সাকিব-লিটন-ইয়াসিরের ফিফটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড পুঁজি

ফাইল ছবি

সাবধানী শুরুতে বাংলাদেশকে ভালো সংগ্রহের ভিত দিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। সেটাকে কাজে লাগিয়ে রেকর্ড জুটি গড়ার পথে আগ্রাসী ফিফটি তুলে নিলেন সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলী রাব্বি। শেষদিকে ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেন মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ল টাইগাররা।

শুক্রবার সেঞ্চুরিয়নে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে বড় পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে তারা তুলেছে ৭ উইকেটে ৩১৪ রান।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ২৭৮ রান। দেশটিতে সবশেষ সফরে ২০১৭ সালে কিম্বার্লিতে ওই পুঁজি পেয়েছিল টাইগাররা। তবে কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলার জোড়া সেঞ্চুরিতে ১০ উইকেটের বিশাল হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছিল তাদেরকে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা ওপেনার লিটন ৬৭ বলে করেন ৫০ রান। তিনি মারেন ৫ চার ও ১ ছক্কা। তিনে নেমে মাত্র ৭ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৬৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন তারকা অলরাউন্ডার সাকিব। চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নামা তরুণ ইয়াসির স্বাদ নেন এই সংস্করণে প্রথম ফিফটির। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ বলে ৫০ রান করেন তিনি।

উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ও লিটন ১৩০ বলে যোগ করেন ৯৫ রান। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে কোনো উইকেটে এত বড় জুটি আগে ছিল না বাংলাদেশের। তবে তাদের রেকর্ড ভাঙা পড়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে। চতুর্থ উইকেটে কেবল ৮২ বলে ১১৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও ইয়াসির।

প্রথম পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে বিনা উইকেটে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ৩৩ রান। দলীয় পঞ্চাশ আসে ১৬তম ওভারে। শুরুতে উইকেট ধরে রাখার কৌশলে সফল হয়ে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রানের চাকা দ্রুত ঘুরতে থাকে টাইগারদের। শেষ ১৪ ওভারে ৪ উইকেট খুইয়ে তারা স্কোরবোর্ডে জমা করে আরও ১৩৭ রান।

ম্যাচের শুরুতে সেঞ্চুরিয়নে আকাশে ছিল মেঘের আনাগোনা। বল বেশ বাউন্স হচ্ছিল। তবে পরের দিকে কমে যায় বাউন্স। বেশ কিছু ডেলিভারি নিচুও হয়। ধীরে ধীরে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠা এবং স্কয়ার অব দ্য উইকেটে মাঠের আকার ছোট হওয়ার পুরো সুবিধা আদায় করে নেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

যদিও শুরুতে তামিম ও লিটন কোনো বিপদ ঘটতে দেননি, তবে তাদের জুটিতে প্রথম দিকে রান আসেনি প্রত্যাশা অনুসারে। ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে দুজনে মিলে ডট বল খেলেন ৪৫টি। সেসময় বাউন্ডারি আসে মাত্র চারটি। বাঁহাতি তামিমের ব‍্যাট থেকে একটি করে ছক্কা ও চার, ডানহাতি লিটনের ব্যাট থেকে দুটি চার।

২২তম ওভারে তামিমের বিদায়ে ভাঙে টাইগারদের ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। তিনি করেন ৬৭ বলে ৪১ রান। সাবধানী শুরুর পর তিনি মারেন ৩ চার ও ১ ছক্কা।

তামিমকে এলবিডব্লিউ করে প্রোটিয়াদের গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দেন আন্দিল ফেলুকওয়ায়ো। এই মিডিয়াম পেসারের কিছুটা শর্ট লেন্থের বলে পরাস্ত হন তামিম। যতটা বাউন্স হবে ভেবেছিলেন, ততটা হয়নি। বল নিচু হয়ে গিয়ে লাগে তার পেছনের পায়ের প্যাডে। আম্পায়ার তৎক্ষণাৎ আউটের সিদ্ধান্ত দিতে সংশয়ে ভোগেননি। তামিম অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল গিয়ে লাগত অফ ও মিডল স্টাম্পের মাঝামাঝি। ফলে তামিমের সঙ্গে সঙ্গে একটি রিভিউও হারায় বাংলাদেশ।

পরের ওভারে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। টানা তৃতীয় ইনিংসে কমপক্ষে ৫০ করার নজির গড়েন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত মাইলফলকে পৌঁছে ইনিংস আর লম্বা করতে পারেননি। তামিমের মতো আরেকটি নিচু হওয়া বলে কুপোকাত হন লিটন। বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজের স্টাম্পের বেশ কাছের বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান।

অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম থিতু হতে পারেননি। মহারাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে তিনি তড়িঘড়ি আউট হওয়ার পর জুটি বাঁধেন সাকিব ও ইয়াসির। প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে তারা দুজনে যোগ করেন ৮২ বলে রেকর্ড ১১৫ রান।

সাকিব ফিফটিতে পৌঁছান ৩৮তম ওভারের শেষ বলে। ফেলুকওয়ায়োকে লং-অফ দিয়ে ছক্কা মেরে মুখোমুখি হওয়া ৫০তম বলে ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। পরে হাত খুলে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। অসাধারণ খেলতে থাকা সাকিবের ইনিংসের ইতি টানেন পেসার লুঙ্গি এনগিডি। ৪২তম ওভারে নিচু ফুলটস ডেলিভারির লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান সাকিব। এরপর রিভিউ না নিয়ে ছাড়েন মাঠ।

তার ওপর দলের রাখা আস্থার প্রতিদান দেন তরুণ ইয়াসির। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডে অভিষেকে ডাক মেরেছিলেন তিনি। আরেক ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে আউট হয়েছিলেন কেবল ১ রানে। সেই বাজে অভিজ্ঞতা পেছনে ফেলে এদিন ৪৩ বলে ফিফটি হাঁকান তিনি। এরপর স্লোয়ার বলে কাগিসো রাবাদাকে পুল করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন। তাতে তিন বলের মধ্যে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সাকিব ও ইয়াসির বড় সংগ্রহের পথ সুগম করে দিয়ে যান। সেই পথে হেঁটে বাংলাদেশের পুঁজি তিনশ পেরিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করেন পরের ব্যাটাররা। মাহমুদউল্লাহ ১৭ বলে ২৫, আফিফ হোসেন ১৩ বলে ১৭ ও মিরাজ ১৩ বলে অপরাজিত ১৯ রান করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩১৪/৭ (তামিম ৪১, লিটন ৫০, সাকিব ৭৭, মুশফিক ৯, ইয়াসির ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ১৭, মিরাজ ১৯*, তাসকিন ৭*; এনগিডি ১/৭৫, রাবাদা ১/৫৭, ইয়ানসেন ২/৫৭, মহারাজ ২/৫৬, ফেলুকওয়ায়ো ১/৬৩)।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

4h ago