অভিবাসনমন্ত্রীর বিতর্কিত ‘ঈশ্বর শক্তি’ জোকোভিচকে নির্বাসনে সহায়তা করেছিল

অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনমন্ত্রী অ্যালেক্স হক ও বিশ্বসেরা টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনমন্ত্রী অ্যালেক্স হক তার 'ব্যক্তিগত ক্ষমতা' ব্যবহার করে বিশ্বসেরা টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচের ভিসা বাতিল করেছিলেন। দেশটির বেশ কয়েকজন ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞ এই ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং একে 'ঈশ্বর শক্তি' হিসেবে অভিহিত করেছেন।

জোকোভিচের নির্বাসন কাহিনীর পর অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনমন্ত্রীকে অভিবাসন আইনের অধীনে দেওয়া অসাধারণ ব্যক্তিগত ক্ষমতার ওপর আন্তর্জাতিক ফোকাসও পড়েছে।

অভিবাসন এবং স্বরাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রীরা, যারা অভিবাসন আইন পরিচালনা করেন, তাদেরকে ৪৭টি ব্যক্তিগত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতার অধীনে মন্ত্রীরা চরিত্রগত ভিত্তিতে ভিসা বাতিল করতে, ডিটেনশনে আটকে থাকা ব্যক্তিদের মুক্তির আদেশ দিতে, ভিসার চলমান প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে, যাদের ভিসার জন্য আবেদন করতে বাধা দেওয়া হয়েছে তাদের আবেদন করার অনুমতি দিতে এবং ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শরণার্থী ও অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ ড. ইভ লেস্টার বলেছেন, 'এগুলো মন্ত্রীদের "ঈশ্বর শক্তি"। কারণ তারা এই আইনের অধীনে অবাধ্য এবং অপর্যালোচনাযোগ্য ও অপ্রয়োগযোগ্য কাজ করে থাকেন।'

অ্যালেক্স হক জোকোভিচের ভিসা বাতিল করতে মাইগ্রেশন অ্যাক্টের ১৩৩ সি ধারার অধীনে তাকে দেওয়া ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'এটি করা হয়েছে জনস্বার্থে, কারণ সার্বিয়ান টেনিস তারকা ছিলেন টিকাবিরোধী মনোভাবের আইকন এবং অস্ট্রেলিয়ায় তার উপস্থিতি নাগরিক অস্থিরতা উস্কে দিতে পারে।'

১৩৩ সি ধারায় বলা হয়েছে, মন্ত্রীরা তাদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন, যদি তারা মনে করেন যে কোনো ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হতে পারে।

মোনাশ ইউনিভার্সিটির কাস্টান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ল-এর উপপরিচালক ডা. মারিয়া ও'সুলিভান বলেন, 'শুধু "হতে পারে" এই শব্দটির ওপর নির্ভর করে জোকোভিচের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এই আইনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ দেখাতে হবে না। "হতে পারে" এই সন্দেহ নিয়েই মন্ত্রী তার ব্যক্তিগত ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন।'

তিনি আরও বলেন, '১৩৩ সি ধারার অধীনে ব্যক্তিগত ক্ষমতার সমস্যা হচ্ছে, সিদ্ধান্তের যোগ্যতা পর্যালোচনা করা যায় না।'

নিউসাউথ ওয়েলসের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি ল-এর অস্ট্রেলিয়ান মাইগ্রেশন আইন একাডেমিক ড. সঙ্গীতা পিল্লাই বলেন, 'জোকোভিচের মামলাটি প্রমাণ করেছে যে, ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা কতটা কঠিন। এটা স্পষ্ট যে, মন্ত্রী এই ধরনের ক্ষমতা দিয়ে যুক্তিহীন কাজ করেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'এটা সবসময়ই পরিষ্কার ছিল যে, জোকোভিচের পক্ষে রায় আনা কঠিন হয়ে উঠবে, কারণ এখানে অভিবাসনমন্ত্রীকে দেওয়া ক্ষমতার পরিমাণ খুব বিস্তৃত।'

হিউম্যান রাইটস ল সেন্টারের সিনিয়র আইনজীবী স্কট কসগ্রিফ বলেন, 'মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ক্ষমতা বেশিরভাগ সময়ে "নিষ্ঠুর" উপায়ে ব্যবহার করা হয়।' 

১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়া যখন বব হকের লেবার সরকারের নেতৃত্বে ছিল, তখনকার অভিবাসনমন্ত্রী রবার্ট রে অভিবাসন আইনের অধীনে প্রদত্ত ব্যক্তিগত ক্ষমতা অপসারণের জন্য চাপ দেন।

২০০৮ সালে তৎকালীন অভিবাসনমন্ত্রী ক্রিস ইভান্স সিনেটের অনুমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, 'আমি অনুভব করছি যে, আমার অত্যধিক ক্ষমতা আছে। আমি এতে অস্বস্তি বোধ করছি, শুধু ঈশ্বরের মতো অবাধ শক্তির উদ্বেগের কারণে নয়, অস্বস্তি বোধ করছি এই জন্য যে, এই  সিদ্ধান্তগুলোতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব আছে।'

তখন বিলটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কারণ বিরোধীদল এবং অস্ট্রেলিয়ান ডেমোক্র্যাট ক্রসবেঞ্চাররা, যারা ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রেখেছিল, তারা বিশ্বাস করেছিল যে, এটি মন্ত্রিত্বের বিচক্ষণতা অপসারণ করতে অনেক বেশি সহায়তা করছে।

২০১৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন অভিবাসনমন্ত্রী স্কট মরিসনের দ্বারা উত্থাপিত মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ক্ষমতা বিষয়ক একটি বিল সংসদে নতুন করে পাস হয়েছিল।

লিবার্টি ভিক্টোরিয়া রাইটস অ্যাডভোকেসি প্রজেক্টের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মাইগ্রেশন অ্যাক্টের অধীনে মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা অপ্রতিরোধ্যভাবে ব্যবহার হয়েছে। এজন্য দায়ী মন্ত্রীদের জন্য ব্যবহার হয়েছে কমপক্ষে ২০ বার, যা ১৯৮৯ সালে ছিল মাত্র ৩ বার।

ভিসা ক্যান্সেলেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ, অ্যাসাইলাম সিকার রিসোর্স সেন্টার এবং রিফিউজি অ্যাডভাইস অ্যান্ড কেসওয়ার্ক সেন্টার মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ক্ষমতা নতুন করে পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাগুলো বলেছে, এই ধারা আশঙ্কাজনকভাবে ব্যবহার হতে পারে এবং অবিচারের প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি একটি জায়গা তৈরি করে যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকে।

অধিকাংশ আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই আইন সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তাহলে সরকার স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেবে না। এটি গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্যই করতে হবে।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

July proclamation: Govt calls all-party meeting Thursday

The announcement came as students, who led the uprising that ousted the Awami League-led government, are putting pressure on the government to announce the proclamation soon

24m ago