এদেশে সমালোচনা বা প্রশংসা দুটোই অনেকাংশে মেকি হয়ে থাকে
চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রথমা থেকে প্রকাশ হয়েছে শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক আসিফ নজরুলের দোষ, কয়েকজন হুমায়ূন আহমেদ। নতুন বই ও নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
দোষ, সংসার, ঘোর, উধাও- এমন নামে আপনার বই প্রকাশিত হয়েছে। বইয়ের নাম কীভাবে নির্ধারণ করেন, লেখার আগে না পরে?
আসিফ নজরুল : অবশ্যই লেখার পরে, কখনো মাঝামাঝি সময়ে। তবে নাম নিয়ে কখনো পুরো সন্তুষ্ট থাকি না। আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে বলে, আরে দিয়ে দাও একটা। বলে, বইয়ের না, মানুষ বই কিনে লেখকের নাম দেখে। কিন্তু আমি খুব না ভেবে কখনো নাম দেই না। দোষ নামটা দিবো কিনা এটা নিয়ে প্রথম আলো ও প্রথমার কয়েকজনের মতামতও নিয়েছিলাম।
সামাজিক মাধ্যমে আপনার পাঠকরা সক্রিয়। তাদের সমালোচনা লেখায় কোন প্রভাব রাখে?
আসিফ নজরুল : এদেশে সমালোচনা বা প্রশংসা দুটোই অনেকাংশে মেকি হয়ে থাকে। সমালোচনা খুব কম শুনি, যা শুনি তা কখনো আরও ভাল লিখতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে আবার না বুঝে এমনকি না পড়েই সমালোচনা করে কেউ কেউ।
আমার স্ত্রী শীলা আহমেদের জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে তার বাবার বিখ্যাত বইগুলোর পান্ডুলিপি পড়ে। প্রচুর সাহিত্যের বইও পড়েছে জীবনে। ফলে সমালোচক হিসেবে সে অভিজ্ঞ ও অত্যন্ত উন্নতমানের। সে কিছু বললে খুব সিরিয়াসলি নেই।
মেলায় আপনার 'কয়েকজন হুমায়ূন আহমেদ' এসেছে। জীবিত হুমায়ূনের চেয়ে মৃত্যু হুমায়ূন কতটা শক্তিশালী?
আসিফ নজরুল : সেদিনও অনন্যার প্রকাশক মনির ভাই বললেন হুমায়ূন আহমেদের বই এখনো যে কোন লেখকের চেয়ে বেশী জনপ্রিয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি উনার সায়েন্স ফিকশনগুলোর বেশী ভক্ত। এখানে বাংলাদেশে তার ধারেকাছে কেউ নেই। আমার ধারনা হলিউডের বড় পরিচালকরা এসব পেলে অসাধারণ সব ছবি বানানো শুরু করে দিত।
কলাম লিখছেন নিয়মিত। সেখানে কী সব বলতে পারেন ? কথাশিল্পের আশ্রয় কখন নেন?
আসিফ নজরুল : আমি কলাম লেখার বহু আগে উপন্যাস লিখতাম। ১৯৯১ থেকে টানা ৪টি ঈদসংখ্যা বিচিত্রায় লিখেছিলাম। শওকত আলী, সৈয়দ হক, হুমায়ুন আহমেদ দেশের শীর্ষস্থানীয়দের বাইরে একমাত্র তরুন ছিলাম আমি, যে এই সুযোগ পেয়েছিল। আমার উপন্যাস 'নিষিদ্ধ কয়েকজন' আর 'ক্যাম্পাসের যুবক' ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছিল। বিদেশে পিএইচডি করতে যাওয়ার পর নানা কারণে উপন্যাস লেখা বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলার পর আবার তা লেখা শুরু করি প্রায় ১৮ বছর পর থেকে।
তাছাড়া পত্রিকার কলামে কল্পনার সুযোগ নেই। উপন্যাসে কল্পনার আর বলার সুযোগ বেশী। তবে এখানে মানুষ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে অতিরিক্ত সেনসিটিভ বলে, উপন্যাসও ঠিক মুক্তমনে লেখা যায় না। না হলে আরও ভাল লিখতে পারতাম।
শিল্প সাহিত্য- সামাজিক মুক্তিতে কতটা ভূমিকা রাখে, রাখলে কীভাবে?
আসিফ নজরুল : খুব সরাসরি ভূমিকা কম রাখে। তবে তা উপলব্ধি, মানসিকতা, রুচিবোধ ও মনন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে অনেক। সামাজিক মুক্তির জন্য শিল্প সাহিত্য- অবশ্য এসবের প্রয়োজন আছে।
বাংলাদেশের ৫০ বছর। কিন্তু মৌলিক অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের দায় আছে কী?
আসিফ নজরুল : এটা অনেক বড় আলোচনার বিষয়। কিছু দায় আছে অবশ্যই। মূল দায় সরকারগুলোর। যে সরকার যতো বেশীদিন ক্ষমতায় থেকেছে তার দায় ততো বেশী।
Comments