‘জায়গা সংকটে যানজট’ বুড়িমারী স্থলবন্দরের প্রধান সমস্যা

বন্দরের ইয়ার্ডে জায়গা সংকটের কারণে রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: এস দিলীপ রায়

বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুটে পরিণত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারী। জায়গা সঙ্কটের কারণে আমদানি-রপ্তানির পণ্যের ট্রাকের দীর্ঘ যানজট এখানকার নিয়মিত চিত্র।

গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৯০ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে যা ছিল ৪৭ কোটি ৬৪ লাখ ৪৬ হাজার ১৬৭ টাকা।

একইভাবে শুল্ক কর্তৃপক্ষ ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আয় করেছে ১১১ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ৫৭ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় আগের তুলনায় বাড়বে বলে আশা করছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বুড়িমারী স্থলবন্দর। ছবি: এস দিলীপ রায়

বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আগের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি বাণিজ্য হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০টি ট্রাক ভারত ও ভুটান থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসছে। একই সময়ে ৬০ থেকে ৬৫টি বাংলাদেশি ট্রাক রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে যাচ্ছে।

করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন দিয়ে ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার যাত্রী ভারত-ভুটান-নেপালে যাতায়াত করতেন। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন আমদানি পণ্য এসেছিল। সেটি বেড়ে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে হয়েছে ৪৬ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের ৩ শেডের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ৭৬৮ মেট্রিক টন এবং ৩ ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৬ হাজার ২০৩ মেট্রিক টন। সময়মতো পণ্য খালাস না হওয়ায় ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ডে আমদানি পণ্যের ট্রাককে ২ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি ও রপ্তানিকারক শামিম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বন্দরে আগের তুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় বন্দরের ধারণ ক্ষমতা বাড়েনি।'

আমদানি ও রপ্তানি পণ্যে ট্রাকের যানজটকে এখানকার বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এ কারণে সময়মতো পণ্য খালাস করতে পারি না। এতে করে সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে।'

দ্রুত বন্দর সম্প্রসারণ করে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করার দাবি করেন তিনি।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কম খরচে এই বন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে পণ্য আমদানি করা যায় বলে আমদানিকারকরা এখানে আসছেন। বর্তমান জায়গা সংকট, যানজট সমস্যার সমাধান হলে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে উঠবে একটি অন্যতম বাণিজ্যিক অঞ্চল।'

বন্দরের ইয়ার্ডে জায়গা সংকটের কারণে রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: এস দিলীপ রায়

'স্থলবন্দরটিকে ঘিরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে' বলে জানান তিনি।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি কাস্টমস) কেফায়েত উল্যাহ মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহামারির সময়ও এই স্থলবন্দর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ত্রিদেশীয় স্থলবন্দর হিসেবে বুড়িমারী একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এখানে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।'

বুড়িমারী স্থলবন্দরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (এডি) রুহুল আমিন বলেন, 'স্থলবন্দর সম্প্রসারণ করতে ২৩ একর ৮৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খাস জমি ২০ একর ৩৫ শতাংশ এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩ একর ৫১ শতাংশ। খুব শিগগির জমি অধিগ্রহণ করে স্থলবন্দর সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হবে।'

তিনি জানান, এখানে আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী ট্রাকের পার্কিং টার্মিনাল, খালি ট্রাক রাখার টার্মিনাল ও বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল তৈরি করা হবে।

লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নে এই স্থলবন্দর স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ১৯৮৮ সালে বুড়িমারী স্থলবন্দর চালু হলেও এটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২০১০ সালে। বর্তমানে স্থলবন্দরটি ১১ একর ১৫ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

Comments

The Daily Star  | English

Time to build the country after overcoming dictatorship: Tarique

Highlights need to build skilled generations across all sectors

3h ago