চাচা আসবেন, না ভাতিজির ধারাবাহিকতা?

সম্পর্কে তারা চাচা-ভাতিজি। তবে এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান ২ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তারাই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকার কাছের এই সিটি করপোরেশনে মেয়রের চেয়ারে কি 'ভাতিজি' সেলিনা হায়াৎ আইভীই থাকবেন; নাকি সেই ধারায় ছেদ টেনে নগর ভবনে যাবেন 'চাচা' তৈমূর আলম খন্দকার?

আজ রোববার ৫ লাখেরও বেশি ভোটার সেই রায় দেবেন।

পর পর ২ মেয়াদে নারায়ণগঞ্জের মেয়রের দায়িত্ব চালিয়ে আসা আইভী তার 'উন্নয়নের ধারাবাহিকতা' ধরে রাখতে ফের নৌকায় ভোট চাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীক নিয়ে এতদিনের পুরোনো মুখ বদলের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর ও বাণিজ্যিক মহানগর। ১৮৭৬ সালে নারায়ণগঞ্জে পৌরসভা শুরু হয়। ২০১১ সালে পুরোনো নারায়ণগঞ্জ ও কদমরসুল পৌরসভাকে এক করে সপ্তম সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরু হয় নারায়ণগঞ্জের।

প্রথম দফার ওই নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৬৫ শতাংশ পেয়ে আওয়ামী লীগের 'বিদ্রোহী' প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমান পান ২৮ শতাংশ ভোট।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করে আইভীকেই। সেবার তিনি ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হন। বিএনপির পক্ষ থেকে আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচনে অংশ নিয়ে পান ৯৬ হাজার ৭০০ ভোট।

গত ২ বারের মতো এবারও সারা দেশের আলোচনার কেন্দ্রে নারায়ণগঞ্জ সিটির এই নির্বাচন। জমজমাট প্রচার শেষে ভোটের অপেক্ষায় শীতলক্ষ্যা পাড়ের বাসিন্দারা।

২৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের শুরু থেকে আইভী ও তৈমূর পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। ছিল উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনাও। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে বড় কোনো গোলযোগ হয়নি।

নির্বাচনে মেয়র পদে আইভী ও তৈমূরসহ মোট ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাউন্সিলর পদে লড়ছেন আরও ১৪৮ জন। সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী ৩৪ জন।

নারায়ণগঞ্জ সিটির মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের সবকটিতে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।

জয়ের প্রত্যাশা ২ পক্ষেরই

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আইভীর প্রত্যাশা, এবারের নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে পাস করবেন তিনি। একই প্রত্যাশার কথা জানান তৈমূর আলম খন্দকারও। তবে রায় নিজেদের পক্ষে নিতে উভয়েরই দাবি, ভোটের আয়োজন যেন সুষ্ঠু হয়।

শুক্রবার জমজমাট প্রচারের শেষ দিনের সংবাদ সম্মেলনে আইভী বলেন, 'এটা আমার চাচা (তৈমূর আলম খন্দকার) নিজেও জানেন যে, আমার এখানে কী অবস্থান। আমি লক্ষাধিক ভোটেই পাস করব।'

এদিকে, প্রচারের শুরু থেকেই তৈমূর অভিযোগ করে আসছেন, পুলিশ তার দলের নেতা-কর্মীদের ধর-পাকড় করছে। প্রশাসনও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।

পৃথক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'প্রশাসনকে বলব জনগণের সেবা করা আপনাদের দায়িত্ব। বহুবার রিকোয়েস্ট করেছি। এখন বিবেকের কাছে ছেড়ে দিলাম। আগামীকালের (রোববার) ভোট যেমনই হোক আমরা মাঠে থাকব। গ্রেপ্তার হলে হব। কিন্তু নির্বাচন চালিয়ে যাব।'

এ ছাড়া শেষ সময়ে এসে ভোটের দিন যেন বহিরাগতরা নারায়ণগঞ্জে থাকতে না পারে, সে পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

অন্য মেয়র প্রার্থীরা

আইভী ও তৈমূরের পাশাপাশি এবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও ৫ প্রার্থী।

এদের মধ্যে গত সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস। তিনি এবার হাতঘড়ি প্রতীকে লড়ছেন।

প্রথমবারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসীম উদ্দীন। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন।

আরেকটি ইসলামী দল খেলাফত মজলিসও মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে। দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে দলের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ বি এম সিরাজুল মামুন।

এ ছাড়া অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলামের প্রতীক হলো ঘোড়া।

আইভী ও তৈমূরের বাইরে এবারের ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী মো. মাছুম বিল্লাহকে। ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি ১৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। তার প্রচারে নারায়ণগঞ্জে এসে সভা করেছেন দলটির আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের প্রত্যাশা

শনিবার দুপুরে নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

নগরীর মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ভোটাররা তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে তারা ভোট দিতে আসবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট দেবেন। উৎসবমুখর পরিবেশে স্বচ্ছন্দে ফিরে যাবেন।'

ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি 'ভালো' ও পরিবেশও 'সন্তোষজনক' আছে বলে জানান মাহফুজা আক্তার।

ইভিএমে কোনো গোলযোগ দেখা দিলে বিকল্প পরিকল্পনা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা ৩ ভাগে ভাগ করে ৪৮ জনের টেকনিক্যাল মোবাইল টিম ঘুরবে। ইভিএমে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে যখন যেখানে প্রয়োজন হবে তারা সেখানে যাবেন এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতিবিষয়ক তথ্য জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, 'আমরা চাচ্ছি এই নির্বাচন যেন সারা দেশে একটি মডেল নির্বাচন হিসেবে রূপ লাভ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিরাপত্তা বলয় গঠন করেছি।'

তিনি বলেন, 'শুরু থেকেই আমরা ৩ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে ছিলাম। নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যরা আজ (শনিবার) প্রত্যেকটি কেন্দ্রে চলে যাবেন। তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যরা কাজ করবেন। এর বাইরেও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কাজ করবে।'
 

Comments

The Daily Star  | English

Lower revenue collection narrows fiscal space

Revenue collection in the first four months of the current fiscal year declined by 1 percent year-on-year

10h ago