রিপনের কাছে ‘বেবি এবির’ উইকেটটাই বিশেষ
এবারের যুব বিশ্বকাপে চরম হতাশার মাঝে বাংলাদেশ দলে আলোর রেণু ছড়িয়েছেন ডানহাতি পেসার রিপন মণ্ডল। ১৮ পেরুনো এই তরুণের গতি, বাউন্স, আগ্রাসন এরমধ্যেই আভাস দিচ্ছে উজ্জ্বল আগামীর। ৬ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে রিপন জায়গা করে নিয়েছে আইসিসির যুব বিশ্বকাপের সেরা দলে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে এই তরুণ প্রকাশ করেছেন তার উচ্ছ্বাস।
বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিলেন, নিজের পারফরম্যান্সে কতটা খুশি
রিপন মণ্ডল: ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে খুশি। কিন্তু দল হিসেবে খুশি না। দল হিসেবে আরও ভালো করতে পারলে ভালো লাগত। দল হিসেবেও অবশ্য আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু এবার হয়নি। কোয়ার্টার ফাইনালের কথা যদি বলি ধরেন ভারতের বিপক্ষে টসটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকে উইকেট ভেজা ছিল। টসটা আমরা জিতলে কে জানে এবারও গল্পটা ভিন্ন হতে পারত।
আইসিসির সেরা একাদশে জায়গা পেলেন, অনুভূতিটা কেমন
রিপন: এটা অনেক ভাল লেগেছে। যখন আমরা দুবাই থেকে ল্যান্ড করেছি ঢাকা এয়ারপোর্টে তখন নেট চালু করে দেখি অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছে। স্যাররাও অভিনন্দন জানিয়ে। এই জিনিসটা অনুপ্রেরণাদায়ক।
ক্রিকেটে এই পর্যায়ে আপনার উঠে আসার গল্পটা যদি বলেন
রিপন: ছোট বেলা থেকে টেপ টেনিস খেলতাম। এক বড় ভাই ছিল শরিফ ভাই, উনি ক্রিকেটার ছিল প্রথম বিভাগে খেলেছে। উনি আমাকে বলল, "তুই একটা একাডেমিতে ভর্তি হ ভাল কিছু হবে ইনশাল্লাহ।" তারপর আমি একাডমিতে ভর্তি হই। আমার একাডেমির নাম গ্লোভাল একাডেমি, এটা মহাখালিতে ছিল। এখন তেজগাঁ চলে গেছে। ওখানে অনুশীলন করতাম। এরপর তৃতীয় বিভাগে দল পাই। প্রথমবার ম্যাচ খেলা হয়নি, দলের সঙ্গে ছিলাম। পরের বছর ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নেই। এরপর কোচ হিসেবে পাই হন মঞ্জু স্যারকে, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু। উনারা আমাকে প্রথম বিভাগে সূর্যতরুণের দল পাইয়ে দেন। ওই বছর (২০১৯) ১২ ম্যাচে আমি ২৭ উইকেট পাই। ঢাকা প্রথম বিভাগে হাইয়েস্ট উইকেট টেকার হই। তখন নাদিফ চৌধুরী আমাকে সাহায্য করেন। আমি প্রিমিয়ার লিগের নেটে বল করতাম, সেখান থেকে পরিচয়। একসঙ্গে অনুশীলন করতাম। উনি তখন বলে- "তোমার ত বয়স (১৯ এর কম) আছে। আমি নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলি। আমি ব্যবস্থা করে দেব, বাকিটা তোমার উপর।" এভাবেই আসলে সবার সাহায্য ধাপে ধাপে এগিয়ে আসতে পেরেছি।
পেস বোলারই হতে চেয়েছিলেন,
রিপন: ছোটবেলা থেকেই পেস বলই করতাম।
কোন জায়গা নিয়ে কাজ করেন বেশি
রিপন: আমাদের যে কোচ তালহা জুবায়ের উনি লাইন লেন্থ নিয়ে বেশি কাজ করেছে। উনি এমনভাবে কাজ করেছে যেন আমরা ছয়টা বল একজাগায় করতে পারি। মানে একুরেসি নিয়ে কাজ করেছে। গতি তো ছিলই। বিশ্বকাপে ১৩৬ কিমিতে বল করেছি। এটা বাড়ানো নিয়েও কাজ করছি। আশা করি সময়ের সঙ্গে গতি আরও বাড়বে। আর বাউন্সটা আমি ভাল পাই।
এমনিতে নিজের সহজাত শক্তির জায়গা কি?
রিপন: আমি ডেথ ওভারের ভাল বল করি। ব্যাটসম্যানদের অ্যাটাক করতি পারি। এছাড়া আমি দুই দিকে স্যুইং করাতে পারি।
আপনার তো ব্যাটিং বেশ ভালো। প্রপার শট খেললেন বিশ্বকাপে অনেকগুলো
রিপন: ছোটবেলা থেকে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংও করতাম। যখন বল করি আমি বোলার, যখন ব্যাট নিয়ে নামি তখন ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তবে মূল ফোকাস বোলিংয়েই।
এবারের বিশ্বকাপে স্মরণীয় বোলিং কোনটি বলবেন
রিপন: কানাডার সঙ্গে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হলাম ওটা স্মরণীয়। ভারতের সঙ্গে ৪ উইকেট নিলাম। এই দুইটাই স্মরণীয়।
কোন ব্যাটসম্যানকে আউট করে বেশি ভাল লেগেছে?
রিপন: সাউথ আফ্রিকার ব্রেভিসকে আউট করে খুব ভালো লেগেছিল। যাকে এবিডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, বেবি এবি ডাকা হচ্ছে । প্রত্যেকটা উইকেটই ভাল লেগেছে কিন্তু ওরটা ছিল স্পেশাল। কারণ ও অনেক রান করছে।
দেশে ফিরে পরিবারের লোকজনের কি প্রক্রিয়া ছিল?
রিপন: পরিবারে আমি আর বাবা মা। বাবা-মা সব সময় আমার খেলাধুলোর ব্যাপারে হেল্পফুল। আমি যা চেয়েছি তারা সেটাই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা অনেক খুশি। দোয়া করেছে মন থেকে। আমার চলার পথে তারা সব সময় সাহায্য করছেন।
যুব পর্যায়ে তো খেলে ফেললেন, সামনে সিনিয়রর ক্রিকেট। আপাতত কি পরিকল্পনা?
রিপন: সামনে প্রিমিয়ার লিগ আছে যেহেতু, ওখানে যদি ভাল করতে পারি তাহলে… (উপরে যাওয়া যাবে)। শাইনপুকুরে খেলব। দেখা যাক।
Comments