প্রথম নৌযাত্রাতেই ‘নিখোঁজ’ জাবের

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবিতে ‘নিখোাঁজ’ আবদুল্লাহ আল জাবের। ছবি: সংগৃহীত

বাবা-মায়ের বড় সন্তান আবদুল্লাহ আল জাবের (৩০) সাঁতার জানতেন না। সেই ভয়ে নৌপথের যাত্রা এড়িয়ে চলতেন তিনি। এক্ষেত্রে বাবা-মায়েরও এক প্রকার নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই জাবেরই গতকাল রোববার প্রথমবারের মতো লঞ্চে চড়ে মুন্সিগঞ্জ ঘুরতে গিয়ে লঞ্চডুবিতে 'নিখোঁজ' হয়েছেন।

আজ সোমবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কয়লাখাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে 'নিখোঁজ' জাবেরের লাশের অপেক্ষায় ছিলেন তার মামা এস কে জামির চৌধুরী ও এক খালাতো ভাই। তারা ২ জনই কিছুক্ষণ পরপর শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীর ধরে ছুটোছুটি করছিলেন কোথাও লাশ ভেসে উঠলো কিনা- এই ধারণা থেকে।

এ সময় তাদের সঙ্গে কথোপকথনে উল্লিখিত প্রসঙ্গ উঠে আসে।

রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল আশরাফ উদ্দিন-২।

নৌপুলিশের ভাষ্য, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী ওই যাত্রীবাহী লঞ্চে সে সময় অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে । যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন অন্তত ৩ জন। তাদের মধ্যে জাবেরও একজন।

লঞ্চডুবির এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ'র কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। আজ সকাল পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চালিয়ে ২ শিশুসহ ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যার পর আলোর অভাবে ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি স্থগিত রাখা হলেও রাত পৌনে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে লঞ্চটি টেনে তোলার কাজ শুরু হয়।

আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লঞ্চটি টেনে তুলে বন্দর থানার কাশিপুর খালের উত্তর পাড়ে আলামিননগর এলাকায় রাখা হয়। তবে লঞ্চের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে নতুন করে কোনো লাশ মেলেনি।

মামা এস কে জামির চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ জাবের ডেমরা এলাকার আব্দুল ওয়াদুদ সিদ্দিকীর ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগে কাজ করতেন।

জামির চৌধুরী বলেন, '৩ বন্ধুর অনুরোধে জাবের তাদের সঙ্গে মুন্সিগঞ্জ ঘুরতে যাচ্ছিল। টার্মিনাল ঘাট থেকে লঞ্চে উঠে এটুকু পথ আসতেই কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। ওইসময় ৩ বন্ধু সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও জাবের পারেনি। বিকেলে জাবেরের বন্ধুরা ফোন করে এই ঘটনা তার পরিবারকে জানায়।'

সাঁতার না জানায় জাবেরকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন জানিয়ে তার মামা আরও বলেন, 'অন্তত লাশটা পাওয়ার জন্য রাত থেকেই অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনো পেলাম না।'

জামির চৌধুরী জানান, বাড়িতে জাবেরের স্ত্রী ও মা কান্নাকাটি করছেন। কেউ তাদের সান্ত্বনা দিতে পারছে না।

তিনি বলেন, 'আমি একটা ভিডিওতে দেখেছি, লঞ্চটা যখন ডুবে যাচ্ছিল তখন অনেকে নদীতে লাফ দিলেও জাবের লঞ্চের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। তখন থেকেই আমি নিশ্চিত যে আমার ভাগনে আর বেঁচে নেই। কিন্তু এ কথা এখনো বাসায় বলিনি।'

'নিখোঁজ' জাবেরের শোকস্তব্ধ মামা জানান, জাবেরই তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জাবেরের ছোট ২ ভাই পড়ালেখা করছে। বাবা একসময় লক্ষ্মীপুর জেলার একটি মসজিদের খতিব ছিলেন। তিনি কিছুদিন আগে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (নারায়ণগঞ্জ-২) উপ-সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবদুল্লাহ আল জাবেরসহ এখন পর্যন্ত আমরা ৩ জন নিখোঁজ থাকার অভিযোগ পেয়েছি। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলমান আছে।'

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'লঞ্চের ভেতরে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। নদীতে ডুবে গিয়ে থাকলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভেসে ওঠার কথা। আমরা নদীর বিভিন্ন জায়গায় টহল দিচ্ছি। লাশ পাওয়া গেলে স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Mindless mayhem

The clashes between students of three colleges continued yesterday, leaving over 100 injured in the capital’s Jatrabari.

6h ago