ওয়ান্ডারার্সে তামিমদের উড়িয়ে সিরিজে ফিরল দক্ষিণ আফ্রিকা
কাগিসো রাবাদার তোপে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ইনিংস টেনে দুইশোর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন আফিফ হোসেন। সেই পুঁজি নিয়ে লড়াই করা এমনিতেই ছিল কঠিন। অসুস্থতা কাটিয়ে দলে ফেরা কুইন্টন ডি কক বাংলাদেশের মামুলি সংগ্রহ ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তুড়ি মেরে যেন উড়িয়ে দিতে চাইলেন, কাইল ভেরেইনাও সময় নিলেন না বেশি। সেঞ্চুরিয়নে হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়া স্বাগতিকরা জোহানেসবার্গে ফিরল দাপট দেখিয়ে।
রোববার জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। 'পিংক ডেতে' অজেয় থাকার রেকর্ড ধরে রেখে প্রোটিয়ারা ১৯৫ রানের লক্ষ্যে পেরিয়ে যায় ৭৬ বল বাকি রেখে। এতে সিরিজে এসেছে ১-১ সমতা। স্বাগতিকদের জয়ে ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে আসল কাজটা করেন রাবাদা। ৪১ বলে ৬২ রান করে তাতে অবদান ডি ককের।
দলকে জয়ের কাছে নিয়ে ৩৭ রানে থামেন বাভুমা। চতুর্থ ফিফটি তুলে ৫৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ভেরেইনা।
Quinton de Kock is in the mood
He brings up his 28th ODI fifty in just 26 balls!#SAvBAN pic.twitter.com/TlKepoxLle
— ICC (@ICC) March 20, 2022
১৯৪ রানের পুঁজি নিয়ে জিতলে হলে শুরুতেই উইকেট নিতে হতো বাংলাদেশকে। সেই সম্ভাবনা তৈরির জায়গায় যেতে পারেননি তারা। রান তাড়ায় নেমে ডি কক যেন মেতে উঠেন আইপিএলের মহড়ায়। চার-ছক্কার ঝড়ে মাত্র ২৬ বলেই তুলে নেন ফিফটি।
তাসকিন আহমেদ শুরুতে এক-দুইটা বল একটু ভাবালেও তাকে পরে ডি কক অনায়াসে পাঠান বাউন্ডারিতে। শরিফুল ইসলামের বলে প্রথম থেকেই খেলেন আগ্রাসী মেজাজে। পাওয়ার প্লের মধ্যে বল করতে এসে সুবিধা করতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও।
ইয়ানেমান মালাল কিছুটা সময় নিয়ে খেললেও ডি ককের ব্যাটে ম্যাচ সহজ হতে থাকে প্রোটিয়াদের। ১৩তম ওভারে ৪০ বলে ২৬ করা মালানকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ, তবে ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে উঠে গেছে ৮৬ রান।
সঙ্গী হারিয়ে অ্যাপ্রোচ বদলের চিন্তায় যাননি ডি কক। খেলতে থাকেন তার মতই। ফিফটি পেরিয়ে যাওয়া ইনিংসটা আরও বড় হয়নি অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে। সাকিব আল হাসানের বলে ছক্কা পেটাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের হাতে ধরা দেন তিনি। ৪১ বলের ইনিংসে প্রোটিয়া ওপেনার মেরেছেন ৯ চার, ২ ছক্কা।
৯৪ রানে ২ উইকেট পড়ার পর জুটি বাঁধেন কাইল ভেরেইনা আর টেম্বা বাভুমা। খানিকটা সময় নিয়ে থিতু হলেও ভেরেইনা পরে মেলে ধরেন ডানা। তাসকিনকে এক ওভারে মারেন দুই ছয়, এক চার। তাসকিনকে ছক্কায় উড়ান বাভুমাও।
স্পিনারদেরও সহজেই খেলতে থাকেন এই দুজন। ম্যাচের উত্তাপ শেষ হয়ে যায় অনেক আগেই। অনিয়মিত স্পিনার আফিফের বল ছক্কায় উড়াতে গিয়ে দলের জয়ের ১৯ রান আগে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন বাভুমা। ৮২ রানের জুটি ভাঙলেও তাতে ম্যাচের প্রভাব ছিল না। রাসি ফন ডার ডাসেনের সঙ্গে বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন ভেরেইনা।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়াবহ। প্রোটিয়া পেসারদের গতি, বাড়তি বাউন্সে তামিম ইকবালের দল পড়ে যায় কঠিন পরীক্ষায়।
আগের ম্যাচে ওপেনিংয়ে বড় জুটি এলেও এবার তামিম ফিরে যান প্রথমেই। এনগিদির লাফানো বল কি করবেন ভেবে না পেয়ে থতমত হয়ে ব্যাট লাগিয়ে ক্যাচ দেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
