উপকূলীয় এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পরিবেশ অধিদপ্তর নিষ্ক্রিয় কেন?
দেশের উপকূলীয় এলাকার হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহারের পর বর্জ্য হয়ে যায় এমন প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা আছে হাইকোর্টের। কিন্তু, এ নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারাটা হতাশাজনক।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে অধিদপ্তরকে ২০২১ সালের মধ্যে এই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ইতোমধ্যে ২ বছর কেটে গেলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমনকি হাইকোর্টের এ আদেশ প্রতিপালনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদনও জমা দেয়নি অধিদপ্তর।
তাহলে, এই ২ বছরে তারা কী করেছে? গত বছর দেশের ১২টি উপকূলীয় জেলায় প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে অধিদপ্তর এবং কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ ছাড়া, দৃশ্যমান আর কিছুই করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর যদি এমন একটি গুরুতর সমস্যার বিষয়ে এ ধরনের উদাসীনতা দেখায়- তাহলে হাইকোর্টের আদেশ মেনে না চলার দায় কি আমরা শুধু হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ মালিকদের ওপর দিতে পারি? তাদের জন্য তো এ ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করাই সুবিধাজনক।
পরিবেশবাদীরা মনে করেন, একবার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে যা যা করা দরকার, পরিবেশ অধিদপ্তরের তা করতে না পারার কোনো কারণ নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তারা সহজেই সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং যারা এ আদেশ মানছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এদিকে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষ প্লাস্টিক দূষণকারী দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার ২০২০ সালে এসে ৯ কেজি হয়েছে, যা ২০০৫ সালে ছিল ৩ কেজি। এসব প্লাস্টিকের বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত সাগরে গিয়ে পড়ে। এটি সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বের প্রতি দৃঢ় থাকা এবং এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাই হোক, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, এ ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ মালিকদের জন্য আরও ভালো ও টেকসই বিকল্প থাকা উচিত।
এক্ষেত্রে সরকারের একটি বড় ভূমিকা থাকতে হবে। যে সব বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে জৈব-পচনযোগ্য যেমন পাটের পলিমার কিংবা ভুট্টা জাতীয় শস্য থেকে বায়োডিগ্রেডেবল মোড়ক উদ্ভাবন করছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। পাটের ব্যাগের ব্যবহার জনপ্রিয় করেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমতে পারে। এসব বিকল্প উপায় বেছে নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকেই এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে তারা ইতোমধ্যে বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে এবং ৩ বছরের একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। এসব পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে তাদের মনোনিবেশ করতে হবে এবং কিছু সুফল নিয়ে আসতে হবে।
Comments