দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়

Bangladesh cricket team
ফাইল ছবি

সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও ইয়াসির আলী রাব্বির ফিফটিতে রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ রানের পুঁজি পেল তারা। এরপর বল হাতে জ্বলে উঠলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। রাসি ভ্যান ডার ডাসেন ও ডেভিড মিলারের লড়াই ছাপিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেল টাইগাররা।

শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩৮ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এটাই তাদের প্রথম জয়। এর আগে সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে কেবল হারের মুখই দেখেছিল সফরকারীরা।

সুপারস্পোর্ট পার্কে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩১৪ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে প্রোটিয়ারা ৪৮.৫ ওভারে অলআউট হয় ২৭৬ রানে। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে তামিম ইকবালের দল।

বোলিংয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে সফল অফ স্পিনার মিরাজ। ৯ ওভারে ৬১ রানে তিনি নেন ৪ উইকেট। অথচ ইনিংসের মাঝপথেও পঞ্চম বোলার নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। কারণ, নিজের প্রথম ৪ ওভারে ৩৮ রান দেন তিনি। পরে অবশ্য দারুণভাবে ঘুরিয়ে দাঁড়ান মিরাজ। ডানহাতি পেসার তাসকিন ১০ ওভারে মাত্র ৩৬ রানে শিকার করেন ৩ উইকেট। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ৮ ওভারে ২ উইকেট পান ৪৭ রানে।

বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাও ব্যাটিংয়ের শুরুটা করে দেখেশুনে। তবে দলীয় ১৮ রানেই প্রোটিয়া শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেন শরিফুল। তার বল ওপেনার ইয়ানেমান মালানের ব্যাটের কানায় চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে। সামনের দিকে ঝুঁকে নিচু হওয়া ক্যাচ লুফে নেন তিনি। মাঠের আম্পায়ার কিছুটা সন্দিহান ছিলেন যে বল ঠিকঠাক গ্লাভসে জমা পড়েছে কিনা। পরে থার্ড আম্পায়ার আউট নিশ্চিত করেন।

কুইন্টন ডি ককের অসুস্থতায় সুযোগ পাওয়া আরেক ওপেনার কাইল ভেরেইনাকে বেশি দূর যেতে দেননি তাসকিন। নবম ওভারে জোড়া শিকার ধরেন তিনি। ২৫ বলে ২১ রান করে প্রথম ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ভেরেইনা। চতুর্থ ডেলিভারিতে শূন্য হাতে মাঠ ছাড়েন এইডেন মার্করাম। জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে তিনি সহজ ক্যাচ তুলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে।

৩৬ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে চাপে পড়া স্বাগতিকদের হাল ধরেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও ভ্যান ডার ডাসেন। এক প্রান্তে বাভুমা ছিলেন সাবধানী। অন্য প্রান্তে দ্রুত রান তোলার প্রচেষ্টা দেখা যায় ভ্যান ডার ডাসেনের ব্যাটে। বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল। তার বাউন্সারে মুশফিকের তালুবন্দি হন বাভুমা। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৫ বলে ৩১ রান। চতুর্থ উইকেট জুটি ভাঙে ১০৭ বলে ৮৫ রানে।

এরপর সঙ্গী হিসেবে মিলারকে পান ভ্যান ডার ডাসেন। বেশ কিছু বড় শট খেললেও তাদেরকে লাগামছাড়া হতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। তারপরও দক্ষিণ আফ্রিকাকে তারা জয়ের কক্ষপথে রাখায় অস্বস্তি বাড়ছিল। দুজনকে আলাদা করতে বোলিংয়ে কয়েক দফা পরিবর্তন আনেন তামিম। অবশেষে সাফল্য আসে তাসকিনের হাত ধরে। সেঞ্চুরির পথে ছুটতে থাকা ভ্যান ডার ডাসেনকে বিদায় করেন তিনি। ডিপে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে ইয়াসির রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ৯৮ বলে ৯ চার ও ১ ছয়ে ভ্যান ডার ডাসেনের রান ৮৬।

দলীয় ১৯১ রানে ভ্যান ডার ডাসেনের বিদায়ের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়ায় প্রোটিয়ারা। মিরাজ একাই নাড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের লোয়ার অর্ডার। তার বলে পরাস্ত হয়ে দ্রুত বিদায় নেন আন্দিল ফেলুকওয়ায়ো, মার্কো ইয়ানসেন ও কাগিসো রাবাদা। তাতে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে বাংলাদেশ।

সমীকরণ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকার আশার আলো হয়ে জ্বলছিলেন মিলার। ৩৮ বলে ফিফটি পূরণ করা এই বাঁহাতি ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। যোগ্য সঙ্গী না থাকায় তার ঘাড়ে চেপে বসে সমস্ত দায়িত্ব। তবে ৪৬তম ওভারে থামে তার লড়াই। মিরাজকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন মিলার। ৫৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় তার রান ৭৯।

এরপর কেশব মহারাজ ও লুঙ্গি এনগিডি মিলে কেবল হারের ব্যবধানই কমান। শেষ উইকেটে ২০ বলে তারা যোগ করেন ৩৪ রান। রিভিউ নিয়ে ১৬ বলে ২৩ করা মহারাজকে এলবিডব্লিউ করে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস মুড়িয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩১৪/৭ (তামিম ৪১, লিটন ৫০, সাকিব ৭৭, মুশফিক ৯, ইয়াসির ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ১৭, মিরাজ ১৯*, তাসকিন ৭*; এনগিডি ১/৭৫, রাবাদা ১/৫৭, ইয়ানসেন ২/৫৭, মহারাজ ২/৫৬, ফেলুকওয়ায়ো ১/৬৩)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ (ভেরেইনা ২১, মালান ৪, বাভুমা ৩১, মার্করাম ০, ভ্যান ডার ডাসেন ৮৬, মিলার ৭৯, ফেলুকওয়ায়ো ২, ইয়ানসেন ২, রাবাদা ১, মহারাজ ২৩, এনগিডি ১৫*; সাকিব ০/৫৪, শরিফুল ২/৪৭, তাসকিন ৩/৩৬, মোস্তাফিজ ০/৫০, মিরাজ ৪/৬১, মাহমুদউল্লাহ ১/২৪)।

ফল: বাংলাদেশ ৩৮ রানে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

1h ago