ইউক্রেন যেভাবে পারমাণবিক অস্ত্রহীন দেশে পরিণত হয়েছে

১৯৯৬ সালে ইউক্রেনের একটি ক্ষেপনাস্ত্র সাইলো ধ্বংস করা হচ্ছে। ছবি: এপি

বেশ কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেন, নিরুপায় হয়ে তিনি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের আদেশ দেন। এ পরিস্থিতিতে পুরনো একটি প্রসঙ্গ আবারও সামনে এসেছে।

সাবেক সোভিয়েত আমলে ইউক্রেন একটি পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন অঞ্চল ছিল। এমনকি, প্রায় ৩ দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশ ইউক্রেন অল্প কিছু দিনের জন্য বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। সেসব অস্ত্র এখন কোথায় আর কেনই বা ইউক্রেন তার সদ্ব্যবহার করেছে না, এ রকম প্রশ্ন অনেকের মনেই দেখা দিচ্ছে।

১৯৯৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এস২৪ পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংস করা হচ্ছে । ছবি: রয়টার্স

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইউক্রেনের মাটিতে হাজারো পারমাণবিক অস্ত্র থেকে গেলেও দেশটি পরবর্তী বছরগুলোতে স্বেচ্ছায় পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের উদ্যোগ নেয়।

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস (এফএএস) নামে একটি অলাভজনক পলিসি গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান তাদের বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া। এ আশ্বাসের ভিত্তিতে দেশগুলো ১৯৯৪ সালে বুদাপেস্ট স্মারক নামে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি সই করে।

চুক্তি সইয়ের আগে ইউক্রেনের কাছে ১৭৬টি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) লঞ্চার এবং ১ হাজার ২৪০টি ওয়ারহেড (ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায় বসানোর জন্য ব্যবহৃত বিস্ফোরক উপকরণ) ছিল। ১৩০টি এসএস-১৯এস লঞ্চারের মাধ্যমে ৬টি করে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করা সম্ভব ছিল। এ ছাড়া, বাকি ৪৬টি এসএস-২৪এস লঞ্চারের মাধ্যমে ১০টি করে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতা ছিল ইউক্রেনের।

ইউক্রেনে ১৪টি এসএস-২৪ ক্ষেপণাস্ত্র ছিল কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে ওয়ারহেড যুক্ত করা ছিল না। স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম বেশ কয়েক ডজন বোমারু উড়োজাহাজও ছিল তাদের হাতে, যেগুলোর সঙ্গে প্রায় ৬০০ আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্র্যাভিটি বোমা সংযুক্ত ছিল।

সেই সঙ্গে ৩ হাজার ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে মোট ৫ হাজার স্ট্র্যাটেজিক ও ট্যাকটিক্যাল (দীর্ঘ ও স্বল্প পাল্লার) পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিল ইউক্রেনের অস্ত্রাগার।

ইউক্রেনের তৎকালীন নেতা লিওনিদ ক্রাভচুক জানান, ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র রাশিয়ায় পাঠানোর ব্যাপারে তিনি 'চিন্তিত নন।' তবে পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টান এবং ১৯৯২ সালের ১২ মার্চ থেকে সাময়িকভাবে নিরস্ত্রীকরণ স্থগিত রাখেন। 
তবে ১৯৯৬ সালের জুনে ইউক্রেন ঘোষণা দেয়, তাদের দেশ থেকে সব ওয়ারহেড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ইউক্রেনের একজন সামরিক কর্মকর্তা ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংস কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়াকে ১১টি স্ট্র্যাটেজিক বোমারু বিমান ও ৬০০টি আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার হাতে তুলে দেয় ইউক্রেন। রাশিয়া থেকে আমদানি করা জ্বালানি গ্যাসের বকেয়া মূল্য বাবদ এ অস্ত্রগুলো তাদের হাতে তুলে দেয় ইউক্রেন। তবে ১৯৯৬ সালেই এ উড়োজাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো থেকে সব ধরনের পারমাণবিক সক্ষমতা সরিয়ে ফেলা হয়।

ইউক্রেন ১৯৯৭ সালে বাকি ক্ষেপণাস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের জন্য নির্মিত সাইলো ও লঞ্চ সাইট (যেখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়) ধ্বংস করতে রাজি হয়। এ কার্যক্রমের জন্য দেশটি নুন লুগার সমবায় হুমকি হ্রাস প্রকল্পের আওতায় ৪৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান পায়। ২০০১ এর মধ্যে সব আইসিবিএম সরিয়ে নেওয়া হয়।

২০০২ সালে ইউক্রেন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্তার প্রতিরোধক হেগ আচরণবিধিতে সাক্ষর করে।

বস্তুত সে সময় থেকেই ইউক্রেনের পারমাণবিক সক্ষমতা শুধুমাত্র বেসামরিক কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

বর্তমানে, পূর্ব ইউরোপে সামরিক বাহিনীর কলেবরের দিক দিয়ে রাশিয়ার পরেই ইউক্রেনের অবস্থান। তাদের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ, যাদের মধ্যে নিয়মিত সদস্য ২ লাখ ১৫ হাজার। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক ঘোষণায় দেশের প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি ২০২৫ এর মধ্যে আরও ১ লাখ সেনা বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানান। উল্লেখ্য, রাশিয়ার সেনাবাহিনী সারা পৃথিবীর মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম বাহিনী। 

১০ লাখ নিয়মিত সদস্য ও ২ লাখ বাড়তি সেনার সমন্বয়ে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। 

হয়তো সোভিয়েত আমলের পারমাণবিক সক্ষমতার ছিটে-ফোঁটা থেকে গেলেও চলমান সংকটে ইউক্রেন আরও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতো, ভাবছেন অনেকেই।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

11h ago