তরুণরা সিগন্যাল দিচ্ছে: মুমিনুল

mominul haque
ছবি: এএফপি

বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে মুমিনুল হকের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ স্কোয়াড নিয়ে এসেছে দেশের ইতিহাসের স্মরণীয়তম জয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও খাদের কিনার থেকে দলকে দুর্দান্ত জয় পাইয়ে দিয়েছেন দুই তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এটা কি তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন যুগের সূচনা? এই ব্যাপারে দ্য ডেইলি স্টারকে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয় নিয়ে

মুমিনুল হক: যখন রিয়াদ ভাই আর সাকিব ভাই ক্রিজে  ছিল তখন মনে হয়েছে না তারা হয়ত পারবেন। কারণ এই ধরণের পরিস্থিতিতে তো তারা আগেও জিতিয়েছেন। উনারা আউট হওয়ার পরে দেখলাম মিরাজ আর আফিফ নামছে। একদিক থেকে মনে হচ্ছিল (হয়ত সম্ভব,...আপনারা জানেন চট্টগ্রামের উইকেট সব সময়ই ভাল। যত সময় যায় তত উইকেট ভাল হয়। এই একটা জিনিস আমার মাথার ভেতর ঘুরছিল যে ওরা যদি (দ্রুত) রান নাও করে ৫০ ওভার ব্যাট করলে ম্যাচটা জিততে পারব।  আফিফ-মিরাজ খুব ক্যালকুলেটিভ খেলেছে। ওদের মূল বোলার যারা ছিল যেমন নবি, রশিদ এদের কিন্তু অ্যাটাক করেনি। গুলবদিনকে করেছে। পেস বোলারদের মোটামুটি এরা (মেরে) খেলেছে। আফিফ একটা বলও উপরে মারেনি, খালি প্রথম একটা ছয় মারা ছাড়া। সব নিচ দিয়ে মেরে রানের চাকা সচল রেখেছে। যখন এভাবে খেলছে তখন মনে হচ্ছিল জিতব। জিতলেই আমরা এই ৪ উইকেটেই জিতব। মিরাজ সম্পর্কে আমি জানি। আফিফের সঙ্গে ওইভাবে খেলা হয়নি। মিরাজকে খুব ভাল জানি, কারণ আমার সঙ্গে টেস্ট ম্যাচে ছিল। ও সব সময় আত্মবিশ্বাসী থাকে। পারুক না পারুক আত্মবিশ্বাস রাখে। ভয়ে ছিলাম ও ভাল খেলতে খেলতে মাঝেমাঝে একটা অকোয়ার্ড শট খেলে, আলহামুদিল্লাহ এবার এটা করেনি। যেটা টেস্ট ম্যাচে করত, এখন পরিণত হয়েছে।

এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভাল একটা ইতিবাচক দিক। সিনিয়ররয়া সব সময় করেছেন। এখন জুনিয়ররা যদি এরকম করে তাহলে উনাদেরও সাহস থাকবে। কারো উপর কারো বিশ্বাস না থাকার কাজ করবে না। সবার ভেতর বিশ্বাসটা থাকবে যে আমি আউট হয়েছে আমার জুনিয়ররা পারবে। এমনকি আপনারাও, দর্শকরাও এই বিশ্বাসটা রাখবেন। তবে কেবল একবার না, ধারাবাহিকভাবে যদি হয় তাহলে ভাল হবে আরকি।

তরুণদের পারফরম্যান্স, বাংলাদেশ দলের উজ্জ্বল আগামী

মুমিনুল: এরকম সিগন্যাল কিন্তু দিচ্ছে। আপনার অফিসের কথাও যদি বলেন। সিনিয়ররা যখন অবসর নেয় বা নেওয়ার সময় হয় তখন জুনিয়ররা সিগন্যাল দেয়। তবে সিগন্যাল দিলে খালি হবে না। এর আগে যেটা বললাম পুরো পৃথিবীর মানুষ রেজাল্টটা চোখে দেখলেই বিশ্বাস করে। আমি যতক্ষণ রেজাল্ট দেখব না ততক্ষণ বিশ্বাস করব না। টেস্ট ম্যাচে হয়েছে, ওয়ানডেতে হচ্ছে এইগুলা আমি, আপনি দেখেছি বলে বিশ্বাস করেছি। এরকম দেখাতে হবে। একদিনের কাজ না এরকম আরও দিনের পর দিন দেখাতে হবে। যে জেতাবে তারও বিশ্বাস আসবে যে আমি পারি। যেমন মিরাজ আর আফিফ যখন পরে এমন পরিস্থিতিতে আবার ব্যাট করবে তখন প্রত্যাশা থাকবে এরা পারবে, ওদের নিজেদের ভেতরেও প্রত্যাশা থাকবে। এখন চ্যালেঞ্জ হলো এটা নিয়মিত করা।

