যথেষ্ট হয়েছে, এবার ফুলস্টপ করা উচিত: খালেদ মাহমুদ
মন চাইলে খেলব, আবার মন চাইলে খেলব না। সাকিব আল হাসানের এমন মানসিকতার কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি জানান, কারো বিরতি নিতে ইচ্ছে হলে পুরোদমে বিরতি নিতে পারে। কিন্তু জাতীয় দলের পরিকল্পনায় বারবার উলটপালট করার সংস্কৃতি এবার বন্ধ করতে হবে।
সাকিবের সম্মতিতেই তাকে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ওয়ানডে ও টেস্ট দল ঘোষণা করেছিল বিসিবি। কিন্তু গত রোববার রাতে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে দুবাইতে যাওয়ার আগে সাকিব জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার মতো শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেই তার। তিনি খেলার মতো কোন অবস্থাতেই নেই।
সাকিবের এমন অবস্থানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছ থেকে। এবার তার আচমকা এই অবস্থানে ভীষণ চটেছেন খালেদ মাহমুদ। তার মতে সিনিয়র সবাইকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবার সময় এসে গেছে, 'আমার মনে হয় এখন হাই টাইম, বোর্ডের একটা ফুলস্টপ করা উচিত। যথেষ্ট হয়েছে। বারবার এমন হতে পারে না যে, আমি চাইলাম খেললাম, চাইলাম খেললাম না। এখন শুধু সাকিবের কথা বলছি না, সবাইকে ছাড়াই ভাবার সুযোগ এসেছে।'
এর আগেও নানা কারণে বাংলাদেশের হয়ে খেলায় ছুটি নিয়েছেন সাকিব। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরেও শুরুতে তার নাম ছিল। পরে সাকিব নিজেকে সরিয়ে নেন। তখন জানিয়েছিলেন পরিবারকে সময় দিতে তার আমেরিকা যাওয়া দরকার। অবশ্য বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড যাওয়ার পরও বেশ কয়েকদিন পরিবার ছাড়া দেশে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন এই শীর্ষ ক্রিকেটার।
বারবার এমনটা হওয়ায় দলের পরিকল্পনায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান এই প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালক, 'তারা যদি অনুভব করে খেলার জন্য আগ্রহী না তো তারা নিজেদের ইচ্ছেটা বেছে নিক। কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। সাকিব-তামিম একটা সিরিজ না খেললে ওই জায়গায় নতুন কাউকে সুযোগ দেয়া হবে। আবার ওরা ফিরলে ওই ছেলেটার কি হবে?'
'এখানে সাকিব না খেললেও কোন সমস্যা না, আই ডোন্ট কেয়ার। আমি মনে করি বিসিবিও কনসার্ন না, আমরা চাই যে সাকিব খেলুক। কিন্তু ওর যদি মনে না চায় যে কোন এক ফরম্যাট খেলবো না বা দুই ফরম্যাটে খেলব না তো সে বলুক। একটা সময় আমিও ভয় পেতাম যে এই ছেলেগুলো না থাকলেও বাংলাদেশ দল কোথায় যাবে। কিন্তু এখন আমি আর ভয় পাই না।'
সাকিব নিজের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা বিসিবির সঙ্গে আলাপ না করেই ঠিক করাতেই সংকটের তৈরি বলে ধারণা খালেদ মাহমুদের। তিনি কড়া ভাষায় হুশিয়ারি করে বলেন, কোন ক্রিকেটারেরই বিসিবিকে খবরদারি করার অধিকার নাই, 'ইউ কান্ট ডিক্টেট বিসিবি। ইফ ইউ ডোন্ট প্লে, ডোন্ট প্লে। তোমার বিরতি নিতে মন চায় পুরো দমে নাও, কেউ তো তোমাকে আটকাচ্ছে না। আমাদের প্রেসিডেন্টও এটাই বলতে চান। আমি জোরে বললাম, উনি আস্তে বলেছেন।'
'শেষ কল অবশ্যই বিসিবির। ওরা বিসিবির প্রোডাক্ট। বিসিবি ওদের প্রোডাক্ট না। বিসিবির জন্যই ওরা। ওরা মেইন স্টেকহোল্ডার হতে পারে কিন্তু ওদের পেছনে অনেক ইনভেস্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর তো কেউ না।'
আইপিএলের নিলামের আগে সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজের সময়টায় নিজেকে ফাঁকা রেখেছিলেন। তার শুধু সেখানে ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা ছিল। কিন্তু আইপিএলে দল না পাওয়ায় পরিস্থিতি বদলে যায়। সেই কথাও জানান সুজন, 'সাকিব যেহেতু আইপিএল খেলতে যাচ্ছে না তখন বলা হয়েছে তুমি কি টেস্ট খেলবে, সে বলেছে ইয়েস। তখন তার নাম দলে দেয়া হয়েছে। এখন দেখেন আইপিএলে যদি দল পেত, তাহলে খেলতে যেত না? বোর্ড কেন রিকোয়েস্ট করবে? এখানে বোর্ড ডিক্টেড করবে। কারণ সে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রয়োজন অপরিসীম। কিন্তু ওদের ছাড়া দল হবে না এমন না।'
'তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। কিন্তু তারা না খেললে যে দেশের ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাবে তা না। নিউজিল্যান্ডে তো সাকিব-তামিম-রিয়াদকে ছাড়াই আমরা জিতেছি। তাদের জায়গায় অন্য যারা সুযোগ পাবে তাদের জন্য বড় সুযোগ হবে। তারা ভাল করছে।'
Comments