দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত নন সাকিব

Shakib Al Hasan
সাকিব আল হাসান। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বাংলাদেশের আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত নন সাকিব আল হাসান। এই তারকা অলরাউন্ডারের মতে, বর্তমানে তার যে মন-মানসিকতা, এই পরিস্থিতিতে খেলতে নামলে জাতীয় দলের সতীর্থদের ও দেশের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।

রোববার দুবাইয়ের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রিকেটার সাকিব।

সামনের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলবেন সাকিব। এদিন দলটির জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি। এরপর দুবাই যাওয়ার আগে তিনি বলেছেন, আসন্ন সফরের জন্য কোনো দিক থেকেই তৈরি নন, 'আমার মনে হয় না এমন মন-মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলাটা ঠিক হবে। আমি এই কথা জালাল ভাইয়ের (বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস) সঙ্গেও আলাপ করেছি। জালাল ভাই বলেছেন, দুই দিন উনিও চিন্তা করবেন। আমাকেও চিন্তা করার সময় দিয়েছেন। এরপরই আসলে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে বলে আমি মনে করি।'

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজে খেলার সম্মতি দিলেও সাকিবের টেস্ট সিরিজে খেলা নিয়ে আগে থেকেই ছিল অনিশ্চয়তা। টেস্ট সিরিজ চলাকালে আইপিএলে ব্যস্ত থাকার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু আইপিএলের সবশেষ মেগা নিলামে দল পাননি সাকিব। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় গোটা সিরিজে তাকে পাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয় টাইগারদের।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সিরিজ চলাকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন জানান, সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজে খেলবেন। এরপর তাকে রেখেই আসন্ন সফরের ওয়ানডে ও টেস্ট দল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার নতুন বক্তব্যের পর তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া নিয়ে ফের সংশয় তৈরি হয়েছে।

আফগানদের বিপক্ষে নিজেকে দলের চালিকাশক্তি নয়, বরং কেবল একজন 'যাত্রী' মনে হয়েছে সাকিবের, 'আফগানিস্তান সিরিজে আমার মনে হয়েছে, আমি একজন "প্যাসেঞ্জার।" যেটা কখনোই থাকতে চাই না। খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি, পুরো সিরিজটাই, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে। চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি।'

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়। তবে তার আগে সাকিব জানিয়েছেন, বর্তমান শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে যাওয়া তার কাছে দেশ ও সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল, 'এখন পর্যন্ত যেরকম আমার মনে হয়েছে, আমার মন-মানসিকতা, শারীরিক অবস্থা ও মানসিক অবস্থা যদি এমন থাকে, এটা দলের জন্যই ক্ষতি হবে। যেটা আগেও বললাম, আমি নিজে যেটা মনে করি, আমার নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, মানুষ যে ধরনের পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করে, সেটা যদি আমি করতে না পারি, তাহলে "প্যাসেঞ্জার" হয়ে দলে থাকাটা খুবই দুঃখজনক হবে। এটা আমার সতীর্থদের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো হবে।'

'পাপন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আমি রাজিও হয়েছিলাম পুরো সিরিজটা খেলতে। কিন্তু এখন আমি আমার যে মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় দেখছি, তাতে আমার কিছু সময় দরকার বলে আমি মনে করি। সেটা এমনও হতে পারে যে যদি ওয়ানডে সিরিজে না খেলে টেস্ট সিরিজটা খেলতে পারি, তাহলে হয়তো ভালো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় থাকতে পারব। সেটা হতে পারে। এগুলো আসলে আলোচনার ওপর নির্ভর করবে। আমার বর্তমান পরিস্থিতি এটা। আমি মনে করি, যদি এই পরিস্থিতিতে আমি খেলতে যাই, তাহলে আমার সতীর্থদের ও দেশের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। এই জিনিসটা আমি কখনোই চাই না।'

বিসিবির কাছে সাকিবের ছয় মাসের জন্য টেস্ট থেকে ছুটি চাওয়ার খবর সম্প্রতি এসেছে গণমাধ্যমে। তবে তিনি পরিষ্কার করেছেন, আরও লম্বা সময় লাল বলের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে চান, 'আরেকটা বিষয় আছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি জেনেছি যে বোর্ডে আমি চিঠি দিয়েছিলাম ছয় মাসের জন্য। এটা কখনোই ছয় মাসের জন্য ছিল না। (চিঠিতে ছিল) এই বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত, সেটা বোধহয় মধ্যে নভেম্বর, সেই পর্যন্ত আমি কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলব না। আমি চাচ্ছিলাম যে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে, সাদা বলে মনোযোগ দিতে। যেহেতু পরপর দুই বছর দুটি বিশ্বকাপ আছে। আমি ওই জায়গাটাতে মনোযোগ দিতে চাচ্ছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, এই দুটি বিশ্বকাপে হয়তো বড় কিছু করা সম্ভব। এই কারণে ওটাতে পুরোটা ফোকাস করতে চাচ্ছিলাম।'

টেস্ট ক্রিকেট থেকে এখনই সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা অবশ্য নেই সাকিবের, 'এর মানে এই না যে টেস্ট ক্রিকেট একেবারেই ছেড়ে দিতে যাচ্ছি। যেহেতু টেস্ট দলে একটা ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে এখন, তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার ক্যারিয়ারের এই সময়ে বয়স ও শারীরিক ফিটনেস সবকিছু মিলিয়ে, আমি যদি সাদা বলে এখন মনোযোগ দেই, আমি হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম।'

আগামী ১১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে যাত্রা করবে বাংলাদেশ দল। দুই দল খেলবে তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট। ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে আগামী ১৮ মার্চ। আর টেস্ট সিরিজ মাঠে গড়াবে ৩১ মার্চ।

Comments

The Daily Star  | English
The BNP has submitted 62 constitutional reform proposals to the Constitution Reform Commission.

BNP unveils vision for ‘rules-based’ society

The BNP yesterday submitted to the constitution reform commission its 62 recommendations designed to establish a rules-based structure and ensure checks and balances of power.

8h ago