শৈল্পিক সেঞ্চুরিতে লিটনের যত কীর্তি

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

রশিদ খানের বলটা ছিল গুড লেংথের। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। শৈল্পিক ঢঙে কাট করে পয়েন্ট দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিলেন লিটন দাস। কব্জির নিপুণতায়, একেবারে অনায়াসে, প্রশ্নাতীত দক্ষতা আর সামর্থ্যের জানান দিয়ে।

তারকা লেগ স্পিনার রশিদের হতাশ মুখাবয়ব বলে দিচ্ছিল লিটন কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলছিলেন। তিনি রীতিমতো অসহায় করে ফেলেছিলেন আফগানিস্তানের বোলারদের। তার ওই শটে বল যখন সীমানার দিকে গড়িয়ে যাচ্ছিল, রশিদ তখন চিবুকে হাত রেখে চেয়ে চেয়ে কেবল দেখছিলেন। আর কী-ই বা করার ছিল তার!

নিজের পরের ওভারেই রশিদ দারুণ এক উপহার দিলেন লিটনকে। ৯৮ রানে ব্যাট করতে থাকা লিটনকে অনেকটা ঝুলিয়ে দিলেন বল। বাংলাদেশের তারকা ওপেনার সুযোগটা লুফে নিলেন দারুণভাবে। কভারের উপরের দিকে খেললেন আরেকটি নান্দনিক শট। চার হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেতে উঠলেন উদযাপনে।

কোনো বুনো উল্লাস নয়। লিটনের স্বভাবটাই যে এমন! শুক্রবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে হেলমেট খুলে চুমু আঁকলেন সেটাতে লেপ্টে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের লোগোতে। উঁচিয়ে ধরলেন দুই হাত। অন্যপ্রান্তে থাকা মুশফিকুর রহিমের উচ্ছ্বাসই বরং ছিল বেশি। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন সতীর্থকে। আলতো করে টোকাও মারলেন লিটনের মাথায়। যেন বোঝাতে চাইলেন, 'দেখ! তুই কী করতে পারিস!'

সেঞ্চুরি পূরণ করে মারমুখী হয়ে ওঠেন লিটন। তিন অঙ্ক পর্যন্তও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান আনছিলেন। শুরুতে সময় নিয়ে ক্রিজে মানিয়ে নিয়ে মেলে ধরেন ভাণ্ডারে থাকা অস্ত্রের পসরা। ড্রাইভের পাশাপাশি খেলেন অনেকগুলো কাট ও ফ্লিক। ১০৭ বলে পৌঁছে যান ব্যক্তিগত মাইলফলকে। এরপর তার ব্যাট হয়ে ওঠে আরও দুর্বার। তার নজরকাড়া ইনিংসের ছক্কাগুলো আসে এ সময়েই।

বাংলাদেশের ৪ উইকেটে ৩০৬ রানের বিশাল সংগ্রহে ১২৬ বলের ইনিংসে ১৬ চারের সঙ্গে দুটি ছয় মারেন লিটন। দুটিই ফজল হক ফারুকির বলে, দুটিই মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। অথচ আগের ম্যাচে এই বাঁহাতিই নাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে। তার প্রথম শিকার ছিলেন লিটন। এদিন তাই পাল্টা জবাবের চিত্রও আঁকা হলো।

ব্যাটকে তুলি, বলকে রং আর মাঠকে ক্যানভাস বানিয়ে আফগান বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরান লিটন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিকে তিনি টেনে নেন ১৩৬ পর্যন্ত। ডানহাতি পেসার ফরিদ আহমাদকে সীমানাছাড়া করতে গিয়ে থামে তার আগ্রাসন। ক্যাচটি লুফে নেন মুজিব উর রহমান।

গোটা ইনিংসে কেবল একটিই খুঁত ছিল। ৮৭ রানে থাকাকালে অফ স্পিনার মুজিবের বলে লিটন তুলেছিলেন সহজ ক্যাচ। কিন্তু শর্ট কভারে থাকা আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি লুফে নিতে পারেননি। তার হাত ফসকে বেরিয়ে যায় ক্যাচ। দ্বিতীয় জীবন পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগান লিটন।

ওয়ানডেতে মাত্র ৪৯ ইনিংসে পাঁচটি সেঞ্চুরি হয়ে গেল লিটনের। বাংলাদেশের হয়ে এত দ্রুত পাঁচবার শতরান করতে পারেননি আর কেউ। তার ত্রিসীমানাতেও নেই বাকিরা। আগের কীর্তি ছিল সাকিব আল হাসানের দখলে। তার লেগেছিল ৯৩ ইনিংস।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিকের সঙ্গে ১৮৬ বলে ২০২ রান যোগ করেন লিটন। এই উইকেটে এই সংস্করণে এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটি। আগের রেকর্ড ছিল ১৭৮ রানের। ২০১৬ সালে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেদিনও ছিলেন মুশফিক, তার সঙ্গী ছিলেন তামিম ইকবাল।

ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের দুইশ রানের জুটি আগে ছিল চারটি। লিটন ও মুশফিকের জুটি স্থান পেল তালিকার পঞ্চম স্থানে। সর্বোচ্চ ২৯২ রানের জুটিতেও রয়েছে লিটনের নাম। ২০২০ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গে মিলে তিনি এনেছিলেন ২৯২ রান।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওয়ানডেতে লিটনের ১৩৬ রানই কোনো ব্যাটারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল জিম্বাবুয়ের শন উইলিয়ামসের। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি করেছিলেন অপরাজিত ১২৯ রান।

৫০ ওভারের ক্রিকেটে লিটনের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে বাংলাদেশের আর কেবল তিন জনের। তারা হলেন বর্তমান অধিনায়ক তামিম (১৪), সাকিব (৯) ও মুশফিক (৮)। লিটন এদিন টপকে গেলেন শাহরিয়ার নাফিস ও ইমরুল কায়েসকে। দুজনের নামের পাশে সেঞ্চুরি আছে চারটি করে।

Comments

The Daily Star  | English

Exporters caught off guard by India’s import curbs

Hundreds of trucks carrying India-bound goods were either stuck or forced to leave without offloading goods at several Bangladeshi land ports yesterday.

7h ago