লিটনদের দায়িত্ব নেওয়ার আরও এক সিরিজ

সংস্করণ ভিন্ন, প্রতিপক্ষ ভিন্ন, কন্ডিশনও ভিন্ন। তবে টানা দুটি সিরিজে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে মূল ভূমিকা ছিল দলের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ক্রিকেটারদের। নিউজিল্যান্ডে টেস্টে অবিস্মরণীয় সাফল্যের পেছনে ছিলেন তরুণরা। ঘরের মাঠে এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জয়ে মূলত অবদান লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেনের।

জুনিয়র ক্রিকেটাররা দায়িত্ব নিতে পারেন না বলে একটা সময় হাহাকার ছিল দেশের ক্রিকেটে। মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ মিলে আছে ৮৭৩ ওয়ানডের অভিজ্ঞতা। ম্যাচ খেলার দিক থেকে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতম দলগুলোর একটি।

কিন্তু ঘরের মাঠে এবার অভিজ্ঞ তারকারা কেউ কেউ ছিলেন একেবারে ফ্লপ, কেউ কেউ ছিলেন সাদামাটা। তিন ম্যাচে অধিনায়ক তামিম করেন মোটে ৩১ রান। একই বোলারের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই একইভাবে আউট হয়েছেন তিনি।  সাকিবের ব্যাট থেকে তিন ম্যাচে এসেছে ১০, ২০ ও ৩০ রান। শুরুটা পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি।

বল হাতে সাকিব পেয়েছেন ৫ উইকেট। প্রথম ম্যাচে শুরুতে খরুচে বল করে পরে নেন ২ উইকেট। পরের ম্যাচে অবশ্য ভাল বল করেই নেন ২ উইকেট। শেষ ম্যাচে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেননি, নিয়েছেন ১ উইকেট। অবশ্য এই ৫ উইকেটই বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

মুশফিক প্রথম ম্যাচে আউট হন ৩ রান করে। দ্বিতীয় ম্যাচে লিটনের সঙ্গে রেকর্ড ২০২ রানের জুটিতে করেছিলেন ৮৬ রান। শেষ ম্যাচে আবার ব্যর্থ তিনি। করেন কেবল ৭ রান। উইকেটের পেছনে সময়টাও ভাল যায়নি। শেষ ম্যাচে মুশফিকের হাত থেকে পড়ে যায় দুই ক্যাচ। একটি সহজ স্টাম্পিং করেছেন দুইবারের চেষ্টায়।

সিনিয়রদের আরেকজন মাহমুদউল্লাহর পারফরম্যান্স ভুলে যাওয়ার মতই। তিন ম্যাচে তিনি করেছেন ৪৩ রান। দুইবারই অপরাজিত থাকায় গড়টাও ৪৩! কিন্তু এই পরিসংখ্যান বোঝাচ্ছে না তার বাজে পারফরম্যান্সের আসল দশা। ব্যাটিং পজিশন অনুযায়ী তার কাছে চাওয়া দ্রুত রান। কিন্তু তিন ম্যাচে এই রান করতে তিনি খেলেছেন ৭৯ বল। মারতে পারেননি একটাও বাউন্ডারি।

তার ফিল্ডিং ছিল হতশ্রী।  ছেড়েছেন সহজ দুই ক্যাচ। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ছিল খুবই দুর্বল। ফিল্ডিং মিস করেছেনে একাধিকবার।

সর্বোচ্চ রানে লিটনের আশেপাশে কেউ নেই

প্রথম ওয়ানডেতে মাত্র ১ রান করেছিলেন লিটন। বাকি দুই ম্যাচে পুষিয়ে দেন সবটা। দ্বিতীয় ম্যাচে ১২৬ বলে করেন ম্যাচ জেতানো ১৩৬ রান। শেষ ম্যাচে একাই টেনেছেন দলকে। তার ব্যাট থেকে আসে ৮৬ রান, বাকি সবাই মিলে করেন ৯৭ রান।

৩ ম্যাচে ৭৪.৩৩ গড় আর ৯০.২৮ স্ট্রাইকরেটে লিটনের মোট রান ২৩৩। দুই দল মিলিয়েই যা ঢের এগিয়ে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আফগানিস্তানের রহমত শাহর ১৩৩। তিন, চারেও দুই আফগান নাজিবুল্লাহ জাদরান (১২২), রাহমানুল্লাহ গুরবাজ (১২০), ১১১ রান নিয়ে পাঁচে আফিফ। মিরাজ তিন ম্যাচে দুই ইনিংস ব্যাট করে করেছেন ৮৭ রান।

সিরিজে বাংলাদেশ যে দুটি ম্যাচ জিতেছে তার একটিতে ম্যাচ সেরা মিরাজ, আরেকটিতে লিটন। সিরিজ সেরাও লিটন।

প্রথম ম্যাচে ২১৬ রান তাড়ায়  ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন খাদের কিনারে, তখন সপ্তম উইকেটে ১৭৪ রানের রেকর্ড জুটিতে অবিশ্বাস্য এক জয় পাইয়ে দেন আফিফ ও মিরাজ। দলের হাল ধরা, দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস টানা, শেষটায় নিখুঁত ফিনিশিং। সবটায় ছিল পরিণত ক্রিকেটের ছোঁয়া।

যেমনটা সিরিজজুড়েই করতে দেখা গেছেন লিটনকে। পরিস্থিতি বুঝে শুরুতে সময় নেওয়া, দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে ঠিক সময়ে ডানা মেলে দ্রুত রান বাড়ানো। কাজটা সাবলীলভাবেই করেছেন তিনি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাই স্পষ্ট প্রাধান্য দলের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ক্রিকেটারদের। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতানোর পর লিটন বলেছিলেন, 'আমরা সিনিয়র হচ্ছি না? আমাদের খেলাও তো উন্নতি হচ্ছে।' তার কথার প্রতিচ্ছবি আগামী সিরিজে পাওয়া গেলেও পালাবদলের এক সুর বাজতে পারে দেশের ক্রিকেটে।

 

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

2h ago