আবুল মনসুর আহমদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে 'আবুল মনসুর আহমদের হুজুর কেবলা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়েও ভিন্ন পোশাকে 'হুজুর কেবলা' এর মতো মানুষ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষরা এদের মুরিদ হয়, সমাজের সব শ্রেণি, পেশা ও স্তরে এদের উপস্থিতি থাকে।
আজ বৃহস্পতিবার সেমিনারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারের প্রধান অতিথি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ মাওলা বলেন, 'ব্রিটিশ কলোনিয়াল প্রসেস বাঙালিকে আত্মীয়তার সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষে তৈরি করেছে। সবাই এখন ক্ষমতাচর্চা করতে চায়। মধ্যযুগীয় সময়ের ন্যায় এখন হুজুরের হাতে ক্ষমতা নেই। তবে ভিন্ন পোশাকে, সবকালেই হুজুর কেবলার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তারা সাধারণের কাছে নিজেদের প্রভু মনে বলে দাঁড় করান।'
'যাবতীয় চেয়ারে সব ভুল লোক বসে আছে। এইসব চেয়ারে অভিনেতা, পোস্টার নেতা, পকেট নেতারা বসে আছেন, এরাই বর্তমানে হুজুর। সেই কারণে আবুল মনসুরের মৃত্যুর ৪০ বছরের পরও তার সাহিত্য বর্তমান সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'এইসব হুজুর কেবলার নোংরা রাজনীতির স্বীকার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররা এখন দেশের বাইরে চলে যায়।
আমরা প্রতিবাদ না করেই প্রতিবন্ধকতা দেয়াল তৈরি করি।আমাদের এইসব দেয়াল চিহ্নিত করে ভাঙতে জানতে হবে।'
বিশেষ আলোচক ইমরান মাহফুজ বলেন, 'আবুল মনসুরের সাহিত্যে সমাজের নানা অলীক সত্য বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠত। যেমন হুজুর কেবলার এমদাদ চরিত্র। ধর্মে অবিশ্বাসী এমদাদ অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের আস্তিক হয়ে উঠে। এমন মানুষ অনেক সমাজে।'
'ধর্ম ব্যবসার আড়ালে সুবিধাভোগী পীরদের কাছে যুগে যুগে কলিমনের নারীরা অসহায় হয়ে পড়ে। অর্থাৎ আবুল মনসুরের সাহিত্য বর্তমানেও প্রাসঙ্গিক,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাসকে আমার আদুভাই মনে হয়। সেই আগেরকার সাহিত্যে নিয়েই আমরা পড়ে আছি। ৫০ বছর বয়ষ্ক এই বাংলা বিভাগে বর্তমান সাহিত্যের ছাপ কতটুকু? কেন আমাদের ৭১ পরবর্তী সাহিত্য নেই? ৫০ বছরেও একজন শিক্ষক যদি একটি শিল্পোর্ত্তীন কবিতা বের করতে না পারেন, তিনি শিক্ষক নন, পীর। এইজন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের এখন আর সম্মান করে না।'
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শেখ সাদী। তিনি বলেন, 'আজকের সেমিনার প্রথা মুক্তির কাজ করেছে। সবাই প্রথাবিরোধী কথা শুনতে ভালোবাসে। আমাদের প্রত্যেকের একটা ঔপনিবেশিক মন আছে। আমাদের প্রত্যেকটা সিলেবাস পাশ্চাত্য ধাঁচে গড়া। সেখানে স্বদেশের চেতনা অনুপস্থিত বলে মানসিক দৈন্যতার ক্ষতটা গভীর। দেশ ৫০ বছরে অবকাঠামোগত ভাবে অনেক দূর এগিয়েছে, তবে মানসিকভাবে নয়। সেই প্রথা যাঁরা ভেঙেছে, তাঁরা বীর।'
সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন চবির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।
Comments