বাইডেনের সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের জরুরি বৈঠক

ব্রাসেলসে পশ্চিমের নেতাদের বৈঠক চলছে। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১ মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ, এক মাস অতিবাহিত হলেও দিনের হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার আগ্রাসনের ২৮তম দিন।

আজ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিতব্য বেশ কিছু জরুরি বৈঠকে নির্ধারণ হতে পারে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের বিপরীতে পশ্চিমের দেশগুলোর পরবর্তী উদ্যোগ কী হতে পারে।

সম্মেলনে কী কী বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে

সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়টি অনিশ্চিত, রক্তাক্ত ও দীর্ঘ হতে পারে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

আজকের আলোচনা থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা, ন্যাটোর শক্তিমত্তা প্রদর্শন ও সামরিক সহায়তার উদ্যোগ আসতে পারে বলে মনে করছেন মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা। খুব কম সময়ের মধ্যে আয়োজিত এ সম্মেলনকে সফল করার জন্য হোয়াইট হাউজ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার নিজেদের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক সংলাপ চালিয়েছে, যাতে আলোচনার পর নেতারা তাদের উদ্যোগগুলো সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে পারেন।

এটুকু নিশ্চিত, জেলেনস্কির চাহিদা অনুযায়ী ইউক্রেনের আকাশসীমাকে 'নো ফ্লাই জোনে' রূপান্তরের কোনো ইচ্ছা নেই মার্কিন ও ন্যাটো নেতৃবৃন্দের। তারা বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের যেকোনো উদ্যোগ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আরও প্ররোচিত করতে পারে এবং রাশিয়ার সঙ্গে আরও বড় আকারে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে।

এ ছাড়াও, পশ্চিমের নেতারা আগ্রাসী উদ্যোগ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। যেমন ইউক্রেনকে রুশদের নির্মাণ করা উড়োজাহাজ দেওয়া অথবা রুশ জ্বালানি সংযোগ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করা ইত্যাদি।

আজ একই দিনে ন্যাটো, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ও জি৭ এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সরকারের মধ্যে প্রাক-বৈঠক আলোচনার নিয়মিত প্রক্রিয়াটি এবার সীমিত আকারে হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব এখন এক ক্রান্তিলগ্নে। কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেও পুতিনের আগ্রাসন থামেনি, বরং দ্বিতীয় মাসে পদার্পণ করতে যাচ্ছে।

ব্রাসেলস যাত্রার প্রাক্কালে বাইডেন সতর্ক করেন, ইউক্রেনের যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার একটি 'প্রকৃত ঝুঁকি' হতে পারে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অসংখ্য শরণার্থীর ভিড়ে মানবিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভার্চুয়ালি এই বৈঠকগুলোতে বক্তব্য দেবেন। নিশ্চিতভাবেই তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে আরও সাহায্য চাইবেন।

মার্কিন প্রত্যাশা

বাইডেনের সহযোগীরা বৈঠকের আগে জানান, প্রেসিডেন্ট চাইছেন ইউক্রেনের জন্য নতুন সামরিক সহযোগিতা, রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপের পূর্ব প্রান্তে ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে একমত হতে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, 'নেতাদের আলোচনার অন্যতম বিষয় হবে আগামীতে আমরা কীভাবে ইউক্রেন ও তার প্রতিরক্ষার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করবো।'

ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি

ইউক্রেন প্রসঙ্গে রাশিয়াকে 'শাস্তি' দেওয়ার বিষয়ে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র রুশ জ্বালানির আমদানি নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু ইউরোপ সে পথে পুরোপুরি যায়নি।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেন, 'ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এক নয়। তেল ও গ্যাসের বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় (রাশিয়ার ওপর) অনেক বেশি নির্ভরশীল।'

'তাই আমাদেরকে আরও বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে রাশিয়া। আমাদের উদ্দেশ্য রাশিয়াকে যন্ত্রণা দেওয়া, নিজেরা যন্ত্রণা ভোগ করা নয়,' যোগ করেন মিশেল।

অর্থাৎ, স্বল্প মেয়াদে রাশিয়ার জ্বালানি ছাড়া ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো নিরুপায়, এ বিষয়টি কম বেশি পরিষ্কার। চাইলেও তারা মার্কিনদের মতো হঠাৎ করে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারছেন না।

সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা

সুলিভান আরও জানান, আগামীকাল বাইডেন মার্কিন সহযোগিতার বিস্তারিত প্রকাশ করবেন। তিনি জানান, মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালাচ্ছেন এবং এই জরুরি সম্মেলনে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে।

নিষেধাজ্ঞার বিকল্পের মধ্যে আছে রাশিয়ার আরও বেশ কিছু ব্যাংককে সুইফট থেকে নিষিদ্ধ করা এবং আরও বেশি রুশ নাগরিককে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা। এ ছাড়াও, ইতোমধ্যে রুশ সংসদের নিম্নকক্ষ দ্যুমার সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছেন বাইডেন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত সম্প্রদায়ের সদস্য অলিগার্কদের তালিকাও আরও বাড়ানো হতে পারে।

আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে আরও নিশ্ছিদ্র করারও উদ্যোগ নেবে বাইডেন, যাতে এর আওতায় থাকা কোনো ব্যক্তি একে এড়িয়ে যেতে না পারেন।

ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি ও শক্তিমত্তা বাড়ানো

ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ জানান, তিনি আশা করছেন নেতারা ইউরোপে ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে একমত হবেন। তিনি চান বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায় নতুন করে ন্যাটো বাহিনী মোতায়েন করা হোক।

জেক সুলিভান জানান, নেতারা ইউরোপে ন্যাটোর শক্তিমত্তা বাড়ানো ও প্রদর্শনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়ে আজ কিছু সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ক্ষেত্রে ইউরোপের পূর্ব প্রান্তের অঞ্চলগুলো বিশেষ প্রাধান্য পাবে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী গ্রীষ্মে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটোর পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত সম্মেলনে এ পরিকল্পনা অনুমোদিত হবে।

সুলিভান বলেন, 'নতুন করে ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি ও শক্তিমত্তা বাড়ানোর এই পরিকল্পনা নিশ্চিত করবে, রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ ইউক্রেন আগ্রাসন ও বেলারুশের ঘটনার প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর উপস্থিতি রয়েছে ইউরোপে।'

কর্মকর্তারা জানান, ইউরোপে আরও বেশি পরিমাণ মার্কিন সৈন্য মোতায়েন হতে পারে। এ ছাড়াও ন্যাটোর সুনির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে থেকে সেনা মহড়ার সংখ্যা বাড়তে পারে। ইউরোপে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে মার্কিন সেনারা থাকতে পারে।

এমনকি, ন্যাটো বাহিনীর নির্ধারিত রূপরেখার মধ্যে থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও তৈরি করা হতে পারে।

এসব বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যা বিশ্ববাসী জানতে পারবেন আগামীকাল। নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায়, অধীর আগ্রহে সম্মেলনের ফলাফল জানার অপেক্ষায় আছেন পুতিন ও জেলেনস্কিসহ সারা বিশ্বের মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

Time to build the country after overcoming dictatorship: Tarique

Highlights need to build skilled generations across all sectors

2h ago