শাবিপ্রবি: ‘যিনি মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়েছেন তাকেও আটক করা হয়েছে’

শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে টানা ১২ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে। তবে এই আন্দোলনে অর্থ সহায়তার অভিযোগে ইতোমধ্যে রাজধানী থেকে শাবিপ্রবি'র সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে সিআইডি। আন্দোলনকারীদের মোবাইল ব্যাংকিং ও মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া, এই আন্দোলনে তৃতীয় একটি পক্ষ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। আজ শিক্ষকরা উপাচার্যের বাসভবনে খাবার পৌঁছে দিতে গেলে আন্দোলনকারীরা বাধা দিয়েছেন বলেও গুজব ছড়িয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে আজ মঙ্গলবার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমানের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়।

হাসিবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা নেই। পুলিশ সন্ধ্যার পর গেটের সবগুলো দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের খাবার ও চিকিৎসার জন্য কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী কিছু অর্থ সহায়তা দিচ্ছিলেন। এটা গোপন কিছু নয়। তারা বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে আমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছিলেন।

হাসিবুর রহমান। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

আন্দোলনে সাবেক শিক্ষার্থীদের সমর্থন ও সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'অনেক বেশি টাকা নয়। কেউ হয়তো ১ হাজার, কেউ ৫ হাজার, কেউ ৭ হাজার, অর্থাৎ যে যতটুকু পেরেছেন সহায়তা করেছেন। যিনি মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়েছেন তাকেও আটক করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, আমাদের আন্দোলন দমানোর জন্য তাদের আটক করা হয়েছে।'

'আমাদের উপাচার্য হয়তো চিন্তা করছেন যে, খাবারের জন্যই হয়তো আন্দোলনটা এখনো জমজমাট আছে। এগুলো নিয়ে আমরা মুক্ত আলোচনা করব। আমরা এখন গোল চত্বরে মুক্ত আলোচনায় বসেছি। আমরা এসব নিয়ে কথা বলব।

অবরুদ্ধ হয়ে থাকা উপাচার্যের বাসভবনে খাবার পৌঁছানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, 'গত পরশু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পুলিশ এবং সংবাদকর্মী ছাড়া কেউ উপাচার্যের বাসায় যেতে পারবেন না। সে হিসেবে উপাচার্যের বাসায় খাবার নিয়ে আসা শিক্ষকদের বলেছি, আমরাই উপাচার্যের বাসায় খাবারসহ যেকোনো ধরনের সহায়তা পৌঁছে দেব, আপনারা কেউ ভেতরে যেতে পারবেন না। আমরা পুলিশের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছি।'

'গতকাল উপাচার্যের বাসভবনে ঢোকার সময় এক নিরাপত্তারক্ষীর কাছে আমরা ফেনসিডিল পেয়েছি। তাই আমরা খাবার পরীক্ষা করে ভেতরে পাঠাচ্ছি। আজ আমরা খাবার ফিরিয়ে দিয়েছি কথাটি সত্য নয়। পুলিশের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে খাবার উপাচার্যের বাসায় পাঠিয়েছি।'

উপাচার্যের বাসভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, 'উপাচার্যের বাসার পাশে ডরমিটরি এবং কোয়ার্টারে আমাদের বেশ কিছু শিক্ষক এবং কর্মচারী আছেন। যাদের সঙ্গে আমাদের কোনো ঝামেলা নেই। আমাদের ঝামেলা উপাচার্যের সঙ্গে। এ কারণে তাদের কথা চিন্তা করে মানবিক বিবেচনায় আমরা সেখানকার বিদ্যুৎ-সংযোগ চালু করে দিয়েছি।'

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হাসিবুর রহমান বলেন, 'আমাদের এখানে মেডিকেল সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল থেকে আমাদের এখানে একটি টিম আসতো। এখন চাপে পড়ে বা অন্য কোনো কারণে তারা আসা বন্ধ করে দিয়েছে। যারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, তাদের আমরা অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা নিজেদের টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছি এবং সার্বক্ষণিক সেটি আমাদের সঙ্গে থাকছে।'

'প্রথমে আমরা ২৪ জন আমরণ অনশনে বসি। পরে একজনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও ৫ জন অনশনে বসেছে। এখন অনশনকারীর সংখ্যা মোট ২৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২০ জন এবং ক্যাম্পাসে আছে ৮ জন।'

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি রাখি এবং আমরা মনে করছি যে, তিনি যেহেতু সমগ্র দেশের অভিভাবক, সেহেতু তিনি এই ২৪ জনের জীবনের কথা চিন্তা করে একজন ইগোর কারণে যে গদি ধরে রেখেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা তিনি বন্ধ করবেন।'

আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সন্দেহের ব্যাপারে তাদের ভাবনার কথা জানতে চাইলে বলেন, 'আমরা প্রতিটি সিদ্ধান্ত মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে নিয়ে থাকি, যাতে কোনো পক্ষের ইন্ধন বা কোনো প্রশ্ন এখানে না থাকে। আন্দোলনকারী সবাইকে নিয়ে গোল চত্বরে বসে আমরা প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। পরবর্তীতেও আমরা একই পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেব।'

তিনি বলেন, 'আমাদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা হাসিল করছে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এই বিবৃতি সম্পূর্ণ ভুল। এখানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং সাংবাদিকরা আছেন, সবাই দেখছেন আমরা কীভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে নির্দিষ্টভাবে আমাদের কোনো নেতা নেই, সবার মতামতের ভিত্তিতেই আমরা যাবতীয় কাজ করছি। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষের ফায়দা হাসিলের সুযোগ আমরা রাখিনি। আমরা বার বার বলেছি, এটা শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এখানে তৃতীয় পক্ষের সুযোগ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং যদি কেউ নেয় তাহলে প্রশাসন যেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।'

'উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। যে উপাচার্য আমার ক্যম্পাসে আমার বুকে গুলি চালাতে পারেন, সেই উপাচার্যের কাছে আমরা নিজেদের আর নিরাপদ মনে করি না,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

36m ago