দুদকের অভিযান, চমেক হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহে গরমিল
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ফার্মেসি থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের হিসাবে গরমিল খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম ১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুছ সাদাতের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযান শেষে উপপরিচালক নাজমুস সাদাত সাংবাদিকদের বলেন, 'ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধের রেজিস্ট্রারে আমরা গরমিল পেয়েছি। গরমিলের নথি আমরা সংগ্রহ করেছি। এগুলো যাচাই-বাছাই করে দুদকের সদর দপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠাব।'
তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে রেজিস্ট্রারে গরমিল আছে। এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে যে জনবল সংকটের কারণে তারা রেজিস্ট্রার ঠিক রাখতে পারেনি।'
কী ধরনের গরমিল পেয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ফার্মেসিতে দেখলাম যে তারা স্টোর থেকে যত ওষুধ আনে, তার হিসাবে গরমিল হচ্ছে। মানে সরবরাহ ও বণ্টনের গরমিল।'
এক্ষেত্রে ফার্মেসির দায়িত্বপ্রাপ্তরা সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিতে পারেনি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, '২ থেকে ৪ মাসের ওষুধ সরবরাহের তথ্য রেজিস্ট্রার লেখা নাই। এ বিষয়ে ফার্মেসির কর্মীদের জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তারা লোকবল সংকটের অজুহাত দিয়ে দায় এড়িয়ে গেছে।'
হাসপাতালের রোগীরা সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন না, হটলাইন নম্বরে এমন অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক।
নাজমুস সাদাত বলেন, 'এই হাসপাতালে ৪৬টি ওয়ার্ড আছে। একদিন সবগুলো ওয়ার্ডে যাচাই করা সম্ভব না। তাই আমরা কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়েছি।'
ওয়ার্ডের রোগীরা কি অভিযোগ করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তেমন কোনো সমস্যা পাইনি। যে সব ওষুধের সরবরাহ আছে, রোগীরা সেগুলো পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।'
অনেক রোগী হাসপাতাল থেকে ওষুধ পান না বলে অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক বলেন, 'হ্যাঁ, আমরা এমন কিছু অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগ আমরা যাচাই-বাছাই করব। অভিযোগের সত্যতা পেলে আমরা অনুসন্ধান করব।'
গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের সরকারি ওষুধ বাইরে পাচারের সময় ২ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাসপাতাল থেকে ওষুধ বাইরে পাচার হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুস সাদাত বলেন, 'ওষুধ বাইরে যাওয়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে আমরা আজ শুধু হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছি। বাইরে যাইনি। না গিয়ে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।'
হাসপাতালে অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন দুদকের এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, 'দুদক ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা দেখেছে, হাসপাতালে সরবরাহ থাকা ওষুধ রোগীরা পাচ্ছেন।'
তিনি বলেন, 'দুদক বহির্বিভাগের ফার্মেসিতে একটি ক্যালসিয়াম ওষুধের রেজিস্ট্রারে গরমিল পেয়েছে।'
'দেখা গেছে, আউটডোরে একদিন ওষুধ সরবরাহ দেওয়া হয়েছে ২০০ পিস। কিন্তু সেদিন ওষুধের চাহিদা ছিল ৩০০ পিস। তখন স্টোর থেকে অতিরিক্ত ১০০ পিস আনা হয়। পরে ওই ১০০ পিস পরের দিনের চাহিদার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করা হয়। এ ক্ষেত্রে আগের দিনের সরবরাহের হিসাব পরের দিন লেখা হয়। মূলত এখানে গরমিল পেয়েছে দুদক। এটা মূলত সিস্টেমের কারণে,' বলেন তিনি।
Comments