেরে গেলেও তার বাম পা সরু হয়ে শক্তি কমে যায়। তবু থেমে থাকেনি ইকবাল। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে না পারলেও বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামে ক্রিকেট মাঠে সে ছিল নিয়মিত মুখ।

দুর্দশা ঘোচাতে খুলনায় একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নিয়েছিলেন ইকবাল। এর মধ্যে ২০১৪ সালে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে সুযোগ পান।

বাড়িতে জীর্ণ ঘরের সামনে ইকবাল। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী/স্টার

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায় প্রতিবন্ধীদের টুর্নামেন্টগুলোও। এখন সরকারি সহায়তার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে আবেদন করেছেন ইকবাল।

ইকবাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও ভাই-বোনদের খাওয়ানোর জন্য আমাকে হোটেলে কাজ শুরু করতে হয়। পায়ের সমস্যার কারণে আমাকে অন্যদের তুলনায় কম বেতন দেওয়া হতো। সব সহ্য করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়ের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখি। প্রায় ৫ হাজার জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দলে সুযোগ পেয়েছি।'

'এরপর থেকে আমি আন্তর্জাতিক কমিটি অফ রেড ক্রস (আইসিআরসি) এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের হয়ে দেশে-বিদেশে একাধিক সিরিজ খেলেছি। লিগেও খেলেছি। আমাদের দল পরোক্ষভাবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তবে আমরা কোনো বেতন-ভাতা বা সুবিধা পাই না।'

ইকবাল আরও বলেন, 'আমরা ৬ ভাই বোন। ৪ বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। আমাদের বাড়ি মাত্র ৫ শতক জমিতে। করোনা শুরু হওয়ার পর রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়। আমার আয়ও বন্ধ হয়। সিডর ও আইলায় বাবার তৈরি কাঠের ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে পানি ঢুকে আমার অনেকগুলো ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট নষ্ট হয়ে গেছে।'

ইকবালের প্রতিবেশী দেওয়ান সোহেল রানা (৩০) বলেন, 'প্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকার অনেক ছেলে তার সঙ্গে খেলতে চাইত না। এখন তাদের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই দায়। জাতীয় পর্যায়ের একজন প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারের অবস্থা যে এতটা খারাপ তা ভাবা কঠিন। এলাকাবাসী হিসেবে আমাদের দাবি, ইকবালের পরিবারের জন্য অন্তত একটি ঘর দেওয়া হোক।'

ইকবাল হোসেনের মা মোমেনা বেগম বলেন, '২০০২ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মেয়ে ও ২ ছেলেকে নিয়ে লড়াই শুরু করি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলে যখন প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে খেলতে শুরু করে, তখন ভেবেছিলাম পরিবারে সমৃদ্ধি আসবে। ৪-৫ বছর ধরে খেললেও আমাদের ভাঙা ঘর এখনো ভাঙা। প্রতিবেলা খাবারও জোটে না।'

যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, 'ইকবালকে সাহায্যের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus sits with BNP delegation over reform commissions

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir is leading the six-member delegation at the State Guest House Jamuna.

50m ago