সেঞ্চুরিয়নে ম্যাচ জেতানো সাকিব রাবাদার লেন্থ থেকে কিছুটা লাফানো বলে ফ্লিক করতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে ক্যাচ দেন কাভারে। এবার কোন রান করতে পারেননি তিনি।
লিটন দাসকে বাউন্সি উইকেটেও সাবলীল লাগছিল। এনগিদিকে কাট ও পুলে মেরেছিলেন দুই বাউন্ডারি। তার ব্যাটের দিকে যখন আশা খুঁজছিল বাংলাদেশ, তখনই সমাপ্তি লিটনেরও। রাবাদার বুক বরাবর বাউন্স টুকে দেওয়া বলে একটু সরে গিয়ে আপার কাট করতে গিয়েছিলেন। বল তার গ্লাভসে লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার কুইন্টন ডি ককের হাতে। ২১ বলে ১৫ রানে থামেন লিটন। বাংলাদেশ ২৩ রানে হারিয়ে বসে ৩ উইকেট।
ইয়াসির আলি ক্রিজে এসে শূন্য রানে জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। শর্ট বলে তাকেও ছাঁটেন রাবাদা। নড়বড়ে ব্যাট করে টিকে থাকা মুশফিকুর রহিমকে থামান ওয়েইন পারনেল। এই পেসার চোটে মাঠ ছাড়লে ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর অবস্থা থেকেও আরও বিপদ বাড়েনি বাংলাদেশের।
চরম বিপদে আফিফের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটিতে আসে ৬০ রান। আফিফ শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী। মাহমুদউল্লাহ সময় নিয়ে হন থিতু। থিতু হয়ে তাবরাইজ শামসির ফাঁদে পা দিয়ে থামেন মাহমুদউল্লাহ। শামসি মাহমুদউল্লাহকে কঠিন সময় দিয়েও ফেরাতে পারছিলেন না। পরে লেগ স্লিপ রেখে ফাঁদ তৈরি করেন তিনি। লেগ স্টাম্পের বাইরে বল দিয়ে তাকে প্রলুব্ধ করেন ব্যাট লাগাতে। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ সেটাই করে ক্যাচ দেন লেগ স্লিপেই। ৪৪ বলে ২৫ রানে থামে তার প্রতিরোধ।
সাবলীল খেলতে থাকা আফিফ পরে মিরাজকে নিয়েও পান আরেক জুটি। মনে করিয়ে দিতে থাকেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাদের রেকর্ড জুটির কথা। ফিফটি পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য জুটি ভাঙার সুযোগ প্রোটিয়ারা পেয়েছিল দুবার। বাভুমার স্লো মিডিয়াম বলে ওয়াইড লঙ অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ২১ রানে থাকা মিরাজ। আবারও ক্যাচ হাতছাড়া করেন মালান। ৫৯ রানে আফিফের দেওয়ায় ফিরতি কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি বাভুমা নিজেও।
৭৯ বলে ফিফটি তুলে দলকে টানা আফিফ স্লগ ওভারে মারার চেষ্টায় ছিলেন। তা করতে গিয়ে থামতে হয় তাকে। আফিফকে থামান রাবাদাই। রাবাদার শেষ ওভারে তুলে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচে বিদায় তার। তবে তার আগে ৭২ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে দিয়ে যান কিছুটা স্বস্তি। ওই ওভারে মিরাজকেও তুলে নিয়ে পঞ্চম শিকার ধরেন রাবাদা।
দুশোর কাছে গেলেও এই রান নিয়ে লড়াই করার অবস্থা ছিল না বোলারদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৯৪/৯ (তামিম ১, লিটন ১৫ , সাকিব ০, মুশফিক ১২, ইয়াসির ২, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, তাসকিন ৯* , শরিফুল ২, মোস্তাফিজ ২*; এনগিদি ১/৩৪ , রাবাদা ৫/৩৯ , পারনেল ১/৬ , বাভুমা ০/২২, শামসি ১/২৬, মহারাজ ০/৫৭, রাসি ১/৩ )
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭.২ ওভারে ১৯৫/৩ (মালান ২৬, ডি কক ৬২, ভেরেইনা ৫৮* , বাভুমা ৩৭, ডাসেন ৮* ; শরিফুল ০/২৯, তাসকিন ০/৪১, মিরাজ ১/৫৬, মোস্তাফিজ ০/১৩, সাকিব ১/৩৩ , আফিফ ১/১৫, মাহমুদউল্লাহ ০/৮)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী।
Comments