জুনিয়রদের দায়িত্ব

মুমিনুল: জুনিয়ররদের দায়িত্বের কথা বললে হয়ত চাপ হিসেবে কাজ করবে। দায়িত্বের কথা বললে প্রত্যাশা বেড়ে যায়, প্রত্যাশা বাড়লে চাপ। চাপ বাড়লেই মনে করেন আপনি ঘায়েল হয়ে যেতে পারেন। এভাবে চিন্তা না করে মনে হয় একত্রিতভাবে দল হিসেবে সবাই মিলে অবদান রাখতে পারি তাহলে ম্যাচ জিততে পারব। বাংলাদেশের জয়গুলো দেখেন। টেস্ট বলেন, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি বেশিরভাগ ম্যাচ পরিসংখ্যান দেখেন দল হিসেবে ভাল খেললে আমরা ম্যাচ জিতি। ব্যাটিং, বোলিং ফিল্ডিংয়ে যেন অবদান রাখি। অধিনায়ক হিসেবে আমি যদি কোন জুনিয়রকে বলি, 'তোর দায়িত্ব এটা, তোর ওটা'।  তাহলে চাপ হয়ে যায়। জিনিসটা হচ্ছে উপভোগ করার। দল হিসেবে যেন খেলতে পারি।

বাংলাদেশ টাইগার্সের সঙ্গে বগুড়ায় প্রস্তুতি ক্যাম্প, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে প্রস্তুতি

মুমিনুল: বগুড়ার উইকেটটা অন্যান্য উইকেটের থেকে বেশ স্পোর্টিং। মিরপুরে কোনভাবে সম্ভব না, চট্টগ্রামেও না। আর বগুড়ায় যেমন বলবেন তেমন উইকেট বানিয়ে দেবে। তার মানে এই না যে আমি ওখান থেকে গিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ বা একটা টেস্ট ম্যাচ জিতে আসব।  বিষয়টা হলো আমি একটা প্রক্রিয়ার ভেতর থাকব। এটাই। এটা করলেই যে রেজাল্ট বের করে ফেলব এমন কিছু না সত্যি কথা বলতে। আমি একটা প্রক্রিয়ার ভেতরে থাকলাম। আমার মূল প্রস্তুতিটা হবে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে যে কদিন অনুশীলন করব সেটা। কারণ ওখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশের আবহাওয়া থেকে ভিন্ন। কাজেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে টেস্ট ট্যুরের আগে একটা প্রস্তুতির ভেতর থাকা টেস্ট দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে। এটাই আরকি।

এরপর সামনে সব বড় বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ আছে। তারপর আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ট্যুর। আরও কঠিন ওইটা, ডিউক বলে খেলা। এইগুলা আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে হবে। কাজ করতে হবে অনেক।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লক্ষ্য

মুমিনুল: অতো কিছু আমি চিন্তা করছি না। আমার পরের খেলা দক্ষিণ আফ্রিকায়, এটা নিয়েই ভাবছি। দলের যারা টেস্ট খেলবে তাদের সবার চিন্তা এই সিরিজ নিয়েই। ওইটাতে আমরা কীভাবে ভালো করতে পারি। দুই ম্যাচ নিয়েই ফোকাস করব। প্রত্যাশা তো বেড়েছে। বোর্ড থেকে, প্লেয়ারদেরও, নিজেদের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে যেহেতু। ওরকম জয়ের (নিউজিল্যান্ডে) পর নিজেরাই এটা বাড়িয়ে ফেলেছি। ওই প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের খেলতে হবে।

অত বড় চিন্তা করে লাভ নাই। আমরা ওরকম দল হই না যে ধাপ করে বললাম চক্র শেষে আমি পাঁচ, বা ছয় বা অত নম্বর হবো। এরকম হওয়ার মতো আমাদের দল এখনো না। তবে ওয়ানডেতে বলতে পারেন কারণ ওয়ানডে দল খুবই ভাল। এক বছর পর বা চার বছর পর বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলতে পারি। টেস্ট দল ওইভাবে হয়নি। টেস্ট দল হতে গেলে আরও দুই তিন বছর সময় লাগবে। আর মানসিক প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে টেস্টে। মানসিকভাবে যত শক্তিশালী হবেন তত কঠিন ব্যাপারটা তত কমবে আরকি।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch political party by next February

Anti-Discrimination Student Movement and Jatiya Nagorik Committee will jointly lead the process

10h